গতকালকে ভিকারুননিসা স্কুলের এক ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে।
এ আত্মহত্যার কারণ সম্পর্কে একেক মিডিয়ায় একেক ধরনের বক্তব্য এসেছে,
তবে আমার কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য মনে হয়েছে-
“টিসির হুমকি, ভিকারুন্নেসার ছাত্রীর আত্মহত্যা” এই শিরোনামটি। (https://bit.ly/2AU0YpU)
এ ঘটনার পর অনেকেই অনেকের শাস্তি, বিচার দাবি করছে। সেটা হতে পারে, তবে সেটা ক্ষুদ্র অংশের সমাধান। তবে আমার কাছে মনে হয়েছে, সমস্যার কারণ আরো গভীরে।
আপনি যদি মিডিয়ার দিকে তাকান, তবে দেখবেন, গতকাল (সোমবার) বাংলাদেশে আরো কয়েকটি আত্মহত্যার খবর মিডিয়ায় এসেছে-
১) উত্তরায় স্বামীর সাথে ঝগড়া বেধে স্ত্রীর আত্মহত্যা (https://bit.ly/2EdRbz0)
২) বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে না পেরে ঝালকাঠিতে ছাত্রীর আত্মহত্যা (https://bit.ly/2QBZs5C)
৩) নওগায় ট্রেনের নিচে ঝাপ দিয়ে যুবতির আত্মহত্যা (https://bit.ly/2rjQk7F)
গতকয়েকদিন যাবত মিডিয়ায় আসা আরো কিছু খবর -
-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১১ মাসে ৯ শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা (https://bit.ly/2BQzYth)
-ঢাবিতে ‘আত্মহত্যা ঠেকাতে’গ্রুপ ট্যুরের ওপর বিধিনিষেধ (https://bit.ly/2AneZwh)
মিডিয়া এনলাইসিস করতে গিয়ে আমি দেখেছি, প্রতিদিন বাংলাদেশের অনেক মানুষ আত্মহত্যা করে, এবং বিষয়টি সত্যিই উদ্বেগজন। তবে তরুণ প্রজন্ম মানে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে আত্মহননের ঘটনা ব্যাপকহারে বেড়ে যাওয়া এখন বেশি দৃশ্যমান হচ্ছে। হঠাৎ করে এই আত্মহত্যা প্রবণতা বৃদ্ধিতে কারো এককদোষ না দিয়ে, আমার কাছে পুরো সিস্টেমটাকেই সমস্যা মনে হয়। এবং সেই সিস্টেমে যদি আমুল পরিবর্তন না আনা হয়, তবে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে আত্মহত্যার মহামারি দেখতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
বাংলাদেশে যে আত্মহত্যার মহামারি আসন্ন, এটা আমি এমনি এমনি বলি নাই। বাংলাদেশের মানুষ ও সরকার সংষ্কৃতিসহ বিভিন্ন পলিসিতে যে সব দেশকে ফলো করে, তাদের আত্মহত্যার খবরগুলো দেখুন, তখন বুঝবেন, আত্মহত্যার সংখ্যাবৃদ্ধি বাংলাদেশে এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।
ক) ভারতে প্রতি ঘণ্টায় একজন স্কুল শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করে (https://bit.ly/2Rwit6P)
খ) ব্রিটেনে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বাড়ছে আত্মহত্যার প্রবণতা (https://bbc.in/2zCMefm)
গ) ব্রিটেনে আত্মহত্যা প্রতিরোধ বিষয়ক মন্ত্রী নিয়োগ (https://bit.ly/2KVluLm)
ঘ) যুক্তরাষ্ট্রে আত্মহত্যার হার ১৭ বছরে ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি (https://bbc.in/2RDQTow)
আত্মহত্যার কেন হয় ? এই কথা যদি কোন চিকিৎসককে করেন, তবে সে বলবে, এটা একটা মানসিক সমস্যা বা রোগ। অর্থাৎ কোন এলাকায় যখন বিশেষ কিছু মানসিক রোগ বৃদ্ধি পায়, তখন সেখানে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়াও স্বাভাবিক। যেহেতু বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যা বাড়ছে, তাহলে কি বলা যায় না, বাংলাদেশে ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে মানসিক সমস্যা বাড়ছে ? অথবা বাংলাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাতেও কি এমন কিছুর গ্যাপ হয়েছে, যাতে ছাত্র-ছাত্রীরা মানসিকভাবে দুর্বল হয়ে যাচ্ছে ? যার প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি হচ্ছে আত্মহত্যার প্রবণতা ??
পৃথিবীতে আধুনিক পড়ালেখার সিস্টেমগত দিক থেকে এগিয়ে থাকা দেশ ধরা হয় ব্রিটেনকে। সেই ব্রিটেনে ২৫% তরুণী মানসিকভাবে অসুস্থ বলে সম্প্রতি খবর বেড়িয়েছে (https://bit.ly/2Stld4W)। এ থেকেও একটি বিষয় পরিষ্কার তথাকথিত আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থা বলে আমরা যাকে সর্বোচ্চ স্বীকৃতি দিচ্ছি, সেটাও কিন্তু আত্মহত্যা প্রবণতা হ্রাস করতে পারে না।
আত্মহত্যার পেছনে মূল মানসিক সমস্যা হিসেবে ধরা হয় ‘হতাশা’, বিষন্নতা, অবসাদ বা ডিপ্রেশনকে। এক সমীক্ষার রিপোর্ট, বিশ্বের ১৫ থেকে ২৪ বছর বয়সী তরুণ-তরুণীদের আত্মহত্যার প্রধান কারণ এই হতাশা। (https://bit.ly/2EbCZ9X)
কথা হলো, মানুষ তার প্রার্থিত বিষয় না পেলেই হতাশ হয়, কিন্তু সেটা আত্মহত্যা পর্যন্ত গড়ায় কখন ?
তখন গড়ায়, যখন ঐ মানুষটি ‘ঐ বিষয়টি’কেই জীবনের মূল ভেবে বসে। যখন সে বিষয়টি পায় না, তখন সে ভাবে, এ জীবন রেখে লাভ কি ?
একটা উদহারণ দিলে বোঝা সহজ হবে,
ভালো একটা স্কুলে চান্স পাওয়া, কারো কাছে জীবনের মূল।
স্কুলে চান্স পাওয়ার পর জেএসসি-পিএসসিতে ভালো রেজাল্ট করতে হবে, এটাই জীবনের মূল।
এসএসসিতে ভালো জিপিএ পেতে হবে, এটাই জীবনের মূল।
ভালো একটা কলেজে চান্স পেতে হবে, এটাই জীবনের মূল।
এইচএসসিতে ভালো জিপিএ পেতে হবে, এটাই জীবনের মূল।
ভালো ভার্সিটিতে চান্স পেতে হবে, এটাই জীবনের মূল।
ভার্সিটিতে ভালো রেজাল্ট করতে হবে, এটাই জীবনের মূল।
বিসিএস’এ টিকতে হবে, এটাই জীবনের মূল।
ভালো একটা চাকরী পেতে হবে, এটাই জীবনের মূল।
আমি আগেই বলেছি, কেউ যখন কোন বিষয়কে জীবনের মূল বিষয় বলে মনে করে, এবং কোন কারণে যদি সেটা হারিয়ে ফেলে, তবে তার কাছে বেচে থাকা মূল্যহীন মনে হয়ে পড়ে। আর তখনই ঘটে আত্মহত্যা। বর্তমানে ভোগবাদী জীবন ব্যবস্থায়, প্রতিযোগীতায় টিকতে জীবনে ঘটে যাওয়া ছোট ছোট বিষয়গুলোকে জীবনের মূল হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সমাজ। কিন্তু যারা সেটা না পায়, তাদের জীবনে ঘটে যায় বিপর্যয়।
আজ থেকে ১৫-২০ বছর আগে আমি যখন ছাত্র ছিলাম, তখন এসএসসিতে ভালো লেখাপড়া করার পরও জিপিএ কম আসলো, মন খারাপ করে বাসায় শুয়ে রইলাম। তখন আমার মা আমাকে সান্ত্বনা দিয়ে বলবো, “বাবা এটাই জীবনের শেষ নয়, শুরু। তাই এই রেজাল্টে হতাশ হইয়ো না। সামনে ভালো করার চেষ্টা করো।” মায়ের এই সান্ত্বনা শুনে আমার বুকে বল আসলো। আমি নতুন করে শুরু করলাম। ভালো কলেজে চান্স পেলাম না, আবারও মন খারাপ। মা যথারীতি বলবো- বাবা এটাই শেষ নয়, শুরু। তাই সামনে ভালো করার চেষ্টা করো। ”
ভার্সিটিতে ভালো রেজাল্ট হলো না, মা তখনও সান্ত্বনা দিয়ে বললো, “বাবা, এটাই শেষ নয়। এখন অনেক পথ বাকি আছে। তাই নতুন করে ভালো করার চেষ্টা করে।” এখন মায়ের সেই কথাগুলো মনে আসলে ভাবি, কথাগুলো কতটা সত্য। আসলে ঐ বিষয়গুলো জীবনের কিছুই নয়। আরো বহুপথ, বহুকিছু পাড়ি দিতে হবে। জীবনে জয়লাভ করতে হলে এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশের বাস্তবে কোন দাম-ই নেই। জীবনটা আরো অনেক বড়, আরো অনেক গুরুত্বপূর্ণ। সমস্যা হলো আমাদের বাবা-মায়ের প্রজন্ম শেষ হয়েছে, এখন আমাদের প্রজন্ম বাবা-মা হচ্ছে। তারা কিন্তু তাদের সন্তানদের আমার মায়ের মত সান্ত্বনা দিতে পারছে না। কয়েকদিন আগে শুনলাম আমাদের পাশের বাসার এক ছাত্রী এসএসসি পরীক্ষার পর আত্মহত্যা করেছে। কারণ শুনলাম, রেজাল্ট খারাপ করার কারণে বাবা-মায়ের বকুনি খেয়ে মেয়ের আত্মহত্যা ।
আমাদের প্রজন্মের বাবা-মার’ও দোষ দেয়া যায় না, কারণ ছেলে-মেয়ের ভালো রেজাল্ট তার যতটা না দরকার, তার থেকে বেশি দরকার লোক দেখানোর জন্য, মানে ছেলে ভালো স্কুলে চান্স না পেলে প্রতিবেশীর সামনে মুখ দেখাবে কিভাবে ? ভালো রেজাল্ট না করলে আত্মীয় স্বজনকে কি বলবে ? বিসিএস’সে চান্স না পেলে কলিক-বন্ধুমহলে সামনে মুখ থাকবে না। এভাবে ভোগবাদী সমাজের চাপ এসে পড়ে বাবা-মা’ উপর, যা সে চাপিয়ে দেয় সন্তানের উপর, আর সন্তানও চাহিদা মাফিক সেই সাময়িক বিষয়টিকে জীবনের মূল বানিয়ে নেয় (ঢাবিসহ বিভিন্ন ভার্সিটিতে পড়া ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে কথিত ক্যারিয়ার জীবনের মূল পূজনীয়)। আর মূলটা হারালেই জীবনের মূল্য শেষ।
এখানে আমাদের পাঠ্যবই ও সিলেবাস, মিডিয়া ও সমাজের প্রভাব শতভাগ দেয়া যায়। ‘ধর্ম যার যার রাষ্ট্র সবার’, একথা বলে আমরা সমাজ থেকে ধর্ম তুলে দিয়েছি। ধর্মহীন সমাজ ব্যবস্থা, শিক্ষা ব্যবস্থা, আইন ব্যবস্থা, মিডিয়া প্রণয়ন করেছি। আর ধর্মহীন মানেই কিন্তু বস্তুবাদ বা বস্তুপূজা। যে সমাজে মানুষ সৃষ্টিকর্তা বাদ দিয়ে সৃষ্টি বা বস্তুপূজার শুরু করে, বস্তুকে জীবনের মূল করে নেয়, সেই সমাজে হতাশা বেড়ে যায়। কারণ বস্তু ক্ষণস্থায়ী, তার ক্ষয় আছে। বস্তুর উপর ভরসা রাখা যায় না। বস্তুকে জীবনের মূল করা হলে, তার পতনের মাধ্যম দিয়ে জীবনেরও পতন হতে পারে। আমার জীবনে যখন কোন আশার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটতো, তখন আমার মা আমাকে বলতো, “সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা রাখো, সৃষ্টিকর্তা যা করেন ভালোর জন্য করেন। এমনও তো হতে পারে, এর মাধ্যমে তোমার ভালো কিছু হবে, যা তুমি জানে না।”
আমি আমার মায়ের কথাগুলো তখন বুঝতাম না। এখন বুঝি, আমি যখন জীবনের দৃশ্যত খারাপ জিনিসগুলোকেও নিয়তি মনে করে ভালো হিসেবে ধরে নিলাম , তখন আমি মানসিকভাবে অনেক শক্তিশালী হয়ে গেলাম এবং সেই শক্তিটাই আমাকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে গেলো। এমনকি আমার বন্ধুবান্ধব (যারা আমার থেকে পড়ালেখায় অনেক ভালো ছিলো) তাদের থেকে বাস্তবে জীবনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমি অনেক এগিয়ে, যার সাথে তারা তুলনা করতে পারবে না।
তাই আমার মনে হয়, আত্মহত্যা মহামারি তৈরীর আগেই সামাজিক পরিবর্তন হওয়া জরুরী । ডালপালায় নয়, আঘাত হানতে হবে গোড়ায়। বস্তুবাদ পরিহার করে শিক্ষাসহ সমাজের সর্বত্র ধর্মীয় ব্যবস্থা প্রণয়ন করতে হবে, তবেই সমাধান।
===============================
আমার মূল পেইজ- Noyon chatterjee 5
(https://www.facebook.com/ noyonchatterjee5)
পেইজ কোড- 249163178818686
(https://www.facebook.com/
পেইজ কোড- 249163178818686
------------------------------------------------------------------
আমার ব্যাকআপ পেইজ- Noyon Chatterjee 6
(https://www.facebook.com/ Noyon-Chatterjee-6-20264727 0140320/)
-------------------------- -------------------------- --------------------------------------------
(https://www.facebook.com/
--------------------------
0 comments:
Post a Comment