Wednesday, February 27, 2019

মোদির সস্তা সাম্প্রদায়িক ভোটের রাজনীতি ও মুসলমানদের করণীয়

২০০১ সালে ২৬শে জানুয়ারী, ভারতের গুজরাট রাজ্যে ঘটে যায় এক শক্তিশালী ভূমিকম্প। রিখটার স্কেলে ভূমিকম্পেরে  মাত্রা ছিলো ৭.৭। এ ভূমিকম্পে গুজরাট রাজ্যে প্রায় ৪ লক্ষ বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়। সরকারি হিসেবেই ভূমিকম্পে প্রায় ২০ হাজার লোক নিহত এবং ১ লক্ষ ৬৭ হাজার লোক আহত হয়েছে বলে স্বীকার করা হয়।
এ অতিমাত্রার ভূমিকম্পের পর পরিস্থিতি সামাল দিতে ব্যর্থ হয় তৎকালীন গুজরাটের মূখ্যমন্ত্রী বিজেপির কেশুভাই প্যাটেল। শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। ব্যর্থতার দায় মাথায় নিয়ে কেশুভাই ২০০১ সালের ৬ই অক্টোবর পদত্যাগ করে। ৭ই অক্টোবর সাময়িকভাবে ভারপ্রাপ্ত মূখ্যমন্ত্রী করা হয় লোকাল নেতা নরেন্দ্র মোদিকে।  তবে চতুর মোদি জানতো কি করে সাধারণ জনতার সেন্টিমেন্ট ব্যবহার করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে হয়।
ভারপ্রাপ্ত ক্ষমতা পাওয়ার মাত্র ৪ মাস পর, ২০০২ খ্রিষ্টাব্দের ২৭শে ফেব্রুয়ারী রহস্যজনকভাবে গোধরা শহরে হিন্দু পূজারীবাহী একটি ট্রেনে আগুন ধরে যায়। মারা যায় ৬০ পূজারী। ব্যস শুরু হয়ে যায় হিন্দু পূজারীদের লাশ নিয়ে রাজনীতি। লাশ নিয়ে মিছিল করে জাগিয়ে তোলা হয় হিন্দুত্ববাদ। এরপর জারি করা হয় কারফিউ। ভারতে কারফিউ এর অর্থ কিন্তু ভিন্ন। কাউফিউ অর্থ হিন্দুত্ববাদীরা যেন পুলিশ প্রটেকশনে মুসলমানদের উপর নির্ভয়ে দাঙ্গা চালাতে পারে। শুরু হয়ে যায় গুজরাট দাঙ্গা।  গোধরার ট্রেনে আগুনের পর যা চলে প্রায় ১ মাস। হত্যা করা হয় ৫ হাজার মুসলমানকে, ধর্ষণ করা হয় ৪০০ মুসলিম নারীকে, ধ্বংস করা হয় ৫৬৩টি মসজিদ, বাড়িঘর ছাড়া করা হয় আড়াই লক্ষ মুসলমানকে। দাঙ্গার সময় মুসলিম মহিলারা পুলিশের কাছে তাদের ইজ্জত রক্ষার আবেদন জানালে পুলিশ বলে, 'তোমাদেরকে তো শেষমেষ মেরেই ফেলবে। তার আগে ইজ্জত থাকলো কি চলে গেল তাতে কি'। এমনকি দাঙ্গার সময় রক্ষা পায়নি মুসলিম এমপি এহসান জাফরী। তাকেও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। স্থানীয় হিন্দুত্ববাদী নেতা বাবু ভাই প্যাটেলের নাম শুনে থাকবে অনেকেই। যে এক মুসলিম নারীর পেট চিড়ে ৯ মাসের ভ্রুণকে বের করে আগুনে পুড়িয়ে মারে। হিন্দুত্ববাদ জাগিয়ে তুলে নিজের জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি করে মোদি। ২০০২ সালে বিধানসভা নির্বাচনে ১৮২টির  মধ্যে ১২৭টি আসন লাভ করে সে। হয়ে যায় মূখ্যমন্ত্রী। এরপর ২০০৭, ২০১২ এর নির্বাচনেও তাকে মূখ্যমন্ত্রী হতে কষ্ট করতে হয়নি। শুধু তাই নয়, ঐ হিন্দুত্ববাদী ট্যাগ লাগিয়ে ২০১৪ সালেও হয়ে যায় পুরো ভারতের প্রধানমন্ত্রী।

২০১৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে আর মাত্র ৪ মাস বাকি। ‘মোদি ম্যাজিক’, “আচ্ছে দিন”, “বুক চওড়া” এইসব শ্লোগান দিয়ে এখন আর পাবলিক খায় না।  ৫০০ আর ১০০০ টাকা নোট বাতিল করে পুরো দেশের অর্থনীতির মাজা ভেঙ্গে দিয়েছে মোদি। বেকারত্ব এখন চরম পর্যায়ে।  দমননীতির কারণে আত্মহত্যা করেছে লক্ষ লক্ষ কৃষক। তাই এখন নতুন সাম্প্রদায়িক পলিসি নিয়েছে মোদি। প্রাথমিক ধাপ ছিলো ভুয়া ‘সার্জিকাল স্ট্রাইক’ আর এবার ‘পুলওয়ামা অ্যাটাক’। অভিযোগ দুটোই মোদির বানানো এবং দুই ক্ষেত্রেই পাকিস্তানবিরোধী উস্কে দিয়ে সামনে লাকড়ি হিসেবে দিয়ে দেয়া হয় সংখ্যালঘু মুসলমানদের। গুজরাটে আগুন দেয়া হয়েছিলো ট্রেনে, এবার বোমা বিষ্ফোরণ করা হলো বাসে।  নীতিও এক: “উস্কে দাও সাম্প্রদায়িকতা, নিয়ে নাও ভোট”। সেটাই দেখা যাচ্ছে, কথিত পুলওয়ামা অ্যাটাকের পর যায়গায় যায়গায় নিরীহ মুসলমানের উপর হামলা হচ্ছে। মুসলমানদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গা হচ্ছে, মুসলিম নারীদের হোস্টেলের সামনে হিন্দু পুরুষরা জড়ো হচ্ছে। ভুয়া ফেসবুক স্ট্যাটাস অজুহাত করে মুসলমানদের পিটিয়ে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে লাইক কামানো হচ্ছে। যদি ধরেও নেই, ঐ হামলায় পাকিস্তান দায়ী, তবে যে ভারতীয় মুসলমানরা ৭০ বছর আগে পাকিস্তান ছেড়ে ভারতের সাথে যোগ দিয়েছে, তাদের দেশাত্ববোধকে কেন নতুন করে প্রশ্নবিদ্ধ করা হবে ? কেন তাদের উপর হামলা করা হবে ?? তবে খালিস্তান আন্দোলনের জন্য শিখদের, বঙ্গসেনা আন্দোলনের জন্য হিন্দুদের, আর সেভেন সিস্টারসের স্বাধীনতার জন্য কেন উপজাতি গোষ্ঠীগুলোকে কেন দেশাত্ববোধের পরীক্ষা দিতে হয় না ? কেন তাদের উপর দেশজুড়ে হামলা হয় না ??
মোদির মুসলিমবিরোধী সস্তা সাম্প্রদায়িক ভোটের রাজনীতি নিয়ে কিছু বলার নাই তবে, এতটুকু বলতে পারি, সারা বিশ্বের মুসলমানরা যদি একটু চেষ্টা করতো, তবে নতুন করে তৈরী হতে থাকা গুজরাট দাঙ্গা বন্ধ করা কষ্টের কিছু ছিলো না। উল্লেখ্য, ২০১৮ সালে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি রেমিটেন্স গ্রহণকারী দেশ হয়েছে ভারত। ঐ বছর  প্রায় ৮০ বিলিয়ন ডলার প্রবাসী ভারতীয়রা তার দেশে পাঠায়, যা বিশ্বের শীর্ষ। যে সব দেশ থেকে ভারতীয় প্রবাসীরা টাকা পাঠায় তার শীর্ষ ১০টির মধ্যে ৭টি মুসলিম দেশ। সংযুক্ত আরব আমিরাত (১ম), সৌদি আরব (৩য়), বাংলাদেশ (৪র্থ), কুয়েত (৫ম), কাতার (৬ষ্ঠ), ওমান (৮ম), বাহরাইন (৯ম)। তাই মুসলিমবিরোধী সহিংসতা হওয়ায় মুসলিম দেশগুলো যদি একটু বিবৃতি দিতো তবে পাতলা পায়খানা হয়ে যেতো ভারতের।

আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিবেচনায় অবশ্য ভারতের উপর মুসলিম রাষ্ট্রীয়গুলোর চাপ আছে। যেমন পাকিস্তান সফরে থাকা বিন সালমান ভারত না গিয়ে দেশে ফেরত যাওয়ায় একটু হলেও চাপে পড়েছে ভারত। আবার ২০১৭ সালে ভারত সফরের সময় তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রেচেপ তাইপ এরদোয়ান কাশ্মীর ইস্যুতে বহুপাক্ষিক আলোচনার প্রস্তাব দিলে সে সময় চাপে পড়ে মোদি।  কিন্তু এগুলো সব কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্বের চাপ। কিন্তু মোদি মুসলিমবিরোধী সেন্টিমেন্ট সৃষ্টি করে যে লোকাল পর্যায়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করে সেটা নিয়ে আন্তর্জাতিকভাবে মুসলিম সংগঠন বা রাষ্ট্রগুলো কোন প্রেসার তৈরী করে না।

আপনি যদি বলেন, এক দেশ কি অন্য দেশের জনগণের (শুধু ধর্মীয় ভিত্তিতে) নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলতে পারে ?
তবে বলবো, অবশ্যই পাবে।
২০১৬ সালে নাসিরনগর কথিত হামলার সময় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ টুইট বার্তায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং 'ঢাকাস্থ হাইকমিশনারকে প্রধানমন্ত্রী শেষ হাসিনার সাথে দেখা করতে বলে। পরবর্তী কালে ভারতের কথা রাখতে নাসিরনগরের ঘটনায় বিচারের নাম দিয়ে ব্যাপক ধরপাকড় করায় ভারত খুশি হয় এবং ২০১৮ সালে ১৯শে জুলাই রাজ্যসভায় দাড়িয়ে সুষমা বলে বাংলাদেশ তার নির্দেশ অনুসারে কাজ করেছে বলে জানায়। (https://bbc.in/2XaEYS5, https://bit.ly/2V4Kwvu)
ভারত যদি অন্যদেশের হিন্দুদের নিরাপত্তার জন্য কথা বলতে পারে, তবে অন্য দেশের মুসলমানরা কেন ভারতীয় মুসলমানদের জন্য কথা বলতে পারবে না ??

মোদি এ ঘটনা নিজেই বানিয়েছে এটা ধিরে ধিরে তথ্যের ভিত্তিতেই প্রমাণ হচ্ছে। যে আদিল আহমেদ দারকে অভিযুক্ত করা হচ্ছে পুলওয়ামা অ্যাটাক’ এর জন্য, সেই আদিল নাকি ২ বছরে ৬ বার পুলিশ হেফাজতে ছিলো। ভারতীয় গোয়েন্দা বাহিনী আদিলকে সুইসাইড বোম্বার হিসেবে গড়ে তুলেছিলো কি না, সেটাই এখন সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। (https://bit.ly/2TSmVy8)
 তাছাড়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাও বলেছে, সরকার ৮ই ফেব্রুয়ারী নিজেও জানতো এ ঘটনা ঘটবে, তবুও কেন যেতে দিলো ?? (https://bit.ly/2Gx26VL)

বিশ্ব এখন আর একমুখী নেই, যে কেউ যা ইচ্ছা তাই করবে। সবাই সবার কাছে কিছু না কিছু বিষয়ে ধরা। মোদি মিথ্যা ঘটনা ঘটিয়ে স্থানীয় মুসলমানদের উপর টর্চার করার যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা এখন কারো অজানা নয়।  সারা বিশ্বের মুসলমানদের উচিত এই নিকৃষ্ট ঘটনা নিয়ে একট্টা হওয়া এবং ভারতীয় মুসলমানদের পক্ষ নিয়ে এর বিরুদ্ধে শক্ত বিবৃতি দিয়ে প্রতিবাদ করা।

===============================
আমার মূল পেইজ- Noyon chatterjee 5
(https://www.facebook.com/noyonchatterjee5)
পেইজ কোড- 249163178818686
------------------------------------------------------------------
আমার ব্যাকআপ পেইজ- Noyon Chatterjee 6
(https://www.facebook.com/Noyon-Chatterjee-6-202647270140320/)
------------------------------------------------------------------------------------------------

0 comments:

Post a Comment