Friday, October 19, 2018

বাংলাদেশ নদীর পানির জন্য ভারতের উপর নির্ভরশীল কিন্তু নৌপথের দিক থেকে বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীল ভারত


কিন্তু উল্টাভাবে যদি চিন্তা করেন, তবে ভারতের নৌপথগুলো সমুদ্র সংযোগ করতে ভারত বাংলাদেশের উপর নির্ভরশীল।
ম্যাপের দিকে ভালোভাবে খেয়াল করুন, ভারতের ভেতর দিয়ে আসা বড় নদীগুলো বাংলাদেশ ছেদ করে সমুদ্রপথে মিশেছে। 

তারমানে আন্তর্জাতিক ব্যবসা বাণিজ্যের জন্য সমুদ্রপথে যদি ভারত কোন মালামাল আনা-নেয়া করতে চায় এবং সেটা যদি স্বল্পমূল্যের নৌপথ ব্যবহার করে ভারতের ভেতর ছড়িয়ে দিতে চায়, তবে বাংলাদেশ ভিন্ন ভারতের আর কোন উপায় নাই।
তবে, ছবিতে দেখতে পাচ্ছেন, বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেষে হুগলি নদীও ভারতের ভেতর দিয়ে বঙ্গপোসাগরে মিশেছে। যেখানে অবস্থিত কলকাতা বন্দর। কিন্তু কলকাতা বন্দরের বর্তমানে অনেক সমস্যা তৈরী হয়েছে, বিশেষ করে হুগলি নদীতে অসংখ্য নদীবাক তৈরী হয়েছে যেগুলো বড় বড় জাহাজ চলাচলের জন্য অসুবিধাজনক। মূল কথা হলো, গঙ্গা নদীর মূল অংশযুক্ত হয়েছে পদ্মার সাথে, হুগলি নদী সে হিসেবে শাখা নদী। তাই সমুদ্র পর্যন্ত পৌছাতে বাংলাদেশের ভেতর নদীপথের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে ভারতকে।

এখানে একটু আন্তর্জাতিক রাজনীতি বুঝার দরকার আছে।
চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আমেরিকা চাচ্ছে চীনের এই প্রভাব দমন করতে। চীনের প্রভাব বিস্তারের মূল হাতিয়ার হচ্ছে ব্যবসা । চীন তার বিপুল জনগোষ্ঠীকে ব্যবহার করে অতি সস্তায় পণ্য উদপাদন করে বিশ্বজুড়ে সরবরাহ করছে, এতে সারাবিশ্ব চীনা পণ্যের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চীনাদের এই প্রভার হ্রাস করতে বেছে নিয়েছে ভারতকে। ভারতেরও রয়েছে শতকোটি জনসংখ্যা, রয়েছে সন্তায় শ্রম। ইতিমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতে প্রচুর পরিমাণে ইনভেস্ট করছে, তৈরী হচ্ছে অসংখ্য ইপিজেড। এর মাধ্যমে পন্য উৎপাদন ও সরবরাহে চীনের বিকল্প হিসেবে খুব শিঘ্রই ভারতকে দাড় করাতে চাইছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ব্যবসা বাণিজ্যের পরিবহন সহজ করতে সমুদ্র বন্দর ও নদী পথ ব্যবহারের বিকল্প নাই। সেদিক বিবেচনা করলে চীনের প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে ভারতকে দাড় হতে বাংলাদেশের সহযোগীতা চাই ভারতের।

আপনারা নিশ্চয়ই জানেন, গত সপ্তাহে বাংলাদেশের মন্ত্রীসভায় একটি চূক্তির খসড়া অনুমোদন হয়েছে, যে চূক্তি অনুসারে চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করে পণ্য আমদানির সুযোগ পাচ্ছে ভারত।(https://bit.ly/2pvVywb)
শুধু তাই নয়, বাংলাদেশের নৌপথ ব্যবহারের বুদ্ধি ভারতের অনেক আগে থেকে। এবং কয়েক বছর আগেই সে রাস্তা পরিষ্কার করতে বাংলাদেশের সাথে ভারত একটি চূক্তি করেছে ৪৭০ কিলোমিটার নৌপথ ড্রেজিং করার জন্য, যার ৮০% খরচ দেবে ভারত এবং ২০% খরচ দেবে বাংলাদেশ। (https://bit.ly/2yMQGt2)

একটি কথা বলতেই হয়, বর্তমানে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে তৈরীকৃত উত্তেজনার মূল কারণ হলো নদী। ভারত বাংলাদেশের সাথে অভিন্ন নদীর ৫৪টি মধ্যে ৪৭টি বাধ দিয়েছে (https://bit.ly/2zqb0Q0)। এতে নদীগুলো শুকিয়ে যাচ্ছে। নদী বাচাও আন্দোলনের ভাস্য অনুযায়ী আজ থেকে ৪৭ বছর আগে বাংলাদেশের নদীর সংখ্যা ছিলো ১৩০০। কিন্তু বর্তমানে কাগজে কলমে নদী আছে মাত্র ৩০০, যার বেশিরভাগের অবস্থা সংকটাপূর্ণ। (https://bit.ly/2QVah0i)
আমরা শুনেছি, বিজেপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছে, আওয়ামীলীগ আর ভারতের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক স্বর্ণযুগে পৌছেছে (https://bit.ly/2PZq1xO)। কিন্তু তারপরও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই তিস্তার পানি নিয়ে কোন চূক্তি করতে পারেনি এবং আক্ষেপ করেছে।(https://bit.ly/2pxw5mc)

তাহলে ভারত যখন পানি ছাড়তে বিন্দুমাত্র রাজী হচ্ছে না, তখন পানির বাকিঅংশটুকু ব্যবহার নিয়ে কেন বাংলাদেশ দরকষাকষিতে যাচ্ছে না ? তারা যদি পানি না ছাড়ে, তবে আমরা তাদের সমুদ্র বন্দর ব্যবহার করতে দেবো কেন ? আমরা কেন বলছি না, “আগে পানি ছাড়ো, তারপর সমুদ্র বন্দর ব্যবহার ।” কিন্তু সেটা না করে কোন যুক্তিতে আওয়ামীলীগ সরকার মংলা ও চট্টগ্রাম ব্যবহারের অনুমুতি দিয়ে দিলো ?

আমরা জানি, সারা বিশ্বজুড়ে সবাই সবার ভৌগলিক অবস্থান নিয়ে প্রতিপক্ষ থেকে অধিকার বা সুবিধা আদায় করে নেয়। যেমন, তুরষ্কের আছে ‘বসফরাস প্রণালী’। এর মধ্য দিয়ে দিয়ে ইউরোপ-এশিয়ার মধ্য দিয়ে সংযোগ স্থাপন হয়েছে। ইউরোপ যদি তুরষ্কের সাথে বিরোধ হয়, তবে তুরষ্ক বসফরাস প্রণালী বন্ধ করে তার দাবী আদায় করে নেয়। একইভাবে ‘হরমুজ প্রণালী’ দিয়ে আমেরিকা-সৌদির তেল বাণিজ্য চাপের মুখে রাখে ইরান। এর কারণে ইরানের বিরুদ্ধে একেবারে এক্সট্রিম পর্যায়ে যেতে পারে না আমেরিকা। তারা যখন তাদের ভৌগলিক অবস্থান দিয়ে প্রতিপক্ষ থেকে সুবিধা আদায় করে নিতে পারে, তাহলে বাংলাদেশ কেন সমুদ্র বন্দর সুবিধা দিয়ে নদীর পানি আদায় করে নিতে পারবে না ? কেন পানি না আদায় করে মংলা-চট্টগ্রাম বন্দরের সুবিধা ছেড়ে দেয়া হবে ??

আমার মনে হয়, সরকারের উচিত বিষয়টির দিকে কঠোর দৃষ্টিপাত দেয়া। আর জনগণেরও উচিত, তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলা, যেন শতভাগ পানি আদায় করে তারপর বন্দর ব্যবহার করতে দেয়া হয় এবং অবশ্যই সেটা আন্তর্জাতিক শর্ত ও খরচ মেনে।


===============================
আমার মূল পেইজ- Noyon chatterjee 5
(https://www.facebook.com/noyonchatterjee5)
পেইজ কোড- 249163178818686
------------------------------------------------------------------
আমার ব্যাকআপ পেইজ- Noyon Chatterjee 6
(https://www.facebook.com/Noyon-Chatterjee-6-202647270140320/)
------------------------------------------------------------------------------------------------

0 comments:

Post a Comment