Saturday, December 29, 2018

ব্লাউজের অর্থনীতি ও বাংলাদেশ


কয়েকদিন আগে এক চলচ্চিত্র অভিনেত্রী টকশোতে এসে আওয়ামী সরকার অর্থনীতির অনেক উন্নয়ন করেছে, এর উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেছে, গ্রামের নারীরা আগে ব্লাউজ পড়তো না, এখন পরে। এই ব্লাউজ শেখ হাসিনার অবদান।”

ব্লাউজ দিয়ে অর্থনীতিতে শেখ হাসিনার অবদান যাচাই করা যায় কি না, তা আমার জানা নাই। কিন্তু আমি যেটা বুঝি, কোন একটা দেশের উৎপাদন খাতের বৃদ্ধি ঐ দেশের অর্থনীতির বৃদ্ধি নির্দেশ করে। দেশের উৎপাদন বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য-শিল্পখাতে যখন বৃদ্ধি লক্ষ্য করা যায়, তখনই বুঝতে হবে দেশের অর্থনীতিতে বৃদ্ধি হচ্ছে।

ব্যবসা-বাণিজ্যের কি অবস্থা ? এই কথা আপনি যে কোন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে নিরপেক্ষভাবে জিজ্ঞেস করেন, আমি নিশ্চিত, সে উত্তর দিবে, “আগের মত ভালো না।”
গার্মেন্টস ব্যবসায়ীদের কাছে জিজ্ঞেস করেন, বলবে- “আগের মত ভালো না।”
চামড়া ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞেস করেন, বলবে- “আগের মত ভালো না।”
রিয়েলস্টেট ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞেস করেন, বলবে- “আগের মত ভালো না।”
ঔষধ ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞেস করেন, বলবে- “আগের মত ভালো না। ”
শেয়ার ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞেস করেন, বলবে- “আগের মত ব্যবসা নেই।”
মৎস ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞেস করেন, বলবে- “আগের মতো নেই।”
শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীদের জিজ্ঞেস করেন, বলবে- “আগের মত বেচা বিক্রি নেই।”

এই যদি হয়, সকল উৎপাদকের অবস্থা, তাহলে দেশের অর্থনীতিতে উন্নয়ন হচ্ছে এটা কে বলতে পারবে? যে অভিনেত্রী অঞ্জনা গ্রামের নারীদের ব্লাউজ নিয়ে উৎফুল্ল হইতেছে, তাকে জিজ্ঞেস করেন তো, “আপনি যে সিনেমা শিল্পে কাজ করেন, তার কি অবস্থা?” আমি নিশ্চিত সে বলবে, “খুব খারাপ অবস্থা, নূন আনতে পান্তা ফুরোয়।”
কয়েকদিন আগে যুগান্তরে একটা খবর আসে, “ঢালিউডে বাড়ছে বেকারত্ব”। খবরের ভেতরে আছে, চলচ্চিত্র শিল্পীদের অবস্থা এখন এতটাই খারাপ যে, তাদের এফডিসিতে আসার গাড়ি ভাড়া পর্যন্ত নেই। এ থেকে অবশ্য অনুমান করা যায়, অঞ্জনার মত অভিনেতা-অভিনেত্রীরা সংসার চালাতে বাধ্য হয়েছে এফডিসির সীমানা পার হয়ে নির্বাচনী প্রচারণায় নেমে টু-পাইস কামাতে।

কথা বলছিলাম, উৎপাদনশীল খাতসমূহ নিয়ে। এটা ঠিক বাংলাদেশে ব্যবসা বাণিজ্য কৃষি ক্ষেত্রে অবস্থা খারাপ হয়েছে, তবে যারা সরকারি চাকুরীজীবি তাদের অবস্থা কিন্তু ভালো হয়েছে। কারণ ১৬ কোটি জনগণের ট্যাক্সের টাকা বাগিয়ে ১০ লক্ষ লোকের বেতন ডবল করে দিয়েছে সরকার। এতে সরকারী চাকুরী করা মাত্র ০.৬% লোকের জন্য উপকার হয়েছে এটা ঠিক, কিন্তু তার প্রভাব গিয়ে পড়েছে দেশের বাকি ৯৯.৪% লোকের দ্রব্যমূল্যে। একইসাথে মেধাবীরা ব্যবসায় না গিয়ে চাকুরীর দিকে ঝুকছে, এটাও খারাপ লক্ষণ।

তেলে দাম বাড়ছে, গ্যাসের দাম বাড়ছে, বিদ্যুতের দাম বাড়ছে। সরকার দেশের জ্বালাানি উত্তোলন না করে বিদেশ থেকে আমদানি করার উদ্যোগ নিয়েছে, এতে খুব শিঘ্রই দেশের জ্বালানি খাতে খরচ আরো বাড়বে, আর জ্বালানি খাতে খরচ বৃদ্ধি মানে দ্রব্যমূল্য আরো কয়েকগুন বৃদ্ধি হওয়া।

আমি আপনাদের জন্য ‘কর্পোরেটোক্রেসি’ নিয়ে অনেকগুলো লেখা লিখেছিলাম। শেখ হাসিনা তার সময়ের অর্থনীতির উন্নয়ন বলে যে গপ্পো প্রচার করছে, সে আসলে কর্পোরেটোক্রেসির উন্নয়ন। এবং সেই উন্নয়ন দেখানোর জন্য কিছু ‘ফেক ডামি’ আছে, যার গোপন কৌশল বুঝা সাধারণ মানুষের বোধগম্য নয়।
আপনি নিজেই চিন্তা করে দেখুন, একমাত্র আওয়ামীলীগ বলতেছে, দেশের অর্থনীতির উন্নতি হচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে মানুষ দেখতেছে অর্থনীতি আরো সংকুচিত হচ্ছে। কিন্তু আওয়ামীলীগের বানানো গপ্পো আর বাস্তবতার মধ্যে ফারাকটা কোথায় সেটা কেউ ধরতে পারতেছে না, অথবা যারা ধরতে পারবে তারাও বিশেষ কারণে তা প্রকাশ করতেছে না।

কর্পোরেটোক্রেসির বিষয়টি বুঝতে হলে, জন পার্কিন্সের লেখা একজন অর্থনৈতিক ঘাততের স্বীকারক্তি বইটা পড়তে পারেন। সেখানে দেখবেন, ভৌত অবকাঠামো, মানে ফ্লাইওভার-এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে-মেট্রোরেল এগুলো আসলে উন্নয়ন নয়, বরং জাতিকে ঋণের চাপায় ফেলা, বিদেশী অর্থনৈতিক ঘাতকদের শর্তের বেড়াজালে ফাঁসানো এবং সরকারের লুটপাটের উপলক্ষ মাত্র।

উৎপাদনশীল খাত ঝুকিপূর্ণ হওয়ার কারণে মানুষ ব্যবসার থেকে চাকুরীর দিকে ঝুকছে। ফলে উৎপাদন খাত আরো হ্রাস পাওয়ার অবস্থা হচ্ছে। দেশী ব্যবসা বন্ধ হয়ে বিদেশী থেকে আমদানি নির্ভর অর্থনীতি তৈরী হচ্ছে, এটা যে দেশের অর্থনীতির জন্য কত ভয়ঙ্কর লক্ষণ সেটা কিন্তু মানুষ বুঝতেছে না।
৯৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চল বানিয়ে সেগুলোকে বিনা ট্যাক্সে বিদেশীদের কাছে বর্গা দেয়া হচ্ছে (লুকায়িত কমিশন থাকা অস্বাভাবিক নয়)। ঐসব কলকারখানাতে বিদ্যুৎ সার্ভিস দিতে দেশজুড়ে রূপপুর-রামপালের মত পরিবেশবিধ্বংসী বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে তোলা। দেশের ইপিজেডগুলোতে বিদেশীরা কারাখানা বানিয়ে অতিস্বল্পমূল্যের শ্রমিক সুবিধা নিয়ে যাচ্ছে, অথচ বাংলাদেশের মানুষ নির্ভরতার অভাবে ব্যাংকগুলোতে অলস অর্থ ফেলে রাখছে, বিনিয়োগ করার সাহস পাচ্ছে না। স্বল্পমূল্যের শ্রমিক সুবিধা বিদেশীরা নিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা নিতে পারছে না।

পৃথিবীতে যে সব রাষ্ট্র কর্পোরেটোক্রেসির স্বীকার হয়েছে, তাদের দেশে অনেক উন্নত রাস্তাঘাট, বিমানবন্দর, সেতু ফ্লাইওভার, পাচ তারকা হোটেল আছে। কিন্তু সেসব দেশে অধিকাংশ মানুষ দুইবেলা দু’মুঠো খাবার পায় না, এটাই হলো কর্পোরেটোক্রেসি। অর্থনৈতিক ঘাতকরা তাদের শর্ত অনুসারে চললে জিডিপি’র বৃদ্ধি দেখিয়ে দেবে, যা দিয়ে মূর্খ মানুষকে ধোকা দেয়া অনেক সহজ। কারণ সাধারণ মানুষ বুঝে না- জিডিপি খায়, না মাথায় দেয়। তারা বুঝে না, এই জিডিপির মধ্যে মারপ্যাচটা কি ? তারা বুঝে না, খাদ্যসামগ্রীর মূল্য বৃদ্ধি পেলেও জিডিপি বাড়ে, বিভিন্ন প্রকল্পের নামে লুটপাটের ক্ষেত্র বাড়ালেও জিডিপি বাড়ে। এই জিডিপি বৃদ্ধিতে পানামা পেপারস আর প্যারাডাইস পেপারসে সরকারদলীয় লোকজনের নাম বাড়বে, কিন্তু জনগনের ভাগ্যের চাকার কোন পরিবর্তণ হবে না।

তাই আওয়ামীলীগ ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা কখনই বলতে পারে না, তাদের কারণে দেশের অর্থনীতি উন্নত হয়েছে, বরং তারা বলতে পারে- জনগণ দেশ-দেশান্তরে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে দেশের অর্থনীতিকে যতটুকু সমৃদ্ধ করেছে, তারা ব্যাপক লুটপাট চালিয়ে সেটাকে পুরোপুরি ধ্বসিয়ে দিতে পারেনি, কেড়ে নিতে পারেনি গ্রামের নারীর ব্লাউজ।
তবে হা! সুযোগ দিলে আগামী ৫ বছরে সেই শেষ সম্বল ‘ব্লাউজ’টাও কেড়ে নেয়া হবে।


===============================
আমার মূল পেইজ- Noyon chatterjee 5
(https://www.facebook.com/noyonchatterjee5)
পেইজ কোড- 249163178818686
------------------------------------------------------------------
আমার ব্যাকআপ পেইজ- Noyon Chatterjee 6
(https://www.facebook.com/Noyon-Chatterjee-6-202647270140320/)
------------------------------------------------------------------------------------------------

0 comments:

Post a Comment