Monday, April 2, 2018

ধর্ষণ বৃদ্ধির জন্য সিনেমায় ধর্ষণ দৃশ্য দায়ী- এ কথাটা মুছতেই কি এমন টকশো ?

“ধর্ষণ জিনিসটা কি ?” এটা সম্ভবত ৯৯% বাংলাদেশী শিখে বাংলা সিনেমা থেকে। ছোট বেলায় ছুটি দিনে বাবা-মায়ের সাথে বসে টিভিতে বাংলা সিনেমা দেখছে, সিনেমার এক দৃশ্যে ভিলেন দৌড়ে আসলো সহকারী নায়িকার দিকে। দাত-মুখ খিচিয়ে নানান ভঙ্গীমা করলো। পুরো-আধো দৃশ্য দেখিয়ে লাস্ট সিনে দেখানো হলো ঘটনা ঘটিয়ে ভিলেন খুবই পরিতৃপ্ত হয়েছে। যৌনতা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি, কিন্তু ৯০ এর দশক থেকে বাংলা মুভি দেখে আসা প্রজন্ম সম্ভবত মনে করে, যৌনতা মানেই ধর্ষণ।
শুধু ধর্ষণ নয়, ‘নারী উত্যক্ত করা’ যেটাকে বলা হয় যৌনহয়নারী তার শিক্ষাও মুভিতে দেয়া হয়। শুধু তাই নয়, মুভিতে এটাও দেখানো হয়, নায়ক মাত্রই ইভটিজিং করে এবং যে মেয়েকে ইভটিজিং করা হয়, সে এক সময় ঐ নায়কের নায়িকা হতে বাধ্য। অর্থাৎ প্রায় সকল মুভির নায়ক হচ্ছে একজন যৌন নিপীড়ক।
প্রসঙ্গটা আসলো গত কয়েকদিন আগে আর-টিভিতে একটি অনুষ্ঠান নিয়ে। যেখানে নায়িকা পূর্ণিমা ও ভিলেন মিশা সওদাগর দুইজন ‘ধর্ষণ’ দিয়ে বেশ মজার আলাপ করছে। অনুষ্ঠানের এক পর্যায়ে পূর্ণিমা হাসতে হাসতে সহ অভিনেতা মিশাকে প্রশ্ন করেন, মিশা চলচ্চিত্রে কতবার ধর্ষণ করেছেন? কোন নায়িকার সঙ্গে ধর্ষণের দৃশ্যে অভিনয় করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন? উত্তরে মিশা সওদাগর জানায়, 'মৌসুমী ও পূর্ণিমার সাথে' উপস্থাপিকা পূর্ণিমা হা হা হা করে হেসে ওঠে।
বক্তব্য যদি এতটুকু থাকতো তবে সমস্যা ছিলো না। সমস্যা হলো, এই টকশোর পর বাংলাট্রিবিউনে একটি সাক্ষাৎকারে নায়িকা পূর্ণিমা দাবি করেছে, “মুভিতে ধর্ষণের দৃশ্য সমাজে ধর্ষণ বৃদ্ধি করে না, বরং সচেতন করে”
সাক্ষাৎকারে পূর্ণিমা বলে, “আমরা ফিল্মে এসব সিন করি বলেই কি বাংলাদেশে ধর্ষণের ঘটনা ঘটছে? তা তো নয়। সিনেমায় তো রেপ সিন করার পর সেটার বিচার হয়, ভিলেন মার খায়, শাস্তি হয়। সিনেমার রেপ সিন তো মানুষকে কখনও প্রভাবিত করেনি। আরও সচেতন করে। আর সেটা নিয়ে একটি ফিল্মের টকশোতে কথা বলতে গেলে অপরাধ!’
(https://bit.ly/2GNlNZi)
কি বুঝলেন ? এতদিন দাবী হচ্ছিলো- নারী ধর্ষণের জন্য পোষাক দায়ী না, নতুন করে যোগ হলো- নারী ধর্ষণের জন্য মুভির ধর্ষণের দৃশ্যও দায়ী না।
এ সম্পর্কে আমেরিকার প্যারেন্টস টেলিভিশন কাউন্সিল এক গবেষণায় বলেছে, মুভিতে দর্শন দৃশ্য মানুষের কাছে ধর্ষণকে এন্টারটেইনমেন্ট হিসেবে প্রকাশ করেছে। আর সমস্যাটা সেখানেই। এন্টারটেইনমেন্ট মানেই স্বাভাবিক। একজন মানুষ নানাভাব এন্টারটেইনমেন্ট করতে পারে। ধর্ষণ দৃশ্যকে যখন এন্টারটেইনমেন্ট হিসেবে উপস্থাপন করা হলো, তখন সব মানুষের কাছে ধর্ষণ বিষয়টা খুব স্বাভাবিক হয়ে গেলো। আর যে অপরাধ স্বাভাবিক হয়ে গেছে, তার বিরুদ্ধে জনপ্রতিরোধ গড়বেন কিভাবে ? (https://bit.ly/2H2AHbQ)
আমার মতে, পূর্নিমা-মিশা ধর্ষণ দৃশ্য নিয়ে হাস্যরস করে যতটুকু অপরাধ করেছে, তার ঢের বেশি অপরাধ হয়েছে, “মুভির ধর্ষণ দৃশ্যের কারণে সমাজে ধর্ষণ বৃদ্ধি পায় না”- এমন অপব্যাখা দিয়ে। মোশারফ করিমের পর মিশা-পূর্ণিমার এ ধরনের বক্তব্য দেখে অনুমান করা যাচ্ছে, উপর থেকে একটি বিশেষ শ্রেণী বাংলাদেশের মানুষের মনে কিছু ‘ফলস বিলিভ’ বা ‘ভ্রান্ত বিশ্বাস’ প্রবেশ করাতে চাইছে এবং এরজন্য তারা সাহায্য নিচ্ছে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের। মানুষের মনে ‘নারীর পোষাক’, ‘ধর্ষণ’ নিয়ে এসব ভ্রান্ত বিশ্বাস ঢুকানোর পেছনে ঐ বিশেষ শ্রেণীর কি উদ্দেশ্য সেটাও চিন্তার বিষয়।

===============================
আমার মূল পেইজ- Noyon chatterjee 5
(https://www.facebook.com/noyonchatterjee5)
পেইজ কোড- 249163178818686
------------------------------------------------------------------
আমার ব্যাকআপ পেইজ- Noyon Chatterjee 6
(https://www.facebook.com/Noyon-Chatterjee-6-202647270140320/)
------------------------------------------------------------------------------------------------

0 comments:

Post a Comment