Thursday, July 12, 2018

বাংলাদেশের আইন বিভাগে এখনও ব্রিটিশ কালচার চলছে!


গত ৯ই জুলাই আইনমন্ত্রী বলেছে, বিচারাধীন মামলার সংখ্যা নাকি ৩৪ লক্ষ । মামলা মোকাদ্দমায় চলছে বড় জট। এর মধ্যে একটা বড় অংশ আছে সুপ্রীম কোর্ট ও হাইকোর্টে।
(https://bit.ly/2ueMkHB)

সুপ্রীম কোর্টে মামলার জটের প্রধান কারণ সুপ্রীম কোর্টে অতিরিক্ত ছুটি। আপনারা শুনলে অবাক হবেন, বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিচারবিভাগ সুপ্রিম কোর্ট বছরে ৬ মাস খোলা থাকে, আর ৬ মাস বন্ধ থাকে। সুপ্রীম কোর্টের বিচারকরা শুক্র-শনিবারের ছুটি এবং সরকার নির্ধারিত ছুটি ছাড়াও অতিরিক্ত ছুটি পায় ৫১ দিন, যা অন্য কোন চাকুরীজীবি পায় না। (https://bit.ly/2N30ylx/)

এই অতিরিক্ত ছুটি পাওয়ার পেছনে অবশ্য একটা কারণ আছে। বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্ট চলে পুরোপুরি ব্রিটিশ আমলের সিস্টেমে। ব্রিটিশ আমলে সুপ্রীমকোর্টের বিচারপতিরা আসতো সুদূর ব্রিটেন থেকে। তাই বাংলাদেশে (তৎকালীল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া) এক নাগারে থাকা তাদের পক্ষে সম্ভব হতো না। ফলে ব্রিটেনে পরিবারপরিজনের থাকে থাকার জন্য তাদের লম্বা ছুটির প্রয়োজন হতো। বলাবাহুল্য, ব্রিটিশ আমলের পর পাকিস্তান আমল শেষ হয়ে গেছে, বাংলাদেশের বয়সও ৪৭ বছর চলছে। কিন্তু ব্রিটিশ আমলের সেই ছুটির দিনগুলো শেষ হয়নি, যার খেসরত দিতে হচ্ছে সাধারণ জনগণকে মামলার জটে পড়ে।

ব্রিটিশ আমল শেষ হয়েছে ৭১ বছর হয়ে গেলো, বাংলাদেশের প্রধান বিচারবিভাগের ভাষা এখনও ইংরেজী রয়ে গেছে !!! এখনও আইনজীবি আর বিচারপতি যখন কথা বলে তখন বিচারপ্রার্থী তা বুঝতে সক্ষম হয় না, সক্ষম হয় না মামলার নথিতে কি লেখা হয়েছে। ভাষা হচ্ছে মানুষের ভাব-আবেগ প্রকাশের মাধ্যম। একজন মানুষ যদি তার ভাব-আবেগই প্রকাশ করতে না পারে, তবে সে বিচার চাইবে কিভাবে ? আর সঠিক বিচার প্রত্যাশাই বা করবে কিভাবে?
সরকার বাংলাভাষাকে জাতিসংঘের দাফতরিকভাষা হিসেবে স্বীকৃতি দিতে দাবি তুলেছে (https://bit.ly/2NDZJ3K)। কিন্তু তারা কি নিজের দেশের বিচার দফতরের ভাষাকে বাংলা করতে পেরেছে ?

এখনও দেখবেন, বাংলাদেশের সুপ্রীম কোর্টের প্রধানবিচারপতি মাথার মধ্যে ‘ভেড়ার উলের টুপি’ পড়ে থাকে। ব্রিটিশ ধারণা হলো, মা ভেড়ার কাছে সব বাচ্চা যেমন সমান, তেমনি প্রধান বিচারপতির কাছে সবাই সমান। সেই ধারণা থেকে প্রধান বিচারপতিকে ভেড়া সেজে থাকতে হয়। বাংলাদেশে এখনও সেই ব্রিটিশ কালচার চলছে।

উকিল-আইনীজীবীরা ব্রিটিশ সিস্টেমে পড়ে থাকে কোর্ট-গাউন। ব্রিটেন শীতের দেশ, তাই সেটা তারা পড়তে পারে, কিন্তু বাংলাদেশ তো শীতের দেশ না, এখানে কেন উকিল আইনজীবীকে শীতের দেশের পোষাক পড়তে হবে ? এ জন্য কোর্ট এলাকায় একটা কথা প্রচলিত আছে, “গরমের দিনে কোর্ট পড়ে দুই প্রকার লোক, উকিল আর পাগল”।

সুপ্রীম কোর্টের মধ্যে এখনও উকিল ও বিচারপ্রার্থীরা বিচারপতিদের ‘মাই লর্ড’ শব্দ দ্বারা সম্বোধন করে। মাই লর্ড শব্দের অর্থ ‘আমার প্রভু’। বিচারপতির আসনে ব্রিটিশরা বসতো, তারা দাবি করতো তারা হলো ‘মালিক’। আর এদেশীয়রা হচ্ছে ‘দাস’। এই ধারণা থেকেই মাই লর্ড শব্দের উৎপত্তি। কিন্তু স্বাধীনতার ৭১ বছর পরও কি আমরা সেই দাসত্বের শিকল থেকে বের হতে পারবো না ?

উল্লেখ্য পার্শ্ববর্তী ভারতে আজ থেকে ১৩ বছর আগে উকিলদের প্রতিবাদের মুখে ‘মাইলর্ড’ প্রথা উঠে গেছে (https://bit.ly/2L2YFoi)। বাংলাদেশের উকিলরা নিজেদের অনেক পণ্ডিত বলে জাহির করে, কিন্তু এখন পর্যন্ত কেউ মাইলর্ড প্রথা নিয়ে প্রশ্ন তুলেনি।

শুধু তাই না, এখনও কোর্টে শুরু ও শেষে সম্বোধনস্বরূপ বিচারপতিদের সামনে উকিলদের মাথা নত করতে হয়। আমার জানা মতে ইসলামধর্মে এভাবে মাথা নত করা নিষিদ্ধ, কিন্তু সংখ্যাগরিষ্ট মুসলমানের দেশে এই ব্রিটিশ কুপ্রথা অব্যাহত রয়েছে। মাউন্ট ব্যাটেন বলেছিলো, ব্রিটিশরা চলে যাচ্ছে, কিন্তু এমন এক জাতি রেখে যাচ্ছে, তারা দেহতে এদেশী হলেও মনেপ্রাণে হবে ব্রিটিশ। কোর্টের দিকে তাকালে যেন যার সত্যতা ১০০% দেখা যায়।

বাংলাদেশ ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হয়েছে ৭১ বছর। এরমধ্যে বাংলাদেশের যে একটি স্বতন্ত্র সিস্টেম দাড় করানোর যোগ্যতা হয়নি বিষয়টি সেরকম নয়।কিন্তু তারপরও মান্ধাতার সিস্টেম কপি করে চলেছে সবাই। আমরা যারা বাংলাদেশ নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখি, বিচারবিভাগে এহেন ‘মাছি মারা কেরানী’ সিস্টেম আমাদের সত্যিই কষ্টে ফেলে দেয়।


===============================
আমার মূল পেইজ- Noyon chatterjee 5
(https://www.facebook.com/noyonchatterjee5)
পেইজ কোড- 249163178818686
------------------------------------------------------------------
আমার ব্যাকআপ পেইজ- Noyon Chatterjee 6
(https://www.facebook.com/Noyon-Chatterjee-6-202647270140320/)
------------------------------------------------------------------------------------------------

1 comment: