-কখনই না। পাশের ভারতে যেহেতু হিন্দুরা মুসলমানদের গরু কোরবানীর অধিকার দেয় না, সেহেতু বাংলাদেশেও তারা পূজা করার অধিকার রাখে না।
-কিন্তু ভারত খারাপ বলেই কি আমরা খারাপ হবো ?
-‘ভারত যে খারাপ’ এ কথাটা বাংলাদেশের হিন্দুদেরকে বলতে হবে । তারা যে গরুর মাংশের জন্য মুসলমানদের হত্যা করতেছে প্রতিবাদে বাংলাদেশের হিন্দুদের মাঠে নামতে হবে। ভারতীয় হিন্দুদের ছিঃ ছিঃ বলতে হবে। তাদের ধিক্কার জানাত হবে। গরুর মাংশের জন্য মানুষ হত্যা করা যে তারা সমর্থন করে না, এটা কথাটা জোর গলায় বলতে হবে। যদি না বলে, তবে তারাও ভারতীয়দের অপকর্মের দোষে দুষ্ট হবে। আপনারা লক্ষ্য করবেন, বিভিন্ন দেশে যখন কথিত জঙ্গীবাদীরা বিভিন্ন হামলা চালায়, তখন বিভিন্ন দেশের মুসলিমরা কিন্তু আন্দোলন প্রতিবাদ করে বলে- আমরা জঙ্গী নই, ইসলাম জঙ্গীবাদ সমর্থন করে না। আমরা জঙ্গীবাদকে কখন সমর্থন করি না, ইত্যাদি ইত্যাদি।
বিভিন্ন দেশের মুসলিম নামধারী জঙ্গীরা হামলা করলে যদি অন্যান্য দেশের মুসলিমদের বলতে হয়- তারা জঙ্গী নয় বা তারা সেটা সমর্থন করে না, নিজেদেরকে নিরাপরাধ প্রমাণের জন্য যদি প্রকাশ্য বক্তব্য দিতে হয়, তবে বাংলাদেশের হিন্দুদেরকে সেটা কেন করতে হবে না ?
আরো উল্লেখ্য- সারা বিশ্বে যে জঙ্গীবাদের ধুয়া তোলা হয়, সেটা কিন্তু বিচ্ছিন্ন জিনিস, কোন রাষ্ট্রীয় সিস্টেমের অন্তর্ভূক্ত নয়। কিন্তু তারপরও মুসলিমরা তার দায় এড়াতে বিবৃতি দিয়েছে।
কিন্তু ভারতের ঘটনা তো রাষ্ট্র সমর্থিত। রাষ্ট্রীয় বৈধ সিস্টেমের অংশ হিসেবে তারা মুসলিম মারতেছে।
-বাংলাদেশের হিন্দুদের পূজা বন্ধ করে, লাভ কি ?
অবশ্যই লাভ আছে। যদি বাংলাদেশ ভারতের হিন্দুদের পূজা বন্ধ করা যায়,
তখন বাংলাদেশের হিন্দুদের দিয়ে ভারতীয় হিন্দুদের উপর প্রেসার তৈরী করা যাবে, ভারতীয় মুসলমানদের উপর নিপীড়ন রুখতে। স্ব-জাতির চাপ অবশ্যই ভারতীয় হিন্দুদের জন্য অনেক বেশি কার্যকর হবে।
-কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর কিছু হলে বাংলাদেশের হিন্দুদেরকে হয়ত ভারত নিজ দেশে নিয়ে গেলো, কিন্তু তাদের দেশের বিরাট মুসলিম জনগোষ্ঠীকে যদি বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।
আসলে এ ধরনের চিন্তা করা অমূলক। তারপরও যদি বলি- ’৪৭ এ দেশভাগের সময় শুধু মুসলমানদের জন্য হয়েছিলো পাকিস্তান, তাই সেই পাকিস্তানের অংশের মধ্যে হিন্দুরা না থাকলেও চলবে। কিন্তু ভারত বিশাল ভূমি নিয়েছিলো তারা হিন্দু-মুসলিম সব জনগোষ্ঠীকে একত্রে ধারণ করবে সে শর্তে। সেই শর্ত অনুসারে ভারতে মুসলিমদের রাখতেই হবে, কিন্তু বাংলাদেশে হিন্দু না রাখলেও চলবে।
-দেখুন, আপনি যেভাবে ঢালাওভাবে বাংলাদেশের সব হিন্দুদের দোষারোপ করেন, এটা ঠিক না। বাংলাদেশে অনেক ভালো হিন্দুও আছে।
দেখুন- হিন্দু মানেই তো যে হিন্দু ধর্মের অনুসারী। এখন কথা হলো- ‘অখণ্ড ভারত’ বলে যে তত্ত্ব প্রচার করা হয়, সেটা কিন্তু হিন্দু ধর্মের অংশ। এখন একজন হিন্দু বাংলাদেশের হোক, আর ভারতীয় হোক বা পাকিস্তানী হোক, সে তার ধর্মের অংশ হিসেবেই অখন্ড ভারত প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করবে সমর্থন করবে, যা বাংলাদেশী হিসেবে হবে দেশদ্রোহীতা। তাই হিন্দু ধর্মের অনুসারী হলেই সে অখণ্ড ভারতের লোক, রাষ্ট্রদ্রোহী। সেখানে ভালো হিন্দু আর খারাপ হিন্দু বাছাইয়ের কোন সুযোগ নেই।
-দেখুন, বাংলাদেশের হিন্দুদের পূজা বন্ধ করে ভারতীয় মুসলমানদের জন্য কিছু করা, এটা কখনই সম্ভব হবে না।
সম্ভব হবে না। কারণ আপনি নিজের মনকে প্রশ্ন করুন, আপনি কি ভারতের মুসলমানকে বেশি ভালোবাসেন, নাকি বাংলাদেশের হিন্দুদেরকে। আপনার মন উত্তর দেবে- বাংলাদেশের হিন্দুকে।
মানে এখানে জাতীয়তাবাদের মধ্যে মুসলমানদের ভাতৃত্ববোধ আটকে পড়েছে, যদিও হিন্দুদেরটা আটকা পড়েনি। এ কারণে বাংলাদেশের হিন্দুদের তুলনায় ভারতীয় মুসলমানদেরকে বাংলাদেশের মুসলমানরা বেশি আপন ভাবতে পারে না। অপরদিকে হিন্দুদের ধর্মীয় ভাতৃত্বপ্রেম কিন্তু সীমানা বা জাতীয়তাবাদে আটকা পড়েনি। এ কারণে বাংলাদেশের হিন্দুরা নির্যাতিত হলে ভারতীয় হিন্দুরা চিৎকার দেয়। আবার ভারতীয় হিন্দুরা খারাপ কাজ করলেও বাংলাদেশের হিন্দুরা তাতে প্রকাশ্য সমর্থন দেয়, বিরোধীতা করা তো পরের বিষয়।
----কিন্তু বাংলাদেশের হিন্দুদের পূজা বন্ধ করে দিলে, আমাদের সবাই উগ্রবাদী বলবে না ?
-আপনার মেসেজটা যদি ক্লিয়ার থাকে, তবে আপনাকে উগ্রবাদী বলার সুযোগ কোথায় ?
এখানে তো জোর জবরদস্তি করার কিছু নেই, অস্পষ্টতার কিছু নেই।
আপনি তাদের একত্র করে বলে দেন- ভারতে যদি মুসলমানদের গরুর মাংশের জন্য মারা হয়, তবে বাংলাদেশের হিন্দুদের পূজা আটকে দেয়া হবে। তোমরা তোমাদের স্ব-জাতি ভাইদের থামতে বলো। নয়ত তোমাদের পূজা করতে দেয়া হবে না।
মনে রাখবেন- হিন্দুরা হলো- শক্তের ভক্ত নরমের জম। আপনি শক্ত হোন, দেখবেন হিন্দুরও নরম হয়ে গেছে। নিজেদের স্বজাতির চাপে হলেও ভারতের মুসলমানদের উপর নরম হতে তারা বাধ্য হবে।
তবে মূল কথা হলো- আপনি নিজে মুসলমান হিসেবে শক্ত কি না ? ভারতের গরুর মাংশের জন্য মুসলমান হত্যাকাণ্ড আপনি বন্ধ করতে চান কি না ? ভারতের নিপীড়িত মুসলমানকে সাহায্য করতে চান কি না ? আপনি নিজেই যদি দ্বিধাবিভক্তি হোন, আপনার মধ্যে যদি মুসলমানের তুলনায় হিন্দু প্রেম বেশি হয়, তবে এটা আপনি করতে পারবেন না।
একটা কথা সব সময় মনে রাখবেন- সব দাবী দাওয়া সব সময় ভালো কথা বলে আদায় হয় না। ক্ষেত্র বিশেষে প্রতিপক্ষের কিছু জিনিস আটকে দিতে হয়। মুসলমানদের ভালো মানুষী (বাংলায় বললে কপট, আরবীতে বললে মুনাফেক) চেহারাটা বদল করে প্রতিপক্ষকে এভাবে কিছু জিনিস আটকে দেয়া শিখতে হবে। মূল কথা হইলো- মুসলমানদের আগে সমস্বরে চাইতে হবে। যদি মুসলমানরা নিজের ধর্মীয় ভাইয়ের জন্য না চায়, তবে আলাদা করে বলার কিছু নাই।
0 comments:
Post a Comment