Sunday, September 13, 2020

রোহিঙ্গা নিয়ে আমার আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গী থেকে বিশ্লেষণ (সেপ্টেম্বর :২০১৯) (এক সাথে ৭ পর্ব)




(১ম পর্ব)


মুহিবুল্লাহ নামক এক ব্যক্তিকে নিয়ে খুব কথা হচ্ছে দেখলাম

১) তার দোষ সে ট্রাম্পের কাছে গিয়েছিলো, যে মিটিং এ প্রিয়া সাহা ছিলো,

২) এছাড়া সে রোহিঙ্গাদের দিয়ে রোহিঙ্গা গণহত্যা দিবসে সমাবেশ করিয়েছে,

৩) মুহিবুল্লাহ সেই সভায় বলেছে, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না পেলে তারা মিয়ানমারে ফিরে যাবে না।

৪) সভায় অনেক ইংরেজী ফেস্টুন ব্যবহার করা হয়েছিলো ? এগুলো অনেকের দৃষ্টিতে সন্দেহজনক ।

৫) মুহিবুল্লাহ আমেরিকায় যাওয়ার ভিসা-পাসপোর্ট পেলো কিভাবে ?


১ম প্রশ্নের উত্তর জানার জন্য বুঝতে হবে- সে ট্রাম্পের কাছে গিয়ে কি বলেছে ?

সে কি প্রিয়া সাহার মত বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বিচার দিয়েছিলো ?

না সে বিচার দেয়নি, বরং ট্রাম্পের কাছে সহযোগীতা চেয়েছে, যেন আমেরিকা তাদের ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে সহযোগীতা করে। অবশ্য ট্রাম্প এমনভাব দেখিয়েছে, রোহিঙ্গাদের সে চিনেই না।

সে যদি ট্রাম্পের কাছে তাদের প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে সহযোগীতা চায়, তবে এখানে দোষের কিছু দেখি না। বরং সে যে রোহিঙ্গাদের পক্ষ হয়ে আন্তর্জাতিকভাবে তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য সহযোগীতা চাইতে গেছে, এটা বরং আমাদের সমর্থন জানানো উচিত।


২য় প্রশ্নের উত্তর হলো, ঐ দিন রোহিঙ্গারা কেন সমাবেশ করেছে ?

তাদের উপর যে গণহত্যা চলেছে তার ২ বছর পূর্তি হিসেবে। সবাইকে দেখলাম দুই হাত তুলে মোনাজাত করছে। কান্নাকাটি করছে। একটা নিপীড়িত গোষ্ঠীর গণহত্যা দিবসে এক হয়ে, সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছে, এখানে সমস্যাটা কি তা আমার মাথায় আসলো না ?


৩য় প্রশ্নের উত্তর হলো, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা না পেলে তারা মায়নামারে ফিরে যাবে না।– এটা তো খুব স্বাভাবিক কথা। এখানে গোলেমেলের কি আছে ? তারা তো ঐখানে বন্দুকের গুলি খেয়ে এসেছে, এখন ফিরে গেলে তাদের হত্যা করা হবে না, এই নিশ্চয়তা কি কেউ দিতে পেরেছে ? আপনি যদি এভাবে গুলি খেকে কোন মতে জান নিয়ে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে অন্য দেশে আসতেন, সেই দেশের সরকার যদি আপনাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত না করে জোর করে ফিরিয়ে দিতে চাইতো, তবে আপনি কি করতেন, একবার নিজের হয়ে চিন্তা করে দেখুন।


৪র্থ প্রশ্নের উত্তর হলো, সেই সব ব্যানার ফেস্টুনে কি লেখা ছিলো ? বাংলাদেশের বিরোধী কিছু ?

নাকি ফিরে যাওয়া আকুতি ? যদি ফিরে যাওয়ার আকুতি হয়, তবে সেটা নিয়ে সন্দেহ খোজার কারণ কি ?


৫ম প্রশ্নের উত্তর হলো, মুহিবুল্লাহ’র আমেরিকায় যাওয়ায় বেআইনী কিছু পাওয়া যায়নি, পররাষ্ট্রমন্ত্রী সেটা স্বীকার করেছে, সুতরাং এখানে আলগা চুলকানি হওয়ার কিছু নেই।


সত্যিই বলতে, আমি গুজব জিনিসটা খুব ভয় পাই। গুজব হচ্ছে মানুষের আবেগকে ব্যবহার করে হঠাৎ করে কিছু করে ফেলা, এবং একটি নির্দ্দিষ্ট মহল বিশেষ স্বার্থ হাসিলের জন্য জনগণকে দিয়ে কাজটি করিয়ে থাকে। তাই গুজব থেকে সাবধান। মাথা ঠাণ্ডা রাখুন, সঠিক অ্যানালাইসিস করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সমস্যা সমাধান করুন। এবং অবশ্যই যেন তা জনগণের পক্ষে হয়।


আসুন এবার রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান নিয়ে কিছু চিন্তা করি-


ক) গত কয়েকদিন ধরে ফেসবুক ও মিডিয়ায় এমন কিছু খবর দেখছি, যা দেখলে রোহিঙ্গাদরে উপর মন বিষিয়ে উঠে। কথা হলো – হঠাৎ করে এই খবরগুলো কে ছাড়ছে ? তাদের উদ্দেশ্য কি ? আমরা বাংলাদেশীরা যদি রোহিঙ্গাদের উপর ক্ষেপে যাই, তবে লাভ হবে কার ?


কিছুদিন আগে পাহাড়ে এক সেনাসদস্যকে গুলি করে হত্যা করে উপজাতি সন্ত্রাসীরা। সেই ঘটনার পর বিগ্রেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন- তার কাছে ভিডিও ফুটেজ দেখে মনে হয়েছে, পাশ্ববর্তী দেশের (বার্মা) কোন বিদ্রোহী গোষ্ঠী এই কাজটা করেছে। তারা ইচ্ছা করে সেনাবাহিনী সদস্যকে হত্যা করেছে উস্কানি সৃষ্টির জন্য। এক্ষেত্রে তাদের উদ্দেশ্য বাংলাদেশীরা যেন উপজাতিদের উপর ক্ষেপে যায়, এতে উপজাতিদের উপর ধরপাকড় হতে পারে। এতে পাল্টা উপজাতিদের মধ্যেও উত্তেজনা বিরাজ করবে। তখন সেই উত্তেজনাকে কাজে লাগিয়ে পাশ্ববর্তী বিদ্রোহী গোষ্ঠীগুলো প্রচুর পরিমাণে বিদ্রোহী সদস্য সংগ্রহ করবে, যাদের দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশের স্বশস্ত্র বিদ্রোহে কাজে লাগানো যাবে।

ঠিক একইভাবে যদি চিন্তা করি – বাংলাদেশীরা যদি রোহিঙ্গাদের উপর ক্ষেপে যায়, তার প্রতিদানে রোহিঙ্গারাও বাংলাদেশের শত্রু হয়ে যাবে। যে রোহিঙ্গারা বার্মীজ সরকারের শত্রু ছিলো, তাদের শত্রুতার মাথা ঘুরিয়ে বাংলাদেশের দিকে দেয়া হবে। এই যে বিভিন্ন মিডিয়া বা ফেসবুকে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে লেখা হচ্ছে, এগুলো কিন্তু রোহিঙ্গারা দেখতেছে, তারা মিডিয়াও দেখে এবং ফেসবুকেও সক্রিয়। এই রোহিঙ্গারা কিন্তু বহু নির্যাতন সহ্য করে বাংলাদেশে এসেছে, তারা স্বজনের রক্তাক্ত লাশ ফেলে রেখে এসেছে, সমুদ্র সাতরে এসেছে, মৃত্যু কি তারা খুব কাছ থেকে দেখে দেখেছে। তারা খুব ডেসপারেট হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু তাদের সেই ক্রোধকে যদি আমরা কাজে না লাগিয়ে তৃতীয় পক্ষ কাজে লাগায় তবে সেটা কিন্তু বাংলাদেশের জন্য ক্ষতি ।

একটা কথা ভুলে গেলে চলবে না, বাংলাদেশের স্বাধীনতার শুরু থেকে কক্সবাজার-টেকনাফ এলাকা ঘাটি গাড়তে চেষ্টা করছে সম্রাজ্যবাদীরা। এছাড়া সাম্প্রতিক চীন-আমেরিকার যুদ্ধে প্রক্সিওয়ার জোন হওয়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ। একদিকে চীন চাইছে বঙ্গপোসাগরে অবাধ উপস্থিতি, অপরদিকে ভারত-আমেরিকা চাইছে যেকান উপায়ে চীনের প্রভাব দূর করতে। এছাড়া কক্সবাজারের মহেশখালী-কুতুবদিয়ার নিকবর্তী সমুদ্রে রয়েছে সম্ভাব্য বৃহৎ গ্যাসের মজুদ। এ অবস্থায় সম্রাজ্যবাদীদের খুব ইচ্ছা হবে, এ এলাকায় একটি বিদ্রোহী গ্রুপ তৈরী করে এ অঞ্চলে ডিস্ট্রার্ব করা। এবং সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই রোহিঙ্গাদের আরাকান থেকে বের করে আনা হয়েছে।


এটা মানতেই হবে, রোহিঙ্গারা সম্রাজ্যবাদীদের ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বলি। তারা নিজেরাই নির্যাতিত এবং শিক্ষা ও নেতৃত্বের অভাবের কারণে অপরের দ্বারা ব্যবহৃত। তাদেরদের যারা বের করে এনেছে, তাদের উদ্দেশ্য হলো বাংলাদেশীদের সাথে তাদের দ্বন্দ্ব লাগানো। কিন্তু এখনও রোহিঙ্গাদের শত্রুতার মুখ হচ্ছে বার্মীজ সরকারের দিকে। এটাকে ঘুরিয়ে বাংলাদেশের দিকে করানো হবে। এবং আমাদের বাংলাদেশীদের উত্তেজিত করে প্রথমে তাদের সাথে দ্বন্দ্ব ঘটানো হবে, এরপর তার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উত্তেজিত করানো হতে পারে, যার ভবিষ্যত আশঙ্কাগুলো আরো খারাপ।


তাহলে কি করা যেতে পারে ?

মুহিবুল্লাহ লক্ষ লক্ষ রোহিঙ্গাকে এক করেছে, এটা তো খুব ভালো কথা, এটাকে খারাপ করে দেখার দরকার কি? এখন কথা হলো মুহিবুল্লাহ’র নিয়ন্ত্রণটা আমরা তৃতীয় কোন পক্ষের হাতে না দিয়ে আমরা বাংলাদেশীরা নিয়ে নেই, তাহলেই তো হয়। সে আমাদের আশ্রিত, আমি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করে কেন তাকে আমার কেন দূরে ঠেলে দেবো, তাকে কেন তৃতীয় পক্ষের সাথে বন্ধুত্ব করতে দিবো ? আমি তার সাথে ভালো ব্যবহার করে তার নিয়ন্ত্রন আমি নিয়ে নেই। সে আমার আশ্রিত, তার উপর আমার অধিকার বেশি।


এতদিন বাংলাদেশীরা বিভিন্ন স্থান গিয়ে গিয়ে রোহিঙ্গা নির্যাতনের কথা বলেছে। এখন মুহিবুল্লাহ নামক এক নেতা পাওয়া গেলো, তাকে আরো বুদ্ধি দিয়ে, সুযোগ বিশ্বজুড়ে ঘুড়িয়ে ফিরে রোঙ্গিাদের নিরাপদ প্রত্যাবসন এবং নাগরিক সুবিধা দেয়ার জন্য দাবী আদায় করা হোক। একজন রোহিঙ্গার মুখ থেকে রোহিঙ্গাদের দাবীর কথাগুলো শুনলে আরো ভালো হয় না? কিন্তু সেটা না করে আমরা মুহিবুল্লাহ নামে অমুক তমুক রটিয়ে তাকে খারাপ করার চেষ্টা করছি।


এ সম্পর্কে ইহুদীবাদী গোয়েন্দা মোসাদ বা সিআইএ’দের একটা কার্যক্রমের কথা মনে পড়লো। আগে কোন ব্যক্তি তাদের স্বার্থের বিরুদ্ধে গেলে তাকে তারা গুপ্ত হত্যা করে মেরে ফেলতো। কিন্তু এখন তারা নাকি সেটা আরো ধিরে করে। এক্ষেত্রে-

প্রথমে চেষ্টা করে ঐ ব্যক্তিকে ঘুরিয়ে নিজের দলে ভেড়াতে,

যদি সেটা না হয়, এরপর চেষ্টা করে, তাকে ভীতি দেখিয়ে তার বিরোধীতা বন্ধ করতে,

এরপরও যদি না হয়, তখন শেষ স্টেপ হিসেবে তাকে হত্যা করা হয়।


আমি অবাক হয়ে দেখলাম, বাংলাদেশীরা যখন মুহিবুল্লাহ’র বিরুদ্ধে বলে ফেসবুকে শত শত স্ট্যাটাস দিচ্ছে, তখন সমাবেশের মধ্যে এক শেতাঙ্গ নারী মুহিবুল্লাহ’র গলা জড়িয়ে ধরে রেখেছে, তার সাথে খাতির করছে। তখন আমি অবাক হলাম যে, ডিপ্লোমেটিক জ্ঞানে আমরা কতটা পিছিয়ে। যে মুহিবুল্লাহকে আমাদের ব্যবহার করার কথা, সেটা না করে আমরা উল্টা তাকে শত্রু হওয়ার দিকে ঠেলে দিচ্ছি, আর সুদূর ইউরোপ-আমেরিকার এজেন্টরা তার গলা ধরে তাকে বন্ধু বানাতে চাইছে, যাদের উদ্দেশ্য রোহিঙ্গাদের তাদের স্বার্থে ব্যবহার করা।


রোহিঙ্গাদের নিয়ে আসলে আরো অনেক কিছু বলার আছে, অনেকের মনে অনেক প্রশ্ন থাকতে পারে, সেগুলোও উত্তর দেবো। তাবে সবার আগে দরকার আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে পুরো বিষয়টি বোঝা, তাহলে আমাদের পরবর্তী চিন্তাগুলো করতে সহজ হবে। সামনের লেখাগুলোতে তা বিস্তারিত লিখবো। (চলবে)


(২য় পর্ব)


রোহিঙ্গাদের নিয়ে হঠাৎ করে বিরূপ নিউজ তৈরীর পেছনে একটি মহল সক্রিয় তা খুব ভালো করেই বোঝা যাচ্ছে। আর সেই মহলটির নেতৃত্ব দিয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের কালের কণ্ঠ পত্রিকাটি। পত্রিকাটির খবর দেখে যা বুঝলাম- সাধারণত মিডিয়াতে এক ধরনের খবর থাকে, কিন্তু এবার রোহিঙ্গা ইস্যুতে কালেরকণ্ঠে প্রকাশিত খবরগুলো বেশ ভিন্ন এবং জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানোর জন্য করা হয়েছে।


জাতিগত বিদ্বেষ বলছি এ কারণে, এই খবরগুলো এমন যদি ১ জন দোষ করে তবে পুরো জাতিকে তার জন্য দোষারোপ করা হচ্ছে। বার বার রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেয়াটাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। এছাড়া আছে ভুল তথ্য, কিন্তু সেই ভুল শোধরানোর কোন উদ্যোগ নেই। এছাড়া অন্য পোর্টালের নিউজ কপি করে সেখানে ইচ্ছামত অংশ জুড়ে উস্কানিও দেয়া হচ্ছে। আসুন কালের কণ্ঠের গত ১ সপ্তাহে রোহিঙ্গা নিয়ে কিছু খবর দেখি-


১) মানবতায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের অনেকেই আজ ‘কালকেউটে’- https://bit.ly/32jrqpl

২) রোহিঙ্গাদের দোকানে শোভা পায় না বাংলাদেশের কোনো পণ্য- https://bit.ly/2ZuzPIo

৩) রোহিঙ্গা সমাবেশ নিয়ে প্রশ্ন, উদ্বেগ- https://bit.ly/2LiDyjc

৪) প্রিয়া সাহাদের সঙ্গী সেই মুহিবুল্লাহই রোহিঙ্গা সমাবেশের নেপথ্যে!- https://bit.ly/3467qbq

৫) রোহিঙ্গা শিবিরগুলো দেশি অস্ত্রের ভাণ্ডার- https://bit.ly/2KYrAwi

৬) রোহিঙ্গা: লাভ সবার, ক্ষতি বাংলাদেশের- https://bit.ly/2NDxlRY


এই খবরগুলো মধ্যে অধিকাংশ খবর উদ্দেশ্যমূলকভাবে ভূল তথ্য বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করা হয়েছে। যেমন-


ক) ৫ নম্বর খবর, মানে রোহিঙ্গা শিবিরগুলো দেশি অস্ত্রের ভাণ্ডার নামে যে খবরটা করা হয়েছে সেটা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যমূলক এবং ভুল তথ্য সম্পর্কিত তথ্যটি ফেসবুকে ডলার দিয়ে বুস্ট ছড়াচ্ছে কালের কণ্ঠ। যার কারণে ফেসবুকে দেখলাম খবরটির নিচে স্পন্সর দেখাচ্ছে।

অথচ এ খবরটি যে সম্পুর্ণ ভুল ও বিভ্রান্তসূচক এবং নিড়ানীগুলো যে স্থানীয় কৃষকদের জন্য সেটার খবরও কক্সবাজারের স্থানীয় পত্রিকায় এসেছে। কিন্তু সেই খবর স্থান পায়নি কালের কণ্ঠ পত্রিকায়। (এনজিও মুক্তি কক্সবাজারের “নিড়ানী”স্থানীয় কৃষকদের জন্য”

https://bit.ly/2Lac1Ay)


খ) ৪ নম্বর খবরে বলা হচ্ছে মুহিবুল্লাহ প্রিয়া সাহার সঙ্গী। অথচ এটা একটা ভুল তথ্য। ঐ সমাবেশটা প্রিয়া সাহার সমাবেশ ছিলো না, ছিলো মার্কিন সরকারের পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিক সংখ্যালঘু বা নির্যাতিতদের জন্য করা একটি সভা, যেটা বহু বছর ধরেই চলে আসতেছে। এই খবরে উদ্দেশ্যমূলকভাবে প্রিয়া সাহা আর মুহিবুল্লাহকে এক করা হয়েছে। অথচ প্রিয়া সাহা আর মুহিবুল্লাহ’র প্রতি ট্রাম্পের আচরণের ভিন্নতা ছিলো লক্ষ্যনীয়। প্রিয়া সাহা ৩ কোটি ৭০ লক্ষ হিন্দু গুম হয়েছে বলতে ট্রাম্প হাত এগিয়ে দিয়ে হ্যান্ডশেক করে, সৈণ্য পাঠাতে বলে। অপরদিকে মুহিবুল্লাহ যখন রোহিঙ্গাদের নিপীড়নের কথা বলে, তখন ট্রাম্প জিজ্ঞেস করে- রোহিঙ্গা এরা আবার কারা? বাংলাদেশ এটা কোথায়? (https://bit.ly/2PkS3IP)


তাই প্রিয়া সাহা আর মুহিবুল্লাহকে এক করা কখণই ঠিক হবে না। এবং ট্রাম্পের এই আচরণের ভিন্নতার মধ্যে রয়ে গেছে আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিশাল খেল।


গ) ৩ নম্বর খবরের প্রসঙ্গে বলতে হয়- রোহিঙ্গাদের নির্যাতনের কথা বলে সারা বিশ্বের বহু মানুষ প্ল্যাকার্ড ধরলো, এক হয়ে আন্দোলন করলো, তখন কোন সমস্যা হলো না। কিন্তু রোহিঙ্গারা যখন নিজেরা এক হলো, আর নিজেরা নিজেদের জন্য প্ল্যাকার্ড ধরলো কেন তখন একটি গোষ্ঠীর চুলকানি শুরু হয়ে গেলো?


আর রোহিঙ্গাদের এতদিন কোন নেতা ছিলো না, এ কারণে তাদের অনেক নির্যাতিত হতে হয়েছে। এখন যদি সত্যিই তাদের মধ্যে একজন নেতা তৈরী হয়, তবে এটা নিয়ে কাদের চুলকানি শুরু হলো, এটা আগে চিন্তা করতে হবে।


ঘ) এছাড়া কালেরকণ্ঠ ২৭ আগস্ট একটি খবর করেছে-

“বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন অবলম্বনে: রাত নামলেই 'সশস্ত্র জঙ্গিদের' নিয়ন্ত্রণে রোহিঙ্গা ক্যাম্প!” (https://bit.ly/2Zvcz9e)


বিবিসি’র মূল খবরে হেডিং এ জঙ্গি শব্দটা ব্যবহার করা হয়নি, কিন্তু কালেরকন্ঠ এডিট করে জঙ্গী শব্দটা যোগ করেছে। (https://bbc.in/328zed7)


আর খবরের ভেতরে কালেরকণ্ঠ বিবিসির নিউজটা হুবুহু কপি করেছে, কিন্তু শুরুতে নিজেরা একটা লাইন লাগিয়ে দিয়েছে- “খুব দ্রুতগতিতে বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সমস্যা জটিল আকার ধারণ করছে।"


কালের কণ্ঠ পত্রিকার মালিক বসুন্ধরা গ্রুপ, যার মূল মালিক আহমেদ আকবর সোবহান। আহমেদ আকবর সোবহানকে গত ৪ মাসে ভারত ২ বার পুরস্কৃত করলো-


--কলকাতায় আহমেদ আকবর সোবহানকে সম্মাননা- (https://bit.ly/2Zw145y)

--দিল্লিতে ‘এস্টেট অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান- (https://bit.ly/2ZiIP4i)

--এছাড়া ভারতীয় হাইকমিশনারকে বিদায়ী সংবর্ধনা দিলো বসুন্ধরা গ্রুপ, যা অন্য কোন বিজনেস গ্রুপ দিয়েছে বলে জানা নাই- (https://bit.ly/2Hujhq0)


আসলে রোহিঙ্গা সমস্যাটা একটি বহুমুখী আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ। রোহিঙ্গারা নিজেরাই ভিকটিম। খেলোয়াররা হচ্ছে বড় বড় সম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠীগুলো। আমরা জনগণ তাহলে কার পক্ষ নেবো, সেটা আমাদের চিন্তা করতে হবে। অনেকে হয়ত ভাবতে পারেন- “রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গেলে ভালো হবে।”


কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছে, ‘জনগণের ব্লকের জন্য এটা ভুল সিদ্ধান্ত’। ভিকটিম মাত্রই দুর্বল, দুর্বলের বিরোধীতা সবাই করতে পারে। কিন্তু মূল খেলোয়ারদের বিরোধীতা কেউ করতে পারে না। রোহিঙ্গাদের বিরোধীতার মধ্যে কোন ক্রেডিট নাই, কিন্তু আড়ালে থাকা মূল খেলোয়ারদের বিরোধীতার মধ্যে ক্রেডিট আছে। তাছাড়া মূল খেলোয়ারদের না বুঝে, যদি আমরা ভিকটিমের বিরোধীতা করি, তবে তার রেজাল্ট কোন না কোনভাবে মূল খেলোয়ারের পক্ষেই যাবে। এমনও হতে পারে যার পরবর্তী রেজাল্টের ক্ষতি আমাদের ঘাড়েও আসতে পারে। তাই এই বিষয়ে ডিসিশন নিতে হবে খুব সাবধানে।


রোহিঙ্গাদের সাম্প্রতিক বিষয়ে মূল মূল প্লেয়ার কে কে ?

১) ডেমোক্র্যাটিক ব্লক

২) রিপাবলিকান ব্লক

৩) চীন


ডেমোক্র্যাটিক ব্লকের মধ্যে আছে এনজিও, বিদেশী দাতা গোষ্ঠী, সাহায্য সংস্থা, বেশিরভাগ মিডিয়া, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। মজার ব্যাপার হচ্ছে- মিডিয়ায় ডেমোক্র্যাটিক ব্লকের বড় নিয়ন্ত্রণে থাকায় অধিকাংশ ঘটনায় তারা মার্কিন সম্রাজ্যবাদকে আড়াল করে খবর করে, এতে জনগণ তাদের সম্পর্কে বুঝতে পারে না। যেমন- বাংলাদেশের রিপাবালিকান সদস্যদের তারা ভারতীয় হিসেবে ট্যাগ দেয়, আর মায়ানমারে রিপাবলিকান সদস্যদের চীন হিসেবে ট্যাগ দেয়। আর নিজেরা (ডেমোক্র্যাটরা) সাজে নিরপেক্ষ, মানবতাবাদী। নিজেরা ঝামেলা করে দোষ চাপিয়ে দেয় অন্যের ঘাড়ে।


রিপাবলিকান ব্লকের মধ্যে আছে, ট্রাম্প, মোদি, সুকি সরকার, সুকির সেনা বাহিনীর একটা শক্তিশালী অংশ, ভারতীয় উগ্র বিজেপি, শ্রীলংকার উগ্র বৌদ্ধবাদী বধু বালা সেনা, মায়ানমারের উগ্র বৌদ্ধবাদী ৯৬৯ মুভমেন্ট। তবে রোহিঙ্গা ইস্যুতে কালের কণ্ঠের আচরণ রিপাবলিকান ঘরোনার মনে হচ্ছে।


চীনের এ অঞ্চলে পুরো স্বার্থই ব্যবসায়ীক স্বার্থ। আলাদা কোন রাজনৈতিক দর্শনও চীনের পাইনি। তারা ব্যবসা বাণিজ্য বিস্তারের জন্য টাকা পয়সা ইনভেস্ট করতেই বেশি আগ্রহী। তবে এজন্য তারা স্থিতিশীল পরিবেশ চায়। স্থিতিশীলতার প্রয়োজনে তারা টাকা ইনভেস্ট বাড়িয়ে দিতেও প্রস্তুত। (চলবে)


(৩য় পর্ব)



ইতিহাস বলছে, বিভিন্ন সময় সুপার পাওয়ারদের মধ্যে দ্বন্দ্ব থাকে এবং সেই দ্বন্দ্বের গ্রাউন্ড হিসেব তারা একটি ভিন্ন স্থান বেছে নেয়। সেটাকে বলে প্রক্সি ওয়ার জোন। যেমন- এক সময় আমেরিকা-রাশিয়া তুমুল দ্বন্দ্ব ছিলো, তাদের প্রক্সি ওয়ার জোন ছিলো আফগানিস্তান। সম্রাজ্যবাদীদের প্রক্সিওয়ার জোন হিসেবে ব্যবহৃত হতে গিয়ে আফগানিস্তানের অবস্থা করুণ দশা হয়ে গিয়েছে, এখনও আফগানিস্তানে বিভিন্ন দল-গোত্রের মধ্যে যুদ্ধ-বিগ্রহ লেগেই আছে, সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, কিন্তু সেটার প্রভাব সম্রাজ্যবাদীদের উপর আসছে না, এটাই তাদের কৌশল।


অতি দুঃখজনক হলেও, এবার সময় হলো দুই সম্রাজ্যবাদী আমেরিকার আর চীনের মধ্যে যুদ্ধ, আর তাদের প্রক্সিওয়ার জোন হলো বঙ্গপোসাগর, ভারত মহাসাগর, চীন সাগর ঘেষা দেশগুলো। ইতিমধ্যে এ যুদ্ধের অংশ হিসেবে এ অঞ্চলে চীন ঘোষণা করেছে তাদের বেল্ড রোড ইনেশিয়ায়েটিভ, মুক্তারমালা সহ বিভিন্ন পলিসি। আমেরিকা আর তার আঞ্চলিক সহযোগী ভারত গ্রহণ করেছে পিভট ট্যু এশিয়া, এক্ট ইস্ট পলিসিসহ আরো পলিসি। তাই চীন আর আমেরিকার দ্বন্দ্বে প্রতিনিয়ত প্রক্সিওয়ার জোন হিসেবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে থাকবে দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো ও তাদের জনগণ, এটা নিশ্চিত।


তবে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য যে, আমেরিকার এ অঞ্চলের প্রতিনিধি করছে ভারতের মাধ্যমে। আর ভারত ও চীনের ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে কেন্দ্রস্থল হচ্ছে বঙ্গপোসাগর। সেই বঙ্গোপসাগরের দেশ হিসেবে বাংলাদেশ, মায়ানমার, শ্রীলংকা, মালদ্বীপের মত দেশ ও তাদের জনগণের উপর ক্ষতির প্রভাবটা দেখা যাবে সর্বাাধিক। তাই এ অঞ্চলে কোন ঘটনা ঘটলে তা আন্তর্জাতিক রাজনীতির দৃষ্টিতে সূক্ষভাবে বিচার করা জরুরী। এক্ষেত্রে অবশ্যই এ অঞ্চলের জনগণকে খুব সতর্ক হতে হবে, নয়ত তাদের সামান্য ভুলের কারণে সম্রাজ্যবাদীদের ফাঁদে পড়ে আফগানিস্তানের ভাগ্যবরণ করতে হতে পারে এ অঞ্চলের জনগণকে।


আমি দেখছি, রোহিঙ্গা বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশের কিছু জনগণ বেশি উত্তেজিত। এটা খুব খারাপ লক্ষণ। আপনার ক্ষণিকের ভুল সিদ্ধান্ত, এ অঞ্চলকে ঠেলে দিতে পারে মারাত্মক পরিণতির দিকে। তাই কোন ঘটনা ঘটলেই হুজুগে লাফ দিবেন না। একটা কথা সব সময় মনে রাখবেন, আমেরিকা আর চীন যুদ্ধ লাগলে ওরা কখনই এ এলাকায় নিজেরা আসবে না, ওরা আমাকে আপনাকে প্রক্সি হিসেবে ব্যবহার করবে। তাই আমি আপনি যেন প্রক্সি হিসেবে কখন ব্যবহার না হই, এটা সব সময় খেয়াল রাখতে হবে।


আমি আগের পোস্টে বলেছি, এ অঞ্চলে মূল খেলোয়ার হলো - ডেমোক্র্যাটিক ব্লক, রিপাবলিকান ব্লক ও চীন।

তবে মূল গেম মেকিং এ আছে - ডেমোক্র্যাটিক ব্লক, রিপাবলিকান ব্লক।

অনেকে প্রশ্ন করেছে- “ভাই আমেরিকা ষড়যন্ত্র করছে বুঝলাম, কিন্তু তাদের আবার দুইটি ব্লকে ভাগ করার মানেটা কি ?”

আসলে এ বিষয়টি বুঝতে হলে আপনাকে একটু খুলে বলতে হবে। ঘটনা হলো-

আমেরিকার রাষ্ট্রীয় পলিসি হলো – এ অঞ্চলে চীনের আগত প্রভাব খর্ব করা ।

এই লক্ষ্যটা ঠিক আছে।

কিন্তু এই লক্ষ্যে পৌছাতে ডেমোক্র্যাটিক ব্লক একটা পলিসি নিয়েছে,

আবার রিপাবলিকান ব্লক আরেক ধরনের পলিসি নিয়েছে।

অর্থাৎ তাদের লক্ষ্য এক কিন্তু পলিসি ভিন্ন।

এবং পলিসি’র ভিন্নতার কারণে তাদের মধ্যে অনেক সময় দ্বন্দ্বও হয়।

বিষয়টি বুঝাতে উদহারন হিসেবে বলা যায়-

অনেক সময় দেখা যায়- আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব হয়, অনেকটা সে রকম।

এই দ্বন্দ্বে নিজেদের মধ্যে মারামারি-কাটাকাটি হতেও দেখা যায়।

দেখা যাচ্ছে, দুই দল আওয়ামীলীগের স্বার্থের পক্ষেই কাজটা করছে আবার শত্রু পক্ষকেও কাজটা দিতেছে না।

কিন্তু নিজেদের মধ্যে দুই পক্ষ কাজটা নেয়ার জন্য মারামারি করতেছে, বিষয়টি এরকম।


আমি কয়েক পোস্ট আগে আমেরিকার ডেমোক্র্যাটিক ব্লক আর রিপাবলিকান ব্লকের কথা বলতে গিয়ে বলেছিলাম- আমেরিকান সম্রাজ্যবাদের হলো দুটি হাত। এক হাত দিয়ে প্লট তৈরী করে, অন্য হাত দিয়ে দমন করে ব্যালেন্স করে। মূলত একহাতে ‘প্লট তৈরী’ আর অন্যহাতে ‘দমন’– আমেরিকার এই কাজটা এত সূক্ষ ও পারফেক্ট যে, সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, বিভিন্ন রাষ্ট্রের ইন্টিলিজেন্স পর্যন্ত তাদের সাথে পেরে উঠে না।


হ্যা অনেকে হয়ত বলতে পারে- “আমেরিকা নিজেই সন্ত্রাসবাদ তৈরী করে এবং আমেরিকাই দমন করে। ”কিন্তু কিভাবে কাজটা করে সেটার ম্যাকানিজমটা ধরতে পারে না। আমার মনে হয়, শুধু ‘আমেরিকান সম্রাজ্যবাদ’ বাদ দিয়ে,

তাকে দুই ভাগ করে- ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকান দুই ব্লকে ভাগ করে দিতো, তাদের কার্যক্রমগুলো পৃথক আলোচনা করতো,তবে তাদের ষড়যন্ত্রগুলো খুব সহজেই ধরা পড়তো।


আমি আগেও বলেছি- মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক ব্লকের লক্ষণ হলো- তারা শরনার্থী/উদ্বাস্তুদের পক্ষে, মিডিয়া, দাতা সংস্থা, মানবাধিকার সংস্থা, এনজিও, সুশীল সমাজের নাম দিয়ে। অপরদিকে রিপাবলিকান ব্লক কাজ করে- শরনার্থী/উব্দাস্তু বিরোধী, ব্যবসায়ী, সামরিক কর্মকর্তা, নিরাপত্তা বিশ্লেষক, জঙ্গীবাদ বিরোধী, ইসলাম ধর্ম বাদে অন্য ধর্মগুলোর জাতীয়তাবাদী/উগ্রবাদী দলগুলোর মধ্য দিয়ে।


উল্লেখ্য, শরনার্থী/উব্দাস্তু বিরোধী গরম গরম বক্তব্য দিয়ে রিপাবলিকান ব্লকের অনেক রাজনীতিবিদ আমেরিকাসহ অনেক দেশে নির্বাচনে জয়লাভ করেছে। সম্প্রতি রোহিঙ্গা শরনার্থীদের কেন্দ্র করে রিপাবলিকানরা ব্লকের কোন একটি মহল ঐ পলিসিগুলো জনগণের মধ্যে পুশ করায় হঠাৎ করে বাংলাদেশীদের মধ্যে রোহিঙ্গা বিরোধী মনোভাব তৈরী হতে থাকে। অথচ মাত্র দুই বছর আগে, মানবতার কথা বলে বাংলাদেশীরা তাদের সাদরে গ্রহণ করেছিলো এবং প্রায় সবাই তাদের ত্রাণ সাহাযার্থ্যে এগিয়ে এসেছিলো।


আরো উল্লেখ্য, সাধারণত এসব ক্ষেত্রে ডেমোক্র্যাট ব্লক বিভিন্ন এনজিও, সাহায্য সংস্থার নাম দিয়ে এসব শরনার্থীদের মধ্যে অনুপ্রবেশ করে এবং তাদের দিয়ে বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রম করার চেষ্টা চালায়। আবার ডেমোক্র্যাটাদের বানানো সন্ত্রাসী বা জঙ্গীবাদকে দমন করার নাম দিয়ে ‘এন্টি টেরোরিজম’ কার্যক্রম নিয়ে আসে রিপাবলিকান ব্লকরা।


কিন্তু আমার মনে হয়, বর্তমানে আমেরিকায় ডেমোক্র্যাটরা ক্ষমতায় না থাকায়, তাদের ব্লক সদস্যরা অপেক্ষাকৃত দুর্বল অবস্থায় আছে, এছাড়া হংকংসহ আরো অনেক এলাকায় ডেমোক্র্যাটদের বর্তমান মূল ফোকাস। এ অবস্থায় রোহিঙ্গাদের মধ্যে কথিত জঙ্গীবাদ পুশ করার জন্য যতটুকু কাজ করার দরকার ছিলো ডেমোক্র্যাটরা ততটুকু করতে পারেনি বা সফল হয়নি, বা তাদের আরো সময় দরকার আছে। এ সুযোগ অন্যান্য সাধারণ ইসলামিক এনজিওগুলোও রোহিঙ্গাদের মধ্যে ঢুকে শিক্ষা দিয়েছে। এ অবস্থায় গত ২৫মে রোহিঙ্গারা যে সমাবেশ করেছে তার কিছু কিছু লক্ষণ মার্কিন সম্রাজ্যবাদের পলিসি’র সাথে দ্বন্দ্ব তৈরী করে। যেমন-

১) তারা ইসলাম ধর্মকে ফোকাস করে দোয়া মোনাজাত করে, যা রিপাবলিকানদের জন্য মারাত্মক চুলকানি কারণ।

২) বাংলাদেশীদের সাহায্যের জন্য ৩ বার কৃতজ্ঞতা জানায়।সুন্দর ও সুশৃঙ্খলভাবে সভা করা। এ পলিসিগুলো অনেক বেশি স্ম্যার্ট হয়েছে। যা বিরোধীদের গা জ্বলার কারণ।

৩) অনেক দেশের মুসলমানরা এক হয়ে রোহিঙ্গাদের জন্য এক সময় সমাবেশ করেছে, তাদের পক্ষে প্ল্যাকার্ড ধরেছে। কিন্তু আজকে যখন রোহিঙ্গারা এক হয়ে সমাবেশ করলো, তাদের একজন নেতা ঠিক করলো, তখনই একটি বিশেষ মহল ক্ষেপে গেলো এবং রোহিঙ্গা বিরোধী ব্যাপক প্রচার শুরু করলো। তারমানে রোহিঙ্গাদের একত্রিত হওয়া এবং একজন নেতা ঠিক করা তাদের কোন স্বার্থের বিরুদ্ধে যায়।


এখন যদি বাংলাদেশ যদি ঐ রোহিঙ্গা নেতাকে ডেমোক্র্যাটদের থেকে পৃথক করে(তাদের ষড়যন্ত্রগুলো বুঝিয়ে) নিজের আয়ত্ত্বে নিয়ে নেয়। এবং সেই নেতাকে দিয়ে রোহিঙ্গাদের পৃথক ভূমিতে ফিরে যাওয়ার জন্য বিশ্বজুড়ে ক্যাম্পেইন করায়, তবে অনেক কাজ সহজ হয়ে যায়। তাহলে রোহিঙ্গা নিয়ে ডেমোক্র্যাটাদের পলিসিও নষ্ট হয়ে যায়, রিপাবলিকানদের পলিসিও নষ্ট হয়ে যায়।


আপনাদের মনে থাকার কথা- ২ বছর আগে রোহিঙ্গা সমস্যা শুরু হওয়ার পর বিডিআরের সাবেক মহা পরিচালক আলম ফজলুর রহমান দুটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন-


একটির মধ্যে বলেছিলেন-

রোহিঙ্গারা হচ্ছে এ অঞ্চলের স্ট্র্যাইকার। যার হাতে এর ক্ষমতা থাকবে, সে অঞ্চলে গেম খেলতে পারবে।


আরেকটি স্ট্যাটাসে বলেছিলেন-

বাংলাদেশের উচিত রোহিঙ্গাদের সহাযোগীতা দিয়ে আরাকানে ফেরত পাঠানো যেন তারা তাদের ভূমি ফিরে পেতে পারে বা স্বায়ত্বশাসন লাভ করতে পারে।


উল্লেখ্য সম্রাজ্যবাদীরা রোহিঙ্গাদের তাদের ভূমি থেকে বের করে আনছে এ অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করার জন্য। তাদের দিয়ে আরো খেলা বাকি আছে। এ অবস্থায় তারা যদি একজন নেতা ঠিক করে এবং তার নেতৃত্বে একত্রিত হয় এবং (শর্ত সাপেক্ষে হলেও) নিজ ভূমিতে ফিরে যাওয়ার চিন্তা করে, তবে সেটা সম্রাজ্যবাদী গেম প্লেয়ারদের জন্য মারাত্মক থ্রেট। কারণ আমি আপনি যতই রোহিঙ্গাদের পক্ষে কথা বলি, রোহিঙ্গা নিজ মুখ দিয়ে যখন কথা বলবে সেটা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্য। অপরদিকে মায়ানমার বহুদিন যে কাজগুলো (একত্রিত হওয়া, নেতা ঠিক করা) তাদের করতে দেয়নি, সেটা যদি তারা করতে পারে, তবে অবশ্যই এটা রোহিঙ্গাদের জন্য বড় অর্জন। তবে এক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের সবচেয়ে বেশি দরকার আশ্রয়দাতা বাংলাদেশের সহযোগীতা ও সহমর্মিতা। সেটা হলেই সব কিছু সোজা হয়ে যাবে, আর সেটা না হলে দুর্বল গৃহহারা রোহিঙ্গারা কিছুই করতে পারবে না। ঘিঞ্চি ক্যাম্পের মধ্যেই ধুকে ধুকে মরবে।


রোহিঙ্গারা যেন বাংলাদেশীদের সহযোগীতা ও সহমর্মিতা পেতে না পারে, সে জন্য একটি মহল রোহিঙ্গা-বাংলাদেশীদের মধ্যে লাগিয়ে দেয়ার প্ল্যান করেছে। আর এক্ষেত্রে বাংলাদেশীদের মধ্যে যেটা সবচেয়ে প্রচলিত কথা হলো- ‘রোহিঙ্গাদের স্বভাব চরিত্র ভালো না।’


উল্লেখ্য- আমি কাশ্মীরীদের ক্ষেত্রে অন্যান্য ভারতীয় মুসলমানদের থেকে শুনেছিলাম কাশ্মীরীদের স্বভাব চরিত্র ভালো না। আবার ফিলিস্তিনীদের ক্ষেত্রে অন্যান্য আরবদের দৃষ্টিভঙ্গী হলো তাদের স্বভাব চরিত্র ভালো না।


আসলে এই স্বভাব চরিত্রের বিষয়টি রোহিঙ্গা, ফিলিস্তিনি বা কাশ্মীরীদের দোষ না। এটা হলো- দীর্ঘদিন ধরে প্রতিকূল পরিবেশ, শিক্ষার অভাব ও অর্থনৈতিক অবরোধের কারণে সৃষ্টি। স্বাভাবিক ভাবে আপনি যদি চিন্তা করেন, একদম নিন্মবিত্ত শ্রেণীর একটি ছেলেকে যদি আপনি উচ্চবিত্ত কোন পরিবারের মধ্যে নিয়ে আসেন, তবে নিন্মবিত্ত ছেলেটির আচরণ কেমন মনে হবে ? তাহলে যারা যুগের পর যুগ যুদ্ধ পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে অতিক্রান্ত করছে, অশিক্ষা-দরিদ্রতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করছে তাদের স্বভাব অবশ্যই স্বাভাবিক সমাজের সাথে মেলার কথাা না।


কথা হলো- আমরা এখন স্বভাবগত সমস্যার কথা বলে যেভাবে রোহিঙ্গাদের পৃথক করে দিতে চাইছি, ঠিক একইভাবে স্বভাবগত সমস্যার কথা বলে- কাশ্মীরীদের আশেপাশের মুসলমানরা এবং ফিলিস্তিনিদের আশেপাশের মুসলমানরা তাদের পৃথক করে দিয়েছিলো।


আর আমি আপনি হাজার মাইল দূর থেকে যতই চিল্লাই “ফিলিস্তিনকে স্বাধীন করো”, “কাশ্মীরকে স্বাধীন করো” কোন লাভ হবে না, কারণ ঐ মুসলিমগোষ্ঠীর কাছে সাহায্য পৌছাতে হবে আশে পাশের মুসলিম জাতির মাধ্যম দিয়েই। কিন্তু সম্রাজ্যবাদীরা সেটাই করতে দেয় না, মানে চারপাশে যে জাতিগুলোর মাধ্যমে নির্দ্দিষ্ট জাতির মধ্যে সাহায্য পৌছাবে, সেটাকে অবরুদ্ধ বা আইসোলেট করে দেয় এবং এক্ষেত্র কাজে লাগায় দুই জাতির মধ্যে বিভেদ উস্কে দিয়ে। এবং এখন এই কাজটি করা হচ্ছে- রোহিঙ্গা-বাংলাদেশী জাতিভেদ উস্কানোর মাধ্যমে।


বলাবাহুল্য ইসলাম ধর্ম ব্যতিত অন্য ধর্মের অনেক জাতি কম জনসংখ্যা আর কম নির্যাতিত হয়েও পৃথক ভূমির দাবী আদায় করেছে। এক্ষেত্রে অন্য ধর্মের জাতিগুলো তাদের মধ্যে জাতিভেদ দ্বন্দ্ব ওভারকাম করে নির্দ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে সাহায্য করেছিলো বলেই তারা পৃথক ভূমি লাভ করতে পেরেছে। কিন্তু মুসলমানরা সেটা পারে, জাতিগত দ্বন্দ্ব নিয়ে পড়ে থাকার কারণে।


তাই আজকে যারা রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে জাতিভেদ ছড়াচ্ছে, আমি বলবো- দয়া করে আপনারা আজ থেকে ‘ফ্রি প্যালেস্টাইন’ আর ‘ফ্রি কাশ্মীর’ বলে শ্লোগান দিবেন না। কারণ আপনি যদি আজকে কাশ্মীরী বা প্যালেস্টাইনের আশেপাশে থাকতেন, তবে তাদের স্বভাব-চরিত্র দেখে অবশ্যই বলতেন ‘তুই মর’ ‘তুই মর’, ঠিক যেভাবে রোহিঙ্গাদের দেখে সে কথা কথা উচ্চারণ করছেন।

(চলবে)


(৪র্থ পর্ব)




















অনেকেই বলেছেন,ভাই রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান এগুলো বুঝে লাভ কি ?

আমি বলবো লাভ আছে।


রোহিঙ্গাদের মধ্যে এনজিও ঢুকে তাদের দিয়ে ষড়যন্ত্র করাতে পারে, এটা প্রায় অনেকেই জানে বা প্রচার আছে। এর কারণ এনজিও কর্মীর গায়ের গায়ের রং। আমেরিকান-ইউরোপীয় এনজিও কর্মীদের সাদা গায়ের রং দেখে অনেকেই হয়ত ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুজতে পারি। কিন্তু এটা তো গেলো রোহিঙ্গাদের নিয়ে সম্রাজ্যবাদীদের এক হাত (ডেমোক্র্যাট)। কিন্তু রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যে জাতিগত বিদ্বেষ প্রচার হচ্ছে, এর পেছনে যে সম্রাজ্যবাদীদের আরেক হাত আছে, সেটা আমরা বুঝতে পারি না।


অর্থাৎ সম্রাজ্যবাদীদের দুই হাত- এক হাত দিয়ে তৈরী করে, অন্য হাত দিয়ে দমন করে। এই দুই হাত পলিসি বুঝানোর জন্য আমি ডেমোক্র্যাট আর রিপাবলিকান এই দুই আলোচনা নিয়ে আসি।

(২০১৭ সালে ২৫শে আগস্ট রোহিঙ্গা গণহত্যার মাত্র ৭ দিন পর ৩রা অক্টোবর আমি আমেরিকার দুই হাত নিয়ে একটা লেখা লিখেছিলাম-https://bit.ly/2LfreR0)


অতি সম্প্রতি রোহিঙ্গা জাতিগত বিরোধী প্রচারণা যে বেশ হাওয়া প্রকাশ পেলো, তা দেখে জনগণও খুব লাফ দিলো। আমি তাদেরকে বুঝাতে চাইছি-

রোহিঙ্গাদের পেছনে পশ্চিমা এনজিওতে যেমন একহাতের ষড়যন্ত্র আছে, তেমনি রোহিঙ্গাবিরোধী প্রচারণার মধ্যেও অন্যহাতের ষড়যন্ত্র আছে।

সেই অন্যহাতটা খোজার জন্যই এ পোস্ট।


সম্প্রতি রোহিঙ্গা সমাবেশের পর যাদের গায়ে সবচেয়ে বেশি চুলকানি উঠেছিলো তাদের মধ্যে ১ জন হলো মেজর জেনারেল (অবঃ) আবদুর রশিদ। তার বক্তব্য নিয়ে দৈনিক যুগান্তর ২৭শে আগস্ট একটা রিপোর্ট করে, যার শিরোনাম- “রোহিঙ্গা শোডাউন : দেশ অস্থির করার ষড়যন্ত্র”।

সেই খবরে কথিত নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অবঃ) আবদুর রশিদ বলে-“ রোহিঙ্গাদের শোডাউন ছিল বাংলাদেশের জনগণকে জিম্মি করে দাবি আদায়ের চেষ্টা।” (https://bit.ly/324Ru7o)


আপনাদের মনে থাকার কথা- আজ থেকে ৭ দিন আগে আমি একটা স্ট্যাটাসে বলেছিলাম, আওয়ামীলীগের মধ্যে কিছু লোক প্রবেশ করে যারা আসলে আওয়ামীলীগ না, কিন্তু তারপরও তাদের শেখ হাসিনা অনেক সুযোগ সুবিধা দিয়ে পুরষ্কৃত করে। আমি বলেছিলাম, আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক দৃষ্টিকোন থেকে এ লোকগুলোকে আমার রিপাবলিকান ব্লকের মনে হয়। এর মধ্যে ৭ নম্বরে এই মেজর জেনারেল (অবঃ) আব্দুর রশিদের নাম দিয়েছিলাম। (https://bit.ly/2L5BqN6)


মেজর জেনারেল (অবঃ) আব্দুর রশিদ নামক লোকটাকে আমার খুব সন্দেহজক মনে হয়।

উল্লেখ্য বাংলাদেশে গত নির্বাচনের মাত্র ১ মাস আগে একটা খবর আসে, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত ১৪৭ জন সেনা কর্মকর্তা আওয়ামী লীগে যোগ দিয়েছে। (https://bit.ly/30UsH5y)

এই ১৪৭ জনের মধ্যে মেজর জেনারেল (অবঃ) আবদুর রশিদ ছিলো। যারা টক শো দেখেন, তাদের জন্য এই মেজর জেনারেল (অবঃ) আবদুর রশিদ খুব কমন ফেস। আবদুর রশিদদের কাজ হলো সারাদিন জঙ্গী জঙ্গী করা (রিপাবলিকান ব্লকের স্বভাব) মনে হবে মুসলমানরা মনে হয় সারাদিন কৃষিক্ষেতে জঙ্গী চাষ করে, এছাড়া বোধ হয় মুসলমানদের আর কোন কাজ নাই। এরা সভা সেমিনার করে, টক শো সারাদিন বাংলাদেশ জঙ্গীবাদের হুমকিতে আছে সেই মেসেজটাই দিতে চায়।


এই মেজর জেনারেল (অবঃ) আবদুর রশিদ ২০১৫ সালে বলেছিলো- “সেনাবাহিনীর মধ্যে জঙ্গিদের ছাঁকনি দিয়ে বের করার সময় এসেছে”। (https://bbc.in/2ZtwdCE) এদের বিশ্বাস বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মধ্যে প্রচুর জঙ্গী অনুপ্রবেশ করেছে, এদের বের করতে হবে।


আপনাদের মনে থাকার কথা, ২০১৭ সালে সুবির ভৌমিক নামক এক ভারতীয় সাংবাদিক মিথ্যা প্রচার করেছিলো- শেখ হাসিনার নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা এসএসএফ সদস্যদের মধ্যে নাকি জঙ্গী আছে,যারা শেখ হাসিনকে হত্যা করতে চেয়েছিলো। (https://bit.ly/2Zn8Pvu)


ঐ সময় সুবির ভৌমিককে অনেকে ভারতের র’ এর সদস্য বলে। আমার ধারণা- এই গ্রুপটা হলো রিপাবলিকান ব্লকের সদস্য, যারা ভারতের থাকলে রিপাবলিকান সদস্য মোদির সাথে থাকে,

আর বাংলাদেশেরও জঙ্গীবিরোধী, নিরাপত্তা বিশ্লেষক নাম দিয়ে থাকে। এরা সব সময় ইন্ডিয়া-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপের কথা বেশি বলে। এরাই সব সময় প্রচার করে – বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে প্রচুর জঙ্গী আছে। সত্যিই বলতে বাংলাদেশে সেনাবাহিনীর মধ্যে একটা বড় চায়না ব্লক আছে। এবং সেটা বেশ শক্তিশালী অবস্থানেই আছে। সম্ভবত ঐ চায়না ব্লকের আর্মি সদস্যদের টার্গেট করে রিপাবলিকান ব্লক জঙ্গী ট্যাগ দেয়।


সম্প্রতি দেশের সার্বিক নিরাপত্তার সার্থে ‘জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল’ নামক একটি কমিটি গঠন করা হতে পারে বলে পত্রিকায় দেখলাম, এই কাউন্সিলের গুরুত্ব নিয়ে মেজর জেনারেল আবদুর রশিদের মত লোকগুলো খুব উৎসাহ দেখাচ্ছে। (https://bit.ly/32dfW6s)


আমার চিন্তা হচ্ছে, সরকার নিরাপত্তা কাউন্সিলের নাম দিয়ে এই রিপাবলিকান ব্লক সদস্যদের নিয়ে কোন কমিটি করে দেয় কি না। তাহলে হয়ত দেখা যাবে, এদের অতি প্রচারণার কারণে বাংলাদেশের ১ নম্বর সমস্যা প্রচার করা হবে কথিত জঙ্গী সমস্যা। তখন সবাই একসাথে দেশ এগিয়ে নেয়া তো পরের কথা, জঙ্গীবাদের কল্পকথা শুনিয়ে পুরো দেশকে পিছন থেকে লাগাম পড়িয়ে দেয়া হবে।


তবে মেজর জেনারেল (অবঃ) আবদুর রশিদের যে জিনিসটা আমাকে সবচেয়ে ভাবায়, তাহলো তার কাদিয়ানী কানেকশন। সে ঢাকায় কাদিয়ানীদের মেইন সেন্টারে যাতায়াত করে (সাথে মুরগী কবিরকেও নিয়ে যায়)। এছাড়া কাদিয়ানীদের কোন কনফারেন্স হইলে তাকে স্টেজে বসতে দেয়। এমনকি নেদারল্যান্ডে সে কাদিয়ানীদের মসজিদের গেলে কাদিয়ানীরা তাকে পুরস্কৃত করে।


তাকে নিয়ে সংগ্রহ করা অনেকগুলো ছবি দিলাম, দেখতে পারেন। প্রথম ছবিতে দেখবেন ইহুদী জ্যাকবের পায়ের নিচে বসে সে বেশ গর্বিত।


(৫ম পর্ব)



রোহিঙ্গাদের Going Home Campaign ভয়টা কাদের? বাংলাদেশের না মায়ানমারের? গত ২৫শে আগস্ট রোহিঙ্গারা কক্সবাজারে Going Home Campaign নামক একটি সমাবেশ করে। এই সমাবেশের পর একটি মহল প্রচার করতে থাকে, এই সমাবেশটি নাকি বাংলাদেশের জন্য হুমকি স্বরূপ, এটা এক ধরনের শো-ডাউন, বাংলাদেশকে ভয় দেখানোর জন্য। আরো প্রচার করা হয়- এই শো ডাউনের মধ্যে দিয়ে রোহিঙ্গারা জানান দিলো-তারা বাংলাদেশে স্থায়ীভাবে থাকতে চায়, তারা মায়ানমারে যেতে চায় না, বাংলাদেশ যেন তাদের প্রত্যাবাসনের জন্য চাপ না প্রয়োগ করে, সেই জন্যই বাংলাদেশকে ভয় দেখাতে এই সমাবেশ করা হয়েছে। সমাবেশটি ‘বাংলাদেশকে ভয় দেখানোর জন্য’ এমন চিন্তাধারা দৃঢ় করতে-সেই সমাবেশের জন্য দেশী অস্ত্র নিড়ানি সরবরাহ করা হয়, এমন খবরও প্রচার করা হয়।


যারা এই ধরনের অভিযোগ করেছে, তাদের কাছে আমার প্রশ্ন- যদি রোহিঙ্গারা বাংলাদেশীদের ভয় দেখানোর জন্য এবং না ফেরার জন্য সমাবেশ করতো, তবে সেই সমাবেশের নাম - Going Home Campaign দিলো কেন ?


এর বদলে তারা ‘হুশিয়ারী বাংলাদেশ’ বা ‘সাবধান বাংলাদেশ’ এমন নামও তো দিতে পারতো। কিন্তু সেটা তো তারা করলো না।


এবার জানা দরকার রোহিঙ্গাদের Going Home Campaign নিয়ে রোহিঙ্গাদের বক্তব্য কি? তারা কি উদ্দেশ্যে এই সমাবেশ করেছে? এ বিষয়টি নিয়ে রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ’র বক্তব্য হচ্ছে- “আমরা এখানে দীর্ঘ সময় থাকতে চাই না, আমরা আমাদের দেশে ফিরতে চাই, এটাই এ সমাবেশের মাধ্যমে জানান দিতে চেয়েছি। রোহিঙ্গাদের এই বিশাল সমাবেশ শুধুই নিজেদের অস্তিত্ব মিয়ানমারকে জানান দেয়ার জন্য। আমরা এই বুদ্ধিটা পেয়েছি, টঙ্গীর ইজতেমা থেকে।”( https://youtu.be/NWfo9dGRuoM)


রোহিঙ্গাদের এই সমাবেশের মূল লক্ষণীয় ছিলো সব পুরুষের মাথায় টুপি এবং নারীদের বোরকা। সবাই ইসলাম ধর্ম নিয়ম অনুসারে এই সমাবেশ করে। রোহিঙ্গাদের এই ইসলামী সমাবেশ তাই মুসলমানদের জন্য হুমকি নাকি উগ্র বৌদ্ধদের জন্য হুমকি এটা বিষয়টি বাংলাদেশী মুসলমানদের চিন্তা করার দরকার ছিলো।


অনেকে হয়ত বলবে- মুহিবুল্লাহ’র এ বক্তব্য যে সঠিক তার প্রমাণ কোথায়?


রোহিঙ্গা নেতা মুহিবুল্লাহ কি সব সময় এক বক্তব্য নেয়, না ভিন্ন বক্তব্য দেয়, এটা যাচাই করলেই সত্য মিথ্যা বের হয়ে যাবে। মাস খানেক আগে এই মুহিবুল্লাহ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে গিয়ে কিছু বক্তব্য দিয়েছিলো, আসুন তার বক্তব্যটা শুনি-

“মুহিবুল্লাহ বলছিলো- Hi I am rohingya from Bangladesh refugee camp. Most of the Rohingya refugee are willing to go back home as quickly as possible. So what is the plan to help us? (https://bit.ly/2PkS3IP)


তার মানে মুহিবুল্লাহ’র দুই বক্তব্যের মধ্যে কোন ফারাক নেই, এখানেও তার সত্যতা যাচাই করা যায়।


যদিও কালেরকণ্ঠ কয়েকদিন আগে এক রিপোর্টে মুহিবুল্লাহ’র ট্রাম্পের সাক্ষাতে গিয়ে বাংলাদেশের নামে বিচার দিয়ে এসেছে এই গুজব রটায় (https://bit.ly/3467qbq, আর্কাইভ- http://archive.fo/voRDP)। অথচ মুহিবুল্লাহ’র ভিডিও ক্লিপের সাথে কালেরকণ্ঠের অভিযোগের কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি।


শুধু তাই নয়, কালেরকণ্ঠ মহল গুজব রটায়- রোহিঙ্গা কাম্পে সমাবেশকে কেন্দ্র করে ধারালো অস্ত্র সরবরাহ করা হচ্ছে। যদিও সরবারহকারী এনজিও বক্তব্য হলো এটা কৃষকদের জন্য সরবারাহ করা নিড়ানি, যা রোহিঙ্গা ক্যাম্প থেকে ১০-১২ কিলোমিটার দূরে এক কামারের দোকানে পাওয়া গেছে, যার সাথে রোহিঙ্গা সমাবেশের কোন সম্পর্ক ছিলো না। (https://bit.ly/32fzYNE)।


তাছাড়া রোহিঙ্গা সমাবেশে এমন কোন অংশ ছিলো না, যার জন্য নিড়ানির দরকার আছে বলে মনে হয়েছে। এটা স্পষ্ট কোন একটি মহল নিড়ানি আর সমাবেশকে এক করে সমাবেশকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চেয়েছে।


যাই হোক, এবার আপনাদের একটা বলি- রোহিঙ্গারা শন্তিপূর্ণ সমাবেশ করলে, একত্র হয়ে দোয়া মোনজাত করলে, আপনি কি আগে কখন হুমকি ফিল করছিলেন? নাকি মিডিয়া এবার আপনাকে শিখিয়ে দিলো, আর আপনি হুমকি হুমকি করে মুখস্ত আওড়ালেন?


ধরে নিলাম- আপনি বিষয়টি নিয়ে হুমকি ফিল করেননি, যদি আপনি না করেন, তবে কারা এই সমাবেশকে হুমকি মনে করেছে? তাদের আগের প্রতিক্রিয়া কি ছিলো? অবশ্যই সেই হুমকিটা ছিলো বার্মা সরকার এবং বার্মার বৌদ্ধদের জন্য।


এজন্য তারা সেই সমাবেশকে টার্গেট করে গুপ্তচরও পাঠায়, সেখানে রোহিঙ্গারা কি আলোচনা করছে সেটা জানার জন্য। এবং সেখান থেকে ২ জন বার্মীজকে গ্রেফতারও করা হয় একটা নিউজে দেখলাম। শুধু তাই নয়, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ভেতর বার্মীজ সরকারের গুপ্তচর হয়ে তথ্য সরবরাহ করার জন্য কয়েকজনকে হত্যা করা হয়েছে বলেও বিবিসির খবরে এসেছে। (https://www.bbc.com/bengali/news-49476387)


রোহিঙ্গা সমাবেশের একটা ভিডিও দেখে যা বুঝলাম- তারা বার্মীজ সরকারের বিরুদ্ধে গরম গরম বক্তব্য দিয়েছে। এবং বাংলাদেশের প্রতি একাধিকবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। এ সমাবেশের সিস্টেম ছিলো বেশ গোছালো, যা চোখে পড়ার মত। নারীরা এক সাথে, বৃদ্ধ ও মধ্যবয়সীরাও এক সাথে। এবং তরুণ-যুবক রোহিঙ্গারা একসাথে। তাদের গায়ে ছিলো এক ধরনের গেঞ্জি। আমার কাছে মনে হয়েছে, বার্মীজ সেনার বন্দুকের গুলিতে তাদের যে ক্ষত হইছিলো, সেটা কিছুটা হলেও শুকিয়ে তারা গোছাতে শুরু করেছে এবং সেটাই তাদের সমাবেশে লক্ষণীয় ছিলো। (https://youtu.be/iUEfOAUS6wc)


রোহিঙ্গাদের দাবীর মাধ্যমে এটা প্রচার করে- তারা একটি স্ট্যাবেল জীবন চায়। তারা চায় না, তাদের নিয়ে নতুন কোন খেলা/নাটক হোক। কারণ সম্প্রতি বার্মা সরকার যে প্রত্যাবসনের কথা বলছে, সেটা একটা নতুন নাটক। সেখানে মাত্র সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গাকে নেয়ার কথা বলা হচ্ছে। আর সেই তালিকায় আছে মাত্র ২২ হাজার রোহিঙ্গা, যা মোট রোহিঙ্গার ২% ও না। আর এভাবে মাসেও যদি সাড়ে ৩ হাজার রোহিঙ্গা নেয়া হয়, তবে বছরে নেয়া যাবে সর্বোচ্চ ৪০-৪৫ হাজার। ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা যেতে সময় লাগবে ২৫ বছর। সুতরাং এই নতুন করে ছেলে-খেলা তারা চায় না, তারা চায় সব রোহিঙ্গা এক সাথে নিরাপত্তার সাথে অধিকার নিয়ে যাবে। এবং সেই দাবী জানাতে তারা একত্রও হয়েছে, আর সেটাই মায়ারমারের ভয়ের কারণ।


রোহিঙ্গা সমাবেশ নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন- এই সমাবেশ তিনি বাংলাদশের জন্য কোন হুমকি হিসেবে দেখছেন না।(https://bit.ly/2ZyYqfr)


অথচ একটি মহল মিডিয়ায় প্রচার করেছে- সরকার কেন এই সমাবেশের অনুমুতি দিলো।

কথা হলো- যে মহলটি এটা প্রচার করেছে, তারা কি বাংলাদেশের স্বার্থে করেছে? নাকি মায়ানমারের স্বার্থের বিরুদ্ধ যাওয়ায় সমাবেশের অনুমতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে?


সত্যিই বলতে- আমি হুজুগে বিশ্বাসী নই। ২০১৭ সালের ২৫শে আগস্ট রোহিঙ্গারা যখন বাংলাদেশের দিকে আসতে শুরু করে, তখন আমার কোন ব্যক্তিগত কোন সমস্যার কারণে ২-৩দিন ফেসবুকে আসতে পারি নাই অথবা রোহিঙ্গা বিষয়টি নিয়ে অত আমলে নেইনি। কিন্তু হুজগে মাতাল জনগণ পারলে আমার ফেসবুক পেইজ ভেঙ্গে ফেলে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে ঢুকতে দেয়ার জন্য। এবং এখনও দেখছি সেই হুজুগে গোষ্ঠী এখন আবার রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে বলছে।


এ সম্পর্কে একটা কথা মনে পড়লো। গুলিস্তানে দাড়িয়ে যৌন সমস্যার নামে ওষুধ বিক্রি করতে দেখেছেন নিশ্চয়ই। ঐ রকম একটা হাতুড়ে লোকের সাথে একদিন আলাদাভাবে কথা বলতে পেরেছিলাম। আমি জিজ্ঞেস করেছিলেন- আচ্ছা আপনারা যৌন সমস্যা কাকে বলেন? তার বক্তব্য ছিলো- “যার উত্তেজনা দ্রুত উঠে, আবার দ্রুত নেমে যায়, তাদের আমরা যৌন সমস্যায় আক্রান্ত হিসেবে দেখি।” তার কথা সত্য মিথ্যা জানি না, তবে তার এই ‘দ্রুত উঠা এবং দ্রুত নেমে যাওয়া’র লক্ষণটা আমি বাংলাদেশীদের মধ্যে দেখি। কোন কিছু দেখলেই ঝাপিয়ে পড়ে, দ্রুত হুজুগ উঠে, আবার দ্রুত হুজুগ নেমে যায়।


কথা হলো- যেই হুজুগে মাতাল গোষ্ঠী এখন রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে গরম গরম বক্তব্য দিচ্ছে, তারা নিজেরাও জানে না, রোহিঙ্গাদের কিভাবে ফেরত পাঠাতে হবে। আর রোহিঙ্গাদের চাপ দিলে তারা আদৌ ফিরতে পারবে কি না?


কিন্তু আমার দৃষ্টিতে রোহিঙ্গারা গত ১ সপ্তাহে যে পলিসি দেখিয়েছে, সেটাই সকল রোহিঙ্গাকে সঠিক উপায়ে প্রত্যাবসনের জন্য সবচেয়ে উপযোগী ও কার্যকর পদ্ধতি এবং সেটাই বার্মীজ সরকারের জন্য আসল ভয়ের কারণ। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, মায়ানমার সরকার যে বিষয়টিকে থ্রেট মনে করছে, সেটাই সে কৌশলে বাংলাদেশের মিডিয়া, প্রশাসন ও জনগণের উপর চাপিয়ে দিয়েছে, নিজের থ্রেটকে বাংলাদেশের থ্রেট বানিয়ে, বাংলাদেশকে দিয়ে তা দমন করতে চাইছে, আর আমরা বোকা জনগণ সেই ফাদে পা দিয়েছি।


তাই আমরা যদি সত্যিই চাই সকল রোহিঙ্গা ফিরে যাক, তবে রোহিঙ্গাদের নতুন সুগঠিত পলিসির বিরুদ্ধে নয়, বরং তার পক্ষে বলা উচিত, সমর্থন ও সহযোগীতা দেয়া উচিত। তাহলেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবসনের বিষয়টি সুন্দর ও ভালো একটি সমাধান এগিয়ে আসবে বলে মনে হয়।



(৬ষ্ঠ পর্ব)


রোহিঙ্গা সমাবেশ বিরোধী গুজবের পেছনে কে ?





আমি আপনাদের আগেই বলেছি, রোহিঙ্গা সমাবেশের পর একটি মহল হঠাৎ সক্রিয় হয়ে উঠেছে রোহিঙ্গা বিরোধী গুজব তৈরীতে। এতে নেতৃত্ব দেয় বসুন্ধরা গ্রুপের কালের কণ্ঠ পত্রিকা। কালেরকণ্ঠ পত্রিকাটিকে ‘কলকাতার কণ্ঠ’ বলা যায়, কারণ কালেরকণ্ঠ পত্রিকাটির মালিক বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহানকে মাত্র ৪ মাস আগে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মিডিয়া জগতে অবদানের জন্য বিশেষ পুরষ্কারে ভূষিত করা হয়। (https://bit.ly/2ZKmKqR)


(১) অভিযোগ: “রোহিঙ্গা সমাবেশের পেছনে পাকিস্তানের প্রেতাত্মা”


ক) ২৫ তারিখে রোহিঙ্গাদের সমাবেশ হয়। ২৬ তারিখ কালেরকণ্ঠ দাবী করে, এই সমাবেশের পেছনে পাকিস্তানের ষড়যন্ত্র আছে। মানে পাকিস্তান ভিত্তিক এনজিও ‘আল খিদমাত ফাউন্ডেশন’ সেখানে অর্থায়ন করেছে। যদিও এর পেছনে কোন দলিল না রেফারেন্স তারা দিতে পারেনি। (https://bit.ly/2Lc2HgK)


খ) পাকিস্তানের এনজিও রোহিঙ্গা সমাবেশের পেছনে আছে, এই গোপন তথ্যের রেফারেন্স (!) প্রথমে দিতে ব্যর্থ হলেও ২৮ তারিখে কালেরকণ্ঠ তার রেফারেন্স নিয়ে হাজির হয়। সেই রেফারেন্স হলো ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম ‘ইউনাইটেড নিউজ অফ ইন্ডিয়া’ (ইউএনআই)। যদিও ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের দাবীর পেছনে কোন সূত্র ছিলো না। (https://bit.ly/2ZpR6Uc)


গ) অতঃপর “রোহিঙ্গা সমাবেশের পেছনে পাকিস্তানের হাত আছে” চতুর্দিকে চেতনাবাদীদের মধ্যে হাওয়া ছড়াতে থাকে। একে একে বাংলাদেশের চ্যানেল আই, এনটিভি, ভারতের ইকোনোমিক টাইম সবাই কালেরকণ্ঠের রেফারেন্সকে পূজি করে খবর কপি করে। শেষ পর্যন্ত ওবায়দুল কাদেরও এক সভায় বলে বসে – রোহিঙ্গা সমাবেশের পেছনে পাকিস্তানের হাত আছে। (https://bit.ly/2Ln0Vs7)

কিন্তু সেই পাকিস্তানী হাতটা আসলে কিভাবে আছে, তার সূত্রই কেউ দিতে পারেনি।


(২) অভিযোগ : বাংলাদেশীদের ৩০ চাকুরী নিয়ে গেছে রোহিঙ্গারা


কালেরকণ্ঠ একটা খবর ছড়াইছে- রোহিঙ্গারা নাকি বাংলাদেশীদের ৩০ হাজার চাকুরী নিয়ে গেছে (https://bit.ly/2MNt0f6)

এই খবর দেখে- একদল বাংলাদেশী পারলে এখনই নেমে যায় রোহিঙ্গাদের জবাই করতে। এই কাণ্ডকারখানা দেখে আমি প্রয়াত কবি শামসুর রহমানকে ধন্যবাদ না দিয়ে পারি না। তিনি যদি “এই নিয়েছে ঐ নিল যাঃ! কান নিয়েছে চিলে, চিলের পিছে মরছি ঘুরে আমরা সবাই মিলে” শিরোনামে কবিতাটি না লিখতেন, তবে আমরা বোধহয় হুজুগে বাঙালীর চরিত্র এক কথায় কখন বুঝাতে পারতাম না।

পাবলিক কালের কণ্ঠ থুক্কু কলকাতার কণ্ঠ পত্রিকাটির হেডিং দেখে লাফ দিলেও আসলে ভেতরে খবর পড়ে নাই, ভেতরে কিন্তু লেখা আছে এই ৩০ হাজার চাকুরী আসলে রোহিঙ্গা শরনার্থী নির্ভর এনজিও’র চাকুরী। অর্থাৎ যে এনজিওগুলো রোহিঙ্গাদের জন্য কাজ করতে আসছে, তারাই রোহিঙ্গাদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের জন্য রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করছে। এখানে বাংলাদেশীদের চাকুরী খাওয়ার কি হইলো ?

তবে ৩০ হাজার রোহিঙ্গার চাকুরীর সংখ্যা নিয়ে গড়মিল লাগে, কালেরকণ্ঠ এখানেও রেফারেন্স ব্যবহার করে নাই।

উল্লেখ্য ১১ লক্ষ রোহিঙ্গার বিপরীতে ৩০ হাজার শুধু এনজিও কর্মী, তাও রোহিঙ্গা ! আর বাকি মিলালে কত হবে ? যদি ৫০ হাজার হয়, তবে ২০ জনের বিপরীতে ১ জন এনজিও কর্মী, কথাটা কতটুকু সত্য? আর ৩০ হাজার মোটামুটি শিক্ষিত রোহিঙ্গা আছে চাকুরী করার মত ??

এই সব আনন্দবাজার টাইপের গাজাখুরি কথা রটায় কালেরকণ্ঠ নিজের শেষ অবস্থানটাও শেষ করে দিচ্ছে।


তবে এই বিষয়ে ঘাটতে গিয়ে একটা মজার বিষয় টের পেলাম-

গত কয়েকদিনে বিভিন্ন মিডিয়ায় রোহিঙ্গা বিরোধী নিউজ করতে গিয়ে স্থানীয় কিছু লোকের রেফারেন্স ব্যবহার করা হইছে। এর মধ্যে আছে পালংখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম গফুর উদ্দিন চৌধুরী এবং উখিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী (https://bit.ly/30zfsHA, https://bit.ly/2ZBEHeR)।


এই লোকগুলোর নেতৃত্বে স্থানীয় কক্সবাজারবাসীর একটা গ্রুপ (যারা আসলে স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা-কর্মী) রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে বেশ ক্ষেপে আছে। এই ক্ষেপে যাওয়া শুরু হয় গত জানুয়ারী মাসে। যখন রোহিঙ্গাদের ত্রাণ কাজে নিয়োজিত কিছু এনজিও এইসব স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীগুলোকে ছাটাই করে। তখন তারা এই দুই চেয়্যারম্যানের নেতৃত্বে কক্সাবাজারে আন্দোলন করে বলে, “রোহিঙ্গাদের ত্রাণ কাজে নিয়োজিত এনজিওতে কাজ করার অধিকার আমাদের সববেচে বেশি। আমাদেরকে রোহিঙ্গা ত্রাণ কাজে নিয়োজিত চাকুরীতে কমপক্ষে ৭০% দিতে হবে, নয়ত এখানে আর কোন এনজিও’র কার্যাক্রম চালাতে দেয়া হবে না, এনজিওগুলোকে প্রতিহত করা হবে। (তথ্যসূত্র: https://bit.ly/2ZzOVN3, https://bit.ly/2HCzcm3)


অর্থাৎ যে এনজিওগুলো এতদিন ভালো ছিলো, যে রোহিঙ্গারা এতদিন ভালো ছিলো,

যখনই স্থানীয় রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের চাকুরী থেকে ছাটাই করা হইছে, তখনই রোহিঙ্গা আর এনজিও’র খারাপ হয়ে গেছে। (এসব রাজনৈতিক নেতাকর্মীর সততা কতটুকু আছে ?)

তবে আমি এখানে কোন সমস্যা দেখি না। এটাকে বলে “এলাকার ছেলেদের হক”।

আপনি বাংলাদেশে যে কোন কাজ করতে যান আগে আপনাকে এলাকার ছেলেদের হক পূরণ করতে হবে।

ধরেন আপনি বাড়ি বানাবেন, আপনাকে এলাকার রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের থেকে ইট, বালু, সিমেন্ট, থাইগ্লাস, রড, ইলেকট্রিক মালামাল কিনতে হবে। যদি না কিনেন, তবে আপনার বাড়ি উঠানোই বন্ধ করে দিবে। এটা এলাকার ছেলেদের হক, এটা ফরজ।

আপনি কোন কারখানা দিতে যান, কোন দোকানপাট দিতে যান আপনাকে এলাকার ছেলেদের হক আগে পূরণ করতে হবে।

যতদিন আপনি এলাকার ছেলেদের হক পূরণ করবেন, ততদিন আপনি ভালো।

আর যেদিন হক বন্ধ করে দিবেন, সেই দিন থেকে আপনি খারাপ। আপনার ব্যবসা বন্ধ করতে তারা লেগে যাবে।

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে স্থানীয় যে গোষ্ঠীটি ক্ষেপেছে তারা ঐ এলাকার হকদার ছেলে পেলে।

এতদিন তারা হক পেয়েছে তাই রোহিঙ্গাদের থাকতে দিয়েছে, এখন হকে টান পড়েছে, তারাও ক্ষেপে গেছে।

তবে এইটুকুর মধ্যে আমি কোন সমস্যা দেখি না।

সমস্যা তৈরী হয় তখন, যখন এলাকার হকদার ছেলেদের স্বার্থবাদী কথাগুলো বাংলাদেশের মেইনস্ট্রিম মিডিয়া যাচাই বাছাই না করে ছেপে দেয় এবং সেই কথাগুলো রেফারেন্স হিসেবে ব্যবহার করে জাতিগত বিদ্বেষ ছড়ানো হয়। আর তা সোশ্যাল মিডিয়ার হুজুগে মাতাল জনগণের কল্যাণ্যে মূহুর্তে ছড়িয়ে পড়ে পুরো দেশজুড়ে। (চলবে)


(৭ম পর্ব)


কেউ কেউ বলছেন- রোহিঙ্গাদের কারণে এক সময় দেশের পরিস্থিতি ফিলিস্তিন-ইসরাইলের মত হবে।


যারা এ ধরনের কথা বলছেন, তাদেরকে কয়েকটি প্রশ্ন করতে চাই-


১) জেরুজালেম ইহুদীদের জন্য তীর্থস্থান। সে স্থানকে কেন্দ্র করে বহুদিনের একটি প্ল্যান নিয়ে ইহুদীরা ফিলিস্তিনে জড়ো হয়েছিলো। ইহুদীদের মত সেরকম কোন প্ল্যান নিয়ে কি রোহিঙ্গারা এসেছে ? কিংবা বাংলাদেশের ভেতরে কি তাদের কোন তীর্থ স্থান আছে ?


২) ইহুদীদের মধ্যে শিক্ষার হার বেশি, গবেষণাও বেশি। অপরদিকে রোহিঙ্গারা প্রায় অধিকাংশ শিক্ষিত নয়, আর গবেষনা তো স্বপ্নেও কল্পনা করা যাবে না। তাহলে রোহিঙ্গা আর ইহুদীদের মধ্যে তুলনা হয় কিভাবে ?


৩) ইহুদীরা কিন্তু ঐ সময় ইউরোপে ভালো অবস্থায় ছিলো, হিটলার হয়ত তাদের মেরে পাঠিয়েছে। অপরদিকে রোহিঙ্গারা গত ৩০ বছরে ধরে নাগরিকত্বহীন, ৫০ বছর ধরে গণহত্যা নির্যাতনের শিকার। শক্তিশালী অবস্থানে থাকা ইহুদীরা প্যালেস্টাইনে এসে নতুন ফন্দি আটতে পেরেছে। কিন্তু রোহিঙ্গাদের কি সে অবস্থা আছে, যে বাংলাদেশে এসে তারা নতুন কিছু করতে পারবে ? তারা যদি কিছু করতেই পারতো, তবে নিজ ভূমিতেই তো করতে পারতো।


৪) ফিলিস্তিনে কিছু ইহুদী গেলেও ইহুদীদের একটা বড় অংশ আমেরিকা বা ইউরোপে ছিলো। এদের একটি বড় অংশ আবার ধনী, বড় বড় বিজনেজ জায়ান্ট। কথা হলো রোহিঙ্গারা কি বিভিন্ন দেশে বিজনেজ জায়ান্ট হিসেবে আছে ?


৫) অনেকে হয়ত বলতে পারেন- “তাদের নিজেদের কিছু না থাকতে পারে, সম্রাজ্যবাদীরা তাদের সাহায্য করবে।” বুঝলাম, কিন্তু এখন পর্যন্ত সব বড় বড় সম্রাজ্যবাদীদের অবস্থান রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে। এমনকি কেউ যদি কিছু দেয়, তবে সেটা ক্যাম্পে ভিক্ষার মত, এর বেশি না।


৬) রোহিঙ্গারা নির্যাতিত হয়ে সেই ৭৮ সাল থেকে বাংলাদেশে আসছে, আগের সরকারের আমলে তাদের ফেরত পাঠানোও হয়েছিলো। ইহুদীরা ফিলিস্তিনে আসার পর কি তারা আবার ইউরোপে ফেরত গিয়েছিলো?


এবার হয়ত প্রশ্ন করবেন-

তাহলে যে রোহিঙ্গারা বাংলাদেশের স্ম্যার্টকার্ড ব্যবহার করে, ১ কেজি স্বর্ণ গিফট পায়, ক্যাম্পে অস্ত্রের ঝনঝনানি, যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করা, বাংলাদেশের কর্মক্ষেত্র দখল করে নেয়া, এসব খবর দেখে আপনি বলেন ?


আসলে যে নূর ডাকাতের কথা বলা হচ্ছে সে স্ম্যার্টকার্ড ব্যবহার করতো, মেয়ের নাক ফোরানোর অনুষ্ঠানে ১ কেজি স্বর্ণ গিফট পেয়েছে (বাংলাদেশীরা গিফট দিয়েছে), এই নূর ডাকাত কিন্তু ২ বছর আগে মিয়ানমার থেকে আসেনি, এসেছে ৩০ বছর আগে এবং স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের সাথে মাদক, সন্ত্রাসসহ বিভিন্ন অপকর্মে জড়িত ছিলো।


বাংলাদেশের নাগরিকদের মধ্যেও অনেক সন্ত্রাসী আছে, কিন্তু সে জন্য যদি আপনি সব বাংলাদেশীদের এক পাল্লায় মাপেন, তবে বিষয়টি অনেকটা দাড়ায় আমেরিকার মত- “মুসলিম মাত্রই সন্ত্রাসী”। এই টাইপের কথা।


একটি অভিযোগ শুনছি, রোহিঙ্গারা নাকি কর্মক্ষেত্র অর্থাৎ রিকশা, টমটম এগুলো চালাচ্ছে। আসলে বাংলাদেশে যে কর্মহীনতা বা বেকারত্বের কথা বলা হয়-

এটা কিন্তু শিক্ষিত বেকার, কিন্তু শ্রমজীবী বা গায়ের খাটুনিতে বাংলাদেশে কর্মের অভাব নাই, বরং অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিক না পাওয়ারও খবর আসে। তাই রোহিঙ্গারা যদি কিছু ইনকাম করার জন্য কক্সবাজারে গায়ের খাটুনি করে, তবে এটা নিয়ে আলগা বিদ্বেষ ছড়ানোর কোন কারণ দেখি না।


আরেকটি কথা হলো-

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অস্ত্রের ঝনঝনানি বা যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যার বিষয়।


আমি যুবলীগ নেতার হত্যার বিষয়টি নিয়ে অনেক মিডিয়াতে খবর দেখলাম।

খবরের অধিকাংশ হেডিং ছিলো- “ইয়াবা বিরোধী যুবলীগ নেতাকে কুপিয়ে হত্যা করলো রোহিঙ্গারা”।


যারা এ ধরনের খবর বানান, তারা কি আদৌ টেকনাফের যুবলীগের সম্পর্কে কোন ধারণা আছে ?

টেকনাফ যুবলীগের মূল কাজটা কি ? আসুন সে সম্পর্কে কিছু খবর দেখি –

১) টেকনাফে ৭১ হাজার ইয়াবা উদ্ধার, যুবলীগ নেতা আটক

(https://bit.ly/2lBGOgI)

২) ইয়াবা ব্যবসা করে টেকনাফে যুবলীগ নেতার ডুপ্লেক্স বাড়ি

(https://bit.ly/2lwaWKm)

৩) ইয়াবায় জড়িত অভিযোগে উখিয়ায় যুবলীগের কমিটি বাতিল

(https://bit.ly/2lRIr9U)

৪) ইয়াবা জগতের কিং যুবলীগ নেতা ফজল কাদের গ্রেপ্তার এড়াতে ভারতে

(https://bit.ly/2lDrpw1)


কথা হলো- ইয়াবা ব্যবসায় অভিযুক্ত পুরো স্থানীয় আওয়ামীলীগ-যুবলীগ নেতারা। সেখানে হঠাৎ করে এক ইয়াবাবিরোধী যুবলীগ নেতা পাওয়ায় আমার তো মনে হয় তাকে যাদুঘরে সাজিয়ে রাখা দরকার ছিলো।


তারপর ধরে নিলাম- ঐ যুবলীগ নেতা নির্দোষ। কিন্তু এখানে যেটা বোঝা যায়-

ঘটনা হইলো, ১১ লক্ষ রোহিঙ্গার মধ্যে সন্ত্রাসী গুন্ডা পান্ডা থাকা স্বাভাবিক। এবং দরিদ্রতার কারণে অন্যদের থেকেও বেশি থাকতে পারে। কিন্তু এই সন্ত্রাসীদেরকে অর্থের বিনিময়ে বিভিন্ন লোকাল গডফাদাররা ব্যবহার করছে। একদল ইয়াবা ব্যবসায়ী অন্যদলকে খুন করাচ্ছে, কিন্তু সেটা করাচ্ছে রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীদেরকে দিয়ে। এতে যত দোষ নন্দ ঘোষের মত রোহিঙ্গাদের ঘাড়ে দিয়ে পড়তেছে, সেই দোষ, ফলে আড়াল হয়ে যাচ্ছে মূল গডফাদাররা।


আমার কাছে মনে হচ্ছে, কোন একটি মহল দুই জাতিকেই (বাংলাদেশী ও রোহিঙ্গা) পরষ্পরের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে দিচ্ছে। যেমন কয়েকদিন আগে ২৮শে আগস্টের খবর- রোহিঙ্গা ক্যাম্পে একটি এনজিও ত্রাণ বিলি করতেছিলো, এ সময় স্থানীয় সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপ গিয়ে সেই ত্রাণ লুট করে নিয়ে যায়, যার মূল্য ছিলো প্রায় ১২ লক্ষ টাকা। এতে রোহিঙ্গাদের মধ্যে অস্থিরতা তৈরী হয়। এই খবরটি উখিয়ার একটি লোকাল পোর্টালে আসে। কিন্তু ১ দিনের মধ্যে খবরটি মুছে দেয়া হয়। যদিও তা ওয়েবক্যাশে রয়ে গেছে। (https://bit.ly/2luyeA9)


এই খবরটিতে স্পষ্ট- কোন একটি মহল দুই দিকেই সক্রিয় আছে। একদিকে বাংলাদেশীদের ক্ষেপানো হচ্ছে রোহিঙ্গা বিরোধী খবর নিয়ে, আবার অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের মালামাল লুট করে রোহিঙ্গাদের ক্ষেপানো হচ্ছে বাংলাদেশীদের বিরুদ্ধে, যদিও সেই খবর মুছে দেয়া হচ্ছে, যেন বাংলাদেশের মানুষ সে খবর পেয়ে নিউট্রাল না হয়ে যায়।


এখানে আরো একটি বিষয় স্পষ্ট-

স্থানীয় বাংলাদেশীদের সাথে রোহিঙ্গাদের একটি আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব ৪০ বছর ধরেই ছিলো, এখনও আছে (এরকম অনেক জেলার সাথেই অনেক জেলার দ্বন্দ্ব আছে, যেমন: নোয়াখালি-চট্টগ্রাম দ্বন্দ্ব, বরিশাল-নোয়াখালী দ্বন্দ্ব)। তবে বর্তমানে সেই দ্বন্দ্বটা স্বার্থগত বিষয়ের কারণে বড় হয়ে উঠেছে। কিন্তু সেই স্বার্থগত দ্বন্দ্বটা জাতীয়-আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিয়ে আসছে বিভিন্ন মিডিয়া। এমনকি বাংলাদেশীরা যেন ক্ষেপে যায় এজন্য রোহিঙ্গাদের তারা ইহুদীদের সাথে তুলনা করতেও দ্বিধা করতেছে না।


উল্লেখ্য বর্তমান চীন-আমেরিকা দ্বন্দ্বে মাঝখানে থাকা বাংলাদেশের উপর ভারতকে এচচেটিয়ে লেলিয়ে দিবে আমেরিকা। ফলে ভারত দিনে দিনে বাংলাদেশের উপর তার আধিপত্যসহ বিভিন্ন এগ্রেসিভ কাজ বৃ্দ্ধি করতে থাকবে। এ মুহুর্তে বাংলাদেশ-ভারতীয় দ্বন্দ্ব হওয়া স্বাভাবিক। এবং বাংলদেশীদের প্রতিবাদের কারণে ভারতের অনেক ষড়যন্ত্র হয়ত রূখে দেয়া সম্ভব। কিন্তু সেটা বন্ধ করতেই বাংলাদেশীদের দেখানো হচ্ছে-

"ভারতীয়রা নয়, বাংলাদেশের এক নম্বর শত্রু হলো রোহিঙ্গারা। সুতরাং যুদ্ধটা আগে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে হোক।"


আরো সহজ ভাষায় যদি বলি, তারা সব সময় চায়-

মুসলমান-মুসলমান দ্বন্দ্ব লেগে থাকে, কোনভাবে ঐক্য না করতে পারে। অপরদিকে তারা (অমুসলিমরা) সব ঐক্যজোট হয়ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লাগতে পারে। সম্প্রতি রোহিঙ্গাবিরোধী প্রোপাগান্ডার একেবারে মূলে ঢুকলে আমার তাই মনে হয়েছে।


(শেষ)



Wednesday, August 12, 2020

এত বড় বড় সড়ক কাদের স্বার্থে

(স্ট্যাটাসের তারিখ: ২৭ নভেম্বর, ২০১৯)

গতকাল আন্তঃজেলা সড়ক ৪ লেন হচ্ছে, এই বিষয়টিকে কর্পোরেটোক্রেসি এবং জনবিরুদ্ধ বলায় কেউ কেউ অবজেকশন দিয়েছে। তাদের বক্তব্য হলো- দুর্ঘটনা হ্রাস এবং স্বাচ্ছন্দে যাতায়াতের জন্য ৪ লেনের সড়কের দরকার আছে।


যারা এ ধরনের বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের কথা আসলে ফেলে দেবার মত নয়।
সত্যিই আমার-আপনার জন্য এই ৪ লেনের সড়ক দরকার আছে।
কিন্তু কথা হচ্ছে- এই যে উন্নত সড়ক ব্যবস্থা হচ্ছে, এটা কি সত্যিই আমার-আপনার জন্য হচ্ছে ?
নাকি আমার-আপনার পকেটের টাকা দিয়ে অন্য কারো জন্য তৈরী হচ্ছে এই অত্যাধুনিক সড়ক ??

(১) ঢাকা - মাওয়া - ভাংগা এক্সপ্রেসওয়ে নামক যে অত্যাধুনিক ৪ লেন সড়ক হচ্ছে, যা পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল সড়ক বলে ইতিমধ্যে পরিচিত পেয়েছে। এই সড়কের নির্মাণ ব্যয় ইতিমধ্যে ১১ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে বলে জানা গেছে। এই অত্যাধুনিক সড়কটি নির্মাণ করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক “এশিয়ান হাইওয়ের করিডর-১” এর অংশ হিসেবে। (https://bit.ly/33rmaQz)

(২) ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ৪ লেন করছে, তাতে প্রাথমিক ব্যয় ১৪ হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছে। যদিও নির্মাণ শেষ হতে আরো অনেক বাড়বে। এই সড়কটি মূলত আন্তর্জাতিক এশিয়ান হাইওয়ে ১ ও ২-এর রুটভুক্ত। আবার বিমসটেক রোড করিডোর ৩ ও সাসেক হাইওয়ে করিডোর ৫-এর রুটভুক্তও এ মহাসড়ক। (https://bit.ly/2DUoRmy)

(৩) উত্তরাঞ্চলে যে ৪ লেন (অনেকে ৬ লেন বলে) সড়ক হচ্ছে তার প্রাথমিক নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা, যা প্রকল্প শেষ হতে আরো অনেক বাড়বে। এই প্রকল্পটি মূলত এশিয়ান হাইওয়ে, বিমসটেক করিডর ও সার্ক হাইওয়ে করিডর, সাসেক করিডর, এবং স্থল ও সমুদ্র বন্দরের সঙ্গে সংযোগের মাধ্যমে উপ আঞ্চলিক যোগাযোগের অংশ হিসেবে তৈরী হচ্ছে।
(https://bit.ly/37KLQuy)

(৪) কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল হচ্ছে ৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে। এই টানেল হচ্ছে মূলত সিবিআই ও বিসিআিইসি করিডর, সেভেন সিস্টারস করিডর এবং ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান করিডর’কে সাপোর্ট দিতেই। ((https://bit.ly/2Dl3dEi))


অর্থাৎ এই যে অত্যাধুনিক সড়কগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে, এগুলো কিন্তু বাংলাদেশের জনগণের কথা মাথায় রেখে তৈরী করা হচ্ছে না, তৈরী হচ্ছে বাংলাদেশের উপর দিয়ে ভারত, চীন, ভুটান, মায়ানমার, নেপালের ব্যবসায়ীরা যে ব্যবসা করবে, তাদের গাড়িগুলো যেন দ্রুত গতিতে এবং নির্ভিঘ্নে যাতায়াত করতে পারে সে সুবিধার্থে।

এখন কথা আসতে পারে,
যদি তাদের জন্য নির্মাণ হয়ও, তবে সমস্যা কি ?
আমরাও তো সেটা ব্যবহার করতে পারবো।

সমস্যা আছে।
সমস্যা হলো- এই যে অত্যাধুনিক সড়কগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে এগুলোর খরচ তো আকাশ থেকে নামবে না কিংবা সরকার তার বাপের বাড়ি থেকে নিয়েও আসবে না, জনগণের পকেট থেকেই আসবে। আবার কোন বিদেশী যদি ঋণও দেয়, তবুও সেটা জনগণের পকেট থেকেই সুদে আসলে ফেরত দিতে হবে।

এখন কথা হইলো- এই যে জনগণ তার তেল, নুন, চাল, ডাল, পেয়াজ, আটার মূল্য ক্রমান্বয়ে বাড়িয়ে ৫, ১০ বা ১৫ বছর যাবত এই অত্যাধুনিক রাস্তাগুলোর ব্যয় নির্বাহ করবে, এরপর কি তাদের আর সেই রাস্তায় দ্রুত গতিতে গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সামর্থ থাকবে ? নাকি ঐ অত্যাধুনিক রাস্তার ধারে দাড়িয়ে ভিক্ষা করার সামর্থ হবে, এটা বুঝতে হবে।

হ্যা আমরা আমাদের রাস্তাঘাট উন্নত করবো না কেন, অবশ্যই করবো।
কিন্তু কোনটার প্রয়োজন আগে সেটা আগে বুঝতে হবে।
এখন কোনটা বেশি প্রয়োজন,
জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে দেশী উৎপাদন খাতকে গুরুত্ব দিয়ে স্ট্যাবলিশ করা?
নাকি বিদেশীরা আসবে বলে তাদের জন্য দেশ সাজাতে গিয়ে জনগণের খরচ বাড়িয়ে কৃত্তিম দুর্ভিক্ষ তৈরী করা ??

আসলে কর্পোরেটোক্রেসি পলিসিটি হলো সম্রাজ্যবাদী কর্পোরেট বা ব্যবসায়ীদের কৈ এর তেলে কৈ ভাজা পলিসি।
অর্থাৎ জনগনের টাকায় রাস্তাঘাট নির্মাণ করে সেই জনগণের উপর ব্যবসা করা। আবার সেই রাস্তা নির্মাণ খরচ জোগাতে জনগণ দরিদ্র হয়ে গেলে তাদের সস্তায় শ্রমিক রূপে ব্যবহার করা, এটাই তাদের কূটচক্র। অথচ জনগণ সেটা বুঝবে না, একবার বুঝবে উন্নয়ন, আরেকবার বুঝবে বিদেশী ইনভেস্ট, আরেকবার বুঝবে বেকারদের চাকুরী, এর বাইরে বুঝার ক্ষমতা জনগণের নেই।

তবে এখানে একটা আশঙ্কাজনক বিষয় হচ্ছে-
এই যে জনগণের সাথে এত বড় একটা ধোকাবাজি হচ্ছে, এটা কেন কেউ ফাঁস করছে না ?
আপনারা লক্ষ্য করে দেখবেন- আমাদের দেশে সাধারণত যারা সরকারের বিরোধীতা করে, তারা কিন্তু এইসব প্রকল্প করতে সরকার যে দুর্নীতি করছে তার বিরোধীতা করে, কিন্তু মূল যে কর্পোরেটোক্রেসি পলিসি তার বিরোধীতা করে না, তারা ।
এর কারণ- এই পলিসির উপরে রয়েছে সম্রাজ্যবাদী কর্পোরেট বা আন্তর্জাতিক বড় বড় ব্যবসায়ী নেটওয়ার্ক। যারা দুর্নীতিবাজ সরকারের উপর ভর করে তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু আমাদের দেশে সাধারণত যারা সরকারের বিরোধীতা করে, তারা শুধু চায় সরকারের বিরোধীতা করে রাজনীতি করতে, বিপরীতপক্ষকে দলে ভিড়াতে। কিন্তু আন্তর্জাতিক সম্রাজ্যবাদী কর্পোরেটদের কার্যক্রমের বিরোধীতা করতে তারা মোটেও চায় না। হয়ত ভাবে সেটা করলে ভবিষ্যতে হয়ত তারা আর ক্ষমতায় যেতে পারবে না। যার কারণে কর্পোরেটোক্রেসি নামক মূল ঘটনাটা কিন্তু আড়ালেই থেকে যায়, জনগণ আর তা বুঝতে পারে না।

ছবি: ১১ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের অংশ ঢাকা - মাওয়া - ভাংগা এক্সপ্রেসওয়ে।

Monday, June 22, 2020

লকডাউনের সুফলঃ প্রসব কমেছে হাসপাতালে, বেড়েছে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার


করোনা পরিস্থিতিতে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসে প্রসবের হার নেমেছে অর্ধেকে। বাড়ছে মাতৃ ও শিশুমৃত্যু। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে বড় হাসপাতাল পর্যন্ত সবখানেই কমেছে প্রসব। অন্যদিকে ব্যাপকভাবে বেড়েছে বাসায় প্রসবের সংখ্যা। কেবল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক মাসে প্রসব হয়েছে ৮৭৫টি, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিমাসে যা গড়ে ছিল দেড় হাজার। বাসা বাড়িতে অদক্ষ ধাত্রীর হাতে প্রসব বাড়ায় প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণসহ নানা জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন মায়েরা। অধ্যাপক ডা. নিলুফা সুলতানা বলেন, প্রচণ্ড খিঁচুনি নিয়ে রোগী আসছেন। কোনো কোনো রোগীদের জরায়ু জড়িয়ে নিয়ে আসছে। অধ্যাপক ডা. সায়েদা আক্তার বলেন, হোম ডেলিভারি বেড়ে গেলে অবশ্যই মাতৃ মৃত্যু বাড়বে। শিশুমৃত্যুও বাড়বে। (https://bit.ly/2TSQiSI)

এটা হচ্ছে লকডাউনের সুফল। আপনি যাতায়াত বন্ধ করে রাখবেন, মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরী করে রাখবেন, ফলে স্বাভাবিকভাবে এর প্রভাব পড়বে স্বাস্থ্যসেবার উপর। মায়েরা হাসপাতালে যেতে পারবেন না। ফলে তৈরী হবে নানান সংকট।

খবরে লক্ষ্য করুণ- ঢাকা মেডিকেলে প্রসবের সংখ্যা কমেছে অর্ধেক বা ৫০% এর মত। এই হিসেব যদি সারা বাংলাদেশে করি তখন কি হবে ?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের হিসেব মতে বাংলাদেশে এখন প্রতি মিনিটে জন্ম নেয় ৯ জন শিশু। তাহলে প্রতি দিন জন্ম নেয়া শিশুর পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজারের মত। (https://bit.ly/3dnbF6o)
তাহলে ৬৫ দিনের লকডাউনের বাংলাদেশে জন্ম নেয়ার কথা প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ শিশু।
এর মধ্যে ৫০% লকডাউনে বাধাগ্রস্থ হয়ে বাসায় প্রসবের চেষ্টা করেন, তবে তার পরিমাণ দাড়ায় প্রায় ৪ লক্ষ ২৫ হাজার। এর মধ্যে যদি মাত্র ৫% মা বা শিশু মারা যায়, তবে এর পরিমাণ হবে প্রায় ২১ হাজার। আর যদি ১০% মা বা শিশু যদি জটিল শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হোন, তবে এর পরিমাণ ৪২ হাজারের মত। বাসায় চেষ্টা করলে ৫% মা-শিশুর মৃত্যু বা ১০% জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হওয়া খুব স্বাভাবিক, বরং হিসেব এর থেকেও বেশি হতে পারে।

শিশু জন্মদানের সময় মা যদি সঠিক ট্রিটমেন্ট না পায়, লকডাউন দিয়ে যদি তাকে নানান বাধাগ্রস্ত করা হয়, তবে মা ও শিশু মৃত্যুর মত চিরন্তন সত্যকে আমরা এড়িয়ে যেতে পারবো না। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয়, আমরা বাস্তবতা এড়িয়ে থেকে এখন মরিচিকার পেছনে ছুটছি। ৬৫ দিনে করোনায় কত লোকের মৃত্যু হয়েছে, সেটা নিয়ে অনেক মিডিয়া সরব হলেও লকডাউনের কারণে কত মা ও শিশুর কিংবা সাধারণ মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করলো তার কোন হিসেব বা পরিসংখ্যান নেই। ব্রিটেনের একটা হিসেব পেয়েছিলাম, তারা একটি পরিসংখ্যানে দেখিয়েছিলো, লকডাউন বা করোনাভীতির কারণে মানুষ হাসপাতালে যাচ্ছে না, এতে সপ্তাহে মৃত্যুর সংখ্যা ৩ হাজারের মত। (https://archive.is/2eKCW)

আবার
আজকে মিডিয়ার খবরে দেখলাম, যার শিরোনাম -
অফিস খোলার প্রথম দিনে ৪০ জনের মৃত্যু।
(https://bit.ly/3cjrJEX)

লক্ষ্য করুণ- খবরে শিরোনাম দেখে মনে হচ্ছে, এই ৪০ জন মনে হয় অফিস করতে গিয়ে মারা গিয়েছিলো।
অথচ বাস্তবতার ভিত্তিতে শিরোনাম হওয়া উচিত ছিলো-
“৬৫ দিনের লকডাউনে ঘরে বসে থেকে ইমিউন সিস্টেম ড্রপ, মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৪০”
কিংবা
“আতঙ্ক বৃদ্ধি পাওয়ায় ইমিউন সিস্টেম ড্রপ, মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৪০”
(Stressful event অথবা Negative emotions মানবদেহের Immune System কে দুর্বল করে দেয়। ফলে সহজে শরীর ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া দিয়ে আক্রান্ত হয়)
কিংবা-
“বিভিন্ন ওষুধের ট্রায়ালে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা”।

এগুলো হলো বাস্তবতা ও বিজ্ঞান। কিন্তু কোনটির দিকে না যেয়ে, অফিস খোলাকে আজকের মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হলো। যদিও অফিস খোলার কারণে কিছু হয়েছে কি না, এটা বুঝতে বুঝতে আরো ১৫ থেকে ২১ দিন সময় দরকার। কিন্তু সেটা না করে, লকডাউনের দোষকে লকডাউন খোলার উপর চাপিয়ে দিয়ে চাইছে মিডিয়া।

আসলে আমরা সবাই নিজের স্বার্থের কথা ভেবে কথা বলি। কিন্তু নিজের স্বার্থে টান পড়লে ছাড় দিতে চাই না। গতমাসে দেখেছিলাম- কিছু প্রাইভেট কোম্পানির মানুষজনও লকডাউনের পক্ষে বলছে।
কিন্তু এ মাসে অনেকের বেতন-বোনাস বন্ধ হওয়াতে সবাই এখন লকডাউনের বিপক্ষে।
এখনও ফেসবুকে কেউ কেউ লকডাউনের পক্ষে বলছে।
এখন শুধু সরকারী চাকুরীজীবিদের বেতন অর্ধেক করে দেন, কিংবা ব্যাংকে যারা ডিপোজিট রেখে সুদ খায়, তাদের সুদের হার অর্ধেক করে দেন। অথবা মিডিয়া কর্মীদের বেতন অর্ধেক করে দেন। দেখবেন- লকডাউনের পক্ষের লোকগুলো নিমিষেই লকডাউনের বিপক্ষে বলা শুরু করবে।

তাই লকডাউনের পক্ষে যারা আছে, তারা অবাস্তবতাবাদী হোন কিংবা স্বার্থবাদী কিংবা দালালবাদী হোন, তারা সেগুলো ছেড়ে অবিলম্বে মূল ধারায় ফিরে আসবেন, এটাই কাম্য।

Thursday, June 18, 2020

করোনা নিয়ে অতি আতঙ্ক ও হাতুড়ে ডাক্তারি ছড়িয়ে লক্ষ লক্ষ রোগীকে বৈষম্যের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে

ফেনীর একটি খবর আজকে ভাইরাল হয়েছে। খবরটি হলো-
“ফেনীর সোনাগাজীতে করোনাভাইরাস আক্রান্তের উপসর্গ জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বদ্ধ ঘরে মৃত্যু হওয়া সাহাব উদ্দিনের (৫৫) মৃত্যুর পূর্বে বীভৎস চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। মৃত্যুর আগে পরিবারের লোকজন তাঁকে ঘরে একা রেখে বাইরে থেকে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে রাখে। দেওয়া হয়নি দুপুরে খাবার। মৃত্যুর সময় পানি চেয়েও পায়নি। মৃত্যুর পরও কাছে আসেননি স্ত্রী, ছেলে–মেয়ে ও জামাতাসহ কোন স্বজন। মৃত্যুর পর পায়নি স্থানীয় মসজিদের খাটিয়া, কেউ দেয়নি কবর খোঁড়ার কোদালও।”
(https://bit.ly/2XTiJBl)

করোনা ভাইরাসের নামে আমাদের যে সব হাতুড়ে ডাক্তারি চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে অণ্যতম যেটি বার বার প্রচার করা হয়েছে, “কারো লক্ষণ পাওয়ার সাথে সাথে তাকে পরিবার থেকে আলাদা করে দেন, কেউ যেন তার কাছে না আসে।” মনে হচ্ছে সে যে বিরাট অপরাধ করে ফেলেছে, তার বোধ হয় সেবা-সুশ্রুষার দরকার নেই।

অথচ মানুষ অসুস্থ হইলে- তার সেবা করা সব থেকে বেশি জরুরী। সেবা ও মানসিক প্রশান্তি দিয়ে একটা মানুষকে অনেকাংশে সুস্থ করে ফেলা সম্ভব। কিন্তু সেটা না করে, একটা মানুষ অসুস্থ হওয়া মাত্র যদি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়, তাকে এক ঘরে বন্দি করে রাখা হয়, তার বাড়িতে পুলিশ এসে লকডাউন করে ফেলে, তাদের বাড়িশুদ্ধু মানুষকে খাদ্য-পানীয় ব্যতিত বন্দি করে রাখে, বাড়িওয়ালা বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য হুমকি দেয়, গ্রামবাসী বাড়ির মধ্যে ইটপাটকেল ছুড়ে, তবে ঐ রোগীর মানসিক অবস্থা কি হবে একবার চিন্তা করেছেন ?
ফেনীর ঘটনা শুধু একটা নয়, আমার জানা মতে করোনা রোগী বা তার সাসপেক্টের সাথে এমন বহু নির্মম ঘটনা ঘটেছে, শুধু পরিবার থেকে নয়, হাসপাতাল থেকে, এলাকাবাসী থেকে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী থেকে, আত্মীয়-স্বজন-বন্ধুবান্ধব থেকে অহরহ ঘটেছে এমন ঘটনা। রাস্তা/বাসা/হাসপাতালে অনেক লোক অসুস্থ হয়ে ছটপট করতে করতে মারা গেছে, কিন্তু কেউ তার সাহায্যে বিন্দুমাত্র এগিয়ে আসেনি।

ছোটবেলায় প্রবাদ পড়েছিলাম- পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয়।
তেমনি রোগের বিরুদ্ধচারণ আমাদের কাজ হবে, রোগীর বিরুদ্ধে অবশ্যই নয়।
কিন্তু আমরা তো রোগের নামে রোগীর বিরুদ্ধচারণ করে চরম অমানবিক কাজ করে ফেলেছি।

কিছুদিন আগে গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুন লেগে ৫ জন করোনা রোগী মারা গিয়েছিলো। কথা হচ্ছে, আগুন লাগার পর সবাই বের হতে পারলেও করোনা রোগীদের কেন বের করা হলো না ? এরজন্য কি শুধু আগুন দায়ী? নাকি করোনা রোগী বলে ভয়ে কেউ তাদের সাহায্যে যায়নি, যদি তার করোনা হয়ে যায়, এই ভয়ে। আর তাতেই মৃত্যু হয়েছে রোগীদের ?

অনেক আগে এক পোস্টে-
ইউরোপ-আমেরিকায় করোনায় উচ্চমৃত্যুর পেছনে আমি একটি অন্যতম কারণ উল্লেখ করেছিলাম, সেটা হলো বৈষম্য-অবহেলা। ইউরোপে দেখা গিয়েছে- মৃত্যুর একটি বড় অংশ হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে। সন্তানরা বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসে, কিন্তু করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর সেখান থেকে সেবকরা ভয়ে পালিয়ে যায়। এতে বিনা দেখাশোনায় মারা অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। এর জন্য কিন্তু করোনা ভাইরাস দায়ী নয়, যদি ঐ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ঠিক মত আদরযত্ন করা হতো, তবে হয়ত অনেকেই বাচানো সম্ভব ছিলো। কিন্ত তাদের অযন্ত অবহেলায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। আবার আমেরিকায় মৃতের একটা বড় অংশ হলো কৃষ্ণাঙ্গ। এক নার্সের দাবী হলো, হাসপাতালগুলোতে কালোদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছিলো, যার কারণে কালোদের মধ্যে মৃত্যুহার অনেক বেড়ে যায়।

এজন্য অনেক আগে এক পোস্টে আমি বলেছিলাম-
করোনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুল হলো করোনাকে পাত্তা দেয়। করোনাকে যদি পাত্তা না দেয়া হলো, এবং স্বাভাবিক সব রোগের মত সব হাসপাতালে এন্টিবডি টেস্ট করে স্বাভাবিক করোনার চিকিৎসা করা যেতো, চিকিৎসা সিস্টেম না ভাঙ্গা হতো, তবে মৃত্যু বা হয়রানির সংখ্যা অনেক হ্রাস পেতো। কারণ তখন করোনা রোগীরাও চিকিৎসা পেতো আবার অন্য রোগীরাও চিকিৎসাহীন থাকতো না। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে না, বাসায় চিকিৎসা নিতে গিয়ে ক্রিটিকাল সিচুয়েশনে চলে যাচ্ছে, অনেকে মারা যাচ্ছে। লকডাউনকালে প্রসূতি নারীদের হাসপাতালে গমন অর্ধেক নেমে যাওয়া, এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। অনেক হাসপাতালে করোনা টেস্ট ছাড়া ভর্তি নিচ্ছে না, এতে শুধু টেস্ট করতে গিয়ে ২-৪ দিন ঘুরে অর্ধমৃত-মৃত হয়ে পড়ছে অনেকে।

অনেকে হয়ত বলবে, লকডাউন, সোশ্যাল ডিসটেন্সিং বা আইসোলেশন করা হয়েছিলো হাসপাতালে আগমনের কার্ভকে খাটো করা জন্য।
কিন্তু ভাই ! আপনার হাসপাতালেই তো চিকিৎসা নেই। করোনা রোগীদের বক্তব্য হাসপাতালে ঠিকমত ডাক্তাররা যায় না, দিনে এক বার যায়। গেলেও ভয়ে আড়াল থেকে কথা বলে। নার্সরাও ঠিক মত তদারকি করে না। আপনি কার্ভকে খাটো করলেন (যদিও এর কোন প্রুভ নেই), কিন্তু হাসপাতালে করোনার ট্রিটমেন্টই দিতে পারলেন না, তাহলে এই কার্ভ খাটো করার লাভ কি হলো ? আবার অন্য রোগীদের চিকিৎসা শিকেয় তুললেন, ভোগান্তি মৃত্যু বাড়িয়ে দিলেন, তবে এই কার্ভ খাটোর করার কি গুরুত্ব থাকতে পারে ? একবার বলুন।

কথা হচ্ছে-
স্বাভাবিক মানুষের প্রতি মানবিক ব্যবহার না করলে আমরা বলি অমানবিক। কিন্তু একজন রোগীর প্রতি যখন এমন জঘন্য আচরণ করা হয়, তখন তাকে কি বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়, তা আমার জানা নাই। আজকে আমেরিকায় একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে শেতাঙ্গরা বৈষম্য করে মেরে ফেলেছে বলে কত তোলপাড় হচ্ছে, তা নিয়ে কত মানবিকতার বুলি আওড়াচ্ছে মিডিয়া ও সুশীল সমাজ। কিন্তু সেই মিডিয়া ও সুশীল সমাজ যখন করোনা নিয়ে অতি আতঙ্ক ও হাতুড়ে ডাক্তারি ছড়িয়ে লক্ষ লক্ষ রোগীকে বৈষম্যের দিকে ঠেলে দেয়, মৃত্যুর মুখে পতিত করে, সেটা নিয়ে কেন কেউ কথা বলে না ? কেন সেটা নিয়ে কেউ আন্দোলন করে, কেন সেই জঘন্য অমানবিকতাকারীদের বিচার চায় না, সেটা আমি জানতে চাই।


লকডাউনের সুফলঃ প্রসব কমেছে হাসপাতালে, বেড়েছে শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার

করোনা পরিস্থিতিতে হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে এসে প্রসবের হার নেমেছে অর্ধেকে। বাড়ছে মাতৃ ও শিশুমৃত্যু। ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে শুরু করে বড় হাসপাতাল পর্যন্ত সবখানেই কমেছে প্রসব। অন্যদিকে ব্যাপকভাবে বেড়েছে বাসায় প্রসবের সংখ্যা। কেবল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে এক মাসে প্রসব হয়েছে ৮৭৫টি, স্বাভাবিক সময়ে প্রতিমাসে যা গড়ে ছিল দেড় হাজার। বাসা বাড়িতে অদক্ষ ধাত্রীর হাতে প্রসব বাড়ায় প্রসব পরবর্তী রক্তক্ষরণসহ নানা জটিলতা নিয়ে হাসপাতালে আসছেন মায়েরা। অধ্যাপক ডা. নিলুফা সুলতানা বলেন, প্রচণ্ড খিঁচুনি নিয়ে রোগী আসছেন। কোনো কোনো রোগীদের জরায়ু জড়িয়ে নিয়ে আসছে। অধ্যাপক ডা. সায়েদা আক্তার বলেন, হোম ডেলিভারি বেড়ে গেলে অবশ্যই মাতৃ মৃত্যু বাড়বে। শিশুমৃত্যুও বাড়বে। (https://bit.ly/2TSQiSI)

এটা হচ্ছে লকডাউনের সুফল। আপনি যাতায়াত বন্ধ করে রাখবেন, মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরী করে রাখবেন, ফলে স্বাভাবিকভাবে এর প্রভাব পড়বে স্বাস্থ্যসেবার উপর। মায়েরা হাসপাতালে যেতে চাইবেন, কিন্তু পারবেন না। ফলে তৈরী হবে নানান সংকট।

খবরে লক্ষ্য করুণ- ঢাকা মেডিকেলে প্রসবের সংখ্যা কমেছে অর্ধেকের মত। এই হিসেব যদি সারা বাংলাদেশে করি তখন কি হবে ?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের হিসেব মতে বাংলাদেশে এখন প্রতি মিনিটে জন্ম নেয় ৯ জন শিশু। তাহলে প্রতি দিন জন্ম নেয়া শিশুর পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজারের মত। (https://bit.ly/3dnbF6o)
তাহলে ৬৫ দিনের লকডাউনের বাংলাদেশে জন্ম নেয়ার কথা প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ শিশু।
এর মধ্যে ৫০% যদি লকডাউনে বাধাগ্রস্থ হয়ে বাসায় প্রসবের চেষ্টা করেন, তবে তার পরিমাণ দাড়ায় প্রায় ৪ লক্ষ ২৫ হাজার। এর মধ্যে যদি মাত্র ৫% মা বা শিশু মারা যায়, তবে এর পরিমাণ হবে প্রায় ২১ হাজার। আর যদি ১০% মা বা শিশু যদি জটিল শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হোন, তবে এর পরিমাণ ৪২ হাজারের মত। বাসায় চেষ্টা করলে ৫% মা-শিশুর মৃত্যু বা ১০% জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হওয়া খুব স্বাভাবিক, বরং হিসেব এর থেকেও বেশি হতে পারে।

শিশু জন্মদানের সময় মা যদি সঠিক ট্রিটমেন্ট না পায়, লকডাউন দিয়ে যদি তাকে নানান বাধাগ্রস্ত করা হয়, তবে মা ও শিশুমৃত্যুর মত চিরন্তন সত্যকে আমরা এড়িয়ে যেতে পারবো না। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয়, আমরা বাস্তবতা এড়িয়ে থেকে এখন মরিচিকার পেছনে ছুটছি। ৬৫ দিনে করোনায় কত লোকের মৃত্যু হয়েছে, সেটা নিয়ে অনেক মিডিয়া সরব হলেও লকডাউনের কারণে কত মা ও শিশুর কিংবা সাধারণ মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করলো তার কোন হিসেব বা পরিসংখ্যা নেই। ব্রিটেনের একটা হিসেব পেয়েছিলাম, তারা একটি পরিসংখ্যানে দেখিয়েছিলো, লকডাউন বা করোনাভীতির কারণে মানুষ হাসপাতালে যাচ্ছে না, এতে সপ্তাহে মৃত্যুর সংখ্যা ৩ হাজারের মত। (https://archive.is/2eKCW)

আবার
আজকে মিডিয়ার খবরে দেখলাম, যার শিরোনাম -
অফিস খোলার প্রথম দিনে ৪০ জনের মৃত্যু।
(https://bit.ly/3cjrJEX)

লক্ষ্য করুণ- খবরে শিরোনাম দেখে মনে হচ্ছে, এই ৪০ জন মনে হয় অফিস করতে গিয়ে মারা গিয়েছিলো।
অথচ বাস্তবতার ভিত্তিকে শিরোনাম হওয়া উচিত ছিলো-
“৬৫ দিনের লকডাউনে ঘরে বসে থেকে ইমিউন সিস্টেম ড্রপ, মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৪০”
কিংবা
“আতঙ্ক বৃদ্ধি পাওয়ায় ইমিউন সিস্টেম ড্রপ, মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৪০”
(Stressful event অথবা Negative emotions মানবদেহের Immune System কে দুর্বল করে দেয়। ফলে সহজে শরীর ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া দিয়ে আক্রান্ত হয়)
কিংবা-
“বিভিন্ন ওষুধের ট্রায়ালে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা”।

এগুলো হলো বাস্তবতা ও বিজ্ঞান। কিন্তু কোনটির দিকে না যেয়ে, অফিস খোলাকে আজকের মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হলো। যদিও অফিস খোলার কারণে কিছু হয়েছে কি না, এটা বুঝতে বুঝতে আরো ১৫ থেকে ২১ দিন সময় দরকার। কিন্তু সেটা না করে, লকডাউনের দোষকে লকডাউন খোলার উপর চাপিয়ে দিয়ে চাইছে মিডিয়া।

আসলে আমরা সবাই নিজের স্বার্থের কথা ভেবে কথা বলি। কিন্তু নিজের স্বার্থে টান পড়লে ছাড় দিতে চাই না। গতমাসে দেখেছিলাম- কিছু প্রাইভেট কোম্পানির মানুষজনও লকডাউনের পক্ষে বলছে।
কিন্তু এ মাসে অনেকের বেতন-বোনাস বন্ধ হওয়াতে সবাই এখন লকডাউনের বিপক্ষে।
এখনও ফেসবুকে কেউ কেউ লকডাউনের পক্ষে বলছে।
এখন শুধু সরকারী চাকুরীজীবিদের বেতন অর্ধেক করে দেন, কিংবা ব্যাংকে যারা ডিপোজিট রেখে সুদ খায়, তাদের সুদের হার অর্ধেক করে দেন। অথবা মিডিয়া কর্মীদের বেতন অর্ধেক করে দেন। দেখবেন- লকডাউনের পক্ষের লোকগুলো নিমিষেই লকডাউনের বিপক্ষে বলা শুরু করবে।

তাই লকডাউনের পক্ষে যারা আছে, তারা অবাস্তবতাবাদী হোন কিংবা স্বার্থবাদী কিংবা দালালবাদী হোন, তারা সেগুলো ছেড়ে অবিলম্বে মূল ধারায় ফিরে আসবেন, এটাই কাম্য।

চাদ পৃথিবীর কোন এলাকায় কবে যাবে (দৃশ্যমান হবে), এটা নিয়ে কিন্তু অনেক ওয়েবসাইট আছে

আজকাল অনেক ওয়েবসাইটেই ঘূর্ণিঝড় কোন কোন রাস্তায় যাবে, তার গতিপথ দেখা যায়। তেমনি চাদ পৃথিবীর কোন এলাকায় কবে যাবে (দৃশ্যমান হবে), এটা নিয়ে কিন্তু অনেক ওয়েবসাইট আছে।

সেখানে ম্যাপে দেখা যায়, কোন এলাকায় কবে চাদ দৃশ্যমান হতে পারে, কিভাবে দৃশ্যমান হবে তার সম্ভাব্য বর্ণনা। সেটা দেখেও আপনি কিছু ধারণা করতে পারেন, আসলে চাদটা কোথায় আছে?
এ রকম একটি ওয়েবসাইট হলো- https://www.moonsighting.com/

এই ওয়েবসাইটে আগামীকাল শনিবার চাদ কোন কোন এলাকায় দৃশ্যমান হবে তার সম্ভাব্য একটা দিক নির্দেশনা দিয়েছে। যেমন-
১) হলুদ কালার দিয়ে যে অংশটায় নিউমুন থাকবে (যার বাংলা অর্থ আমাবস্যা)।
২) সবুজ কালার দিয়ে বুঝাইছে শনিবার সে অংশটায় খালি চোখে চাদ দেখা যাবে।
৩) আকাশী কালার দিয়ে বুঝাইছে, শনিবার অনেকগুলো শর্ত যদি মিলে যায়, তবে ম্যাপের সে অংশে দেখা যাইতেও পারে, আবার শর্তগুলো না মিললে দেখা নাও যাইতে পারে।
৪) ধূসর কালার দিয়ে বুঝাইছে, শনিবার ঐ অংশটায় চাদ খুজতে বিশেষ দূরবিক্ষণ যন্ত্রের সাহায্য লাগবে। খালি চোখে দেখা যাবে না।
৫) লাল রং দিয়ে বুঝাইছে, শনিবার ঐ অংশটুকুতে চাদ বিশেষ দূরবিক্ষণ যন্ত্র দিয়েই দেখতে হবে।

আমার মনে হয়, এটুকু ধারণা রাখলে চাদের অবস্থান সম্পর্কে অনেক কিছুই আপনারা আগে থেকে সম্ভব্য ধারণা করতে পারেন।

“ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন”- শ্লোগানটির পেছনে ব্যবসায়ীক ধান্ধা

“ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন”- শ্লোগানটি সুন্দর।
কিন্তু এই সুন্দর শ্লোগানগুলোর পেছনে কারো ব্যবসায়ীক ধান্ধা নেই তো ?
করোনার সময় অনেক সাধারণ ব্যবসায়ীর পতন হলেও সর্বকালের রেকর্ড লাভ ছাড়িয়ে গেছে ডেমোক্র্যাটিক ব্লকের ব্যবসায়ীদের। এর মধ্যে অন্যতম হলো অনলাইন শপ অ্যামাজনের মালিক জেফ বেজোস। করোনা আতঙ্ক যখন শুধু শুরু হয়, মানে জানুয়ারী থেকে মার্চ, তখনই অ্যামাজনের বিক্রি পূর্বের রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। ৩ মাসে বিক্রি হয় ৭৫ বিলিয়ন ডলার, যা পূর্বের তুলনায় ২৬% বেশি। কোম্পানিটি এই তিন মাসে প্রতি ঘণ্টায় ইনকাম ছিলো ৩৩ মিলিয়ন ডলার। তবে এপ্রিল ও মে মাসে তাদের বিক্রি কতটুকু বেড়েছে সেই হিসেব এখনও পাওয়া যায়নি। একই সাথে অ্যামাজনের শেয়ারের দাম সর্বকালের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যায় এসময়। (https://bit.ly/2zQIiuD, https://cnb.cx/2zSleLR)
এ বিষয়টি নিয়ে দ্য গার্ডিয়ানে ইতিমধ্যে খবরও এসেছে,- করোনাকালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আড়াই কোটি লোক বেকার হলেও জেফ বেজোসের মত বিলিয়নিয়ারা হাতিয়ে নেবে ৩০৮ বিলিয়ন ডলার। (https://bit.ly/2LJJQJl)
কথা হচ্ছে, মানুষ যত ঘরে থাকবে, সে তত অনলাইন কেনাকাটায় ঝুকবে,
সেটাই স্বাভাবিক। তাহলে যারা বিশ্বব্যাপী অনলাইনে কেনাবেচায় করে, তারা তো চাইবেই যেন মানুষ ঘরের মধ্যে বন্দি হয়ে থাকে, কারণ মানুষ যত বন্দি থাকবে, তাদের ব্যবসা তত বেশি হবে। এজন্য তারা যদি মিডিয়া, হু বা পরিবশবাদীদের কিছু উপরি দিয়ে বলে, তারা যেন মানুষকে ভয় দেখায় ঘরে বন্দি রাখে, “ঘরে থাকুন, নিরাপদ থাকুন” শ্লোগান শিখিয়ে দেয় তবে মন্দ কি ? ১০ টাকা ইনভেস্ট করলে ১০০ টাকা লাভ আসবে।
কথা হচ্ছে- করোনা দমনে এখন পর্যন্ত লকডাউন বা সোশ্যাল ডিসটেন্সিং এর কার্যকরীতা প্রমাণিত নয়। বরং তার সাইড ইফেক্ট নিশ্চিত। কোন ভ্যাকসিন বাজারে ছাড়ার আগে তা ইফিকেসি ও সেফটি পরীক্ষা করে ছাড়া হয়। কিন্তু লকডাউন বা সোশ্যাল ডিসটেন্সিং এর ইফিকেসি ও সেফটি নিশ্চিত না করেই কেন তা জোর করে জনগণের উপর চাপিয়ে দেয়া হলো ? এটা কি এমনি এমনি হয়েছে ? নাকি জেফ বেজোসের দেয়া উপরি টাকার গুনে হয়েছে ???
উল্লেখ্য, করোনার দমনে সোশ্যাল ডিসটেন্সিং বা লকডাউন জনগণের উপর জোর করে চাপিয়ে দেয়ার মূলে ছিলো ডেমোক্যাটিক ব্লকভূক্ত পরিবেশবাদীরা। আর এই পরিবেশবাদীদের গত ফেব্রুয়ারীতে ১০ বিলিয়ন ডলার দেয় জেফ বেজোস। (https://n.pr/2ZnwXwQ)
বিষয়টি তো খুব স্বাভাবিক। একটি দল অতি-জনদরদি হয়ে আপনাকে স্যোশাল ডিসটেন্সিং শিখাবে, আপনাকে জীবনের ভয় দেখিয়ে ঘরে বন্দি থাকতে বলবে । দোকানপাট ঠিকমত খুলতে দিবে না। প্রয়োজনে ঘরের বাইরে বের হলে ৬ ফুট দূরে দাড়াতে বলবে। আপনি বলবেন, এত ঝামেলা করে লাভ কি বাপু? অনলাইনে অর্ডার দিয়ে দেই। ব্যস তাহলেই তাদের লাভ।
২০২৬ সালের মধ্যে নাকি অ্যামাজনের মালিক জেফ বেজোস প্রথম ট্রিলিয়নিয়ার হবে (৮০ লক্ষ কোটি টাকার মালিক)। এরজন্য যদি পৃথিবীর কয়েক কোটি লোককে দুর্ভিক্ষে মরতে হয় কিংবা ২০-৩০ কোটি স্বচ্ছল লোককে ভিক্ষুক হতে হয়, তবে এসব ধনীদের কিছুই আসে যায় না। কারণ সাধারণ মানুষকে এরা মানুষই মনে করে না, ছাগল-ভেড়া মনে করে। তাই কিছু ছাগল-ভেড়া মরলে ক্ষতি কি ??