Thursday, June 18, 2020

যারা করোনায় মারা যাচ্ছে, তাদের প্রকৃত অবস্থা প্রকাশ করা জরুরী

এখানে দুইটা চিত্র আছে।
বামপাশের প্রথম চিত্রটি ইতালির। ইতালিতে যারা করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে, তারা অন্য কোন রোগে আক্রান্ত ছিলো কি না, এটার একটা চিত্র তারা গ্রাফ করেছে। দেখা যাচ্ছে, করোনাতে ইতালিতে যারা মারা গেছে, তাদের ৪৮.৫% কমপক্ষে ৩টি রোগে আক্রান্ত ছিলো, ২৫.৬% ছিলো ২টি রোগে আক্রান্ত, ২৫.১% ছিলো ১টি রোগে আক্রান্ত এবং ০.৮% লোকের অন্য রোগ ছিলো না, অর্থাৎ সুস্থ ছিলো।
২য় ছবিটা জার্মানির, ১৯শে মার্চ ফিনানসিয়াল টাইমসে আসছে। সেখানে তারা বলছে, তাদের ডেথ (ঐ তারিখ পর্যন্ত) অন্য দেশ থেকে কম।
এই দুইটা ছবির মধ্যে কিছু শেখার আছে আমাদের জন্য।

প্রথম কথা হলো- ইতালি যে কাজটা করেছে, যারা করোনায় মারা যাচ্ছে, তারা আর কতগুলো ক্রোনিক রোগে (কিডনী, লিভার, হার্ট) আক্রান্ত ছিলো সেটার চার্ট করেছে। বাংলাদেশে মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা শুরুতে যখন ব্রিফিং করতেন, তখন কিন্তু বলতেন, আজকে অমুক অমুক মারা গেছে, তাদের হার্টে অমুক সমস্যা ছিলো, কিডনী সমস্যা ছিলো, স্ট্রোক ছিলো ইত্যাদি। কিন্তু হঠাৎ করে তিনি কিন্তু এ কথাগুলো বলতেছেন না। বয়স বা এলাকার দিকে বেশি জোড় দিচ্ছেন, কিন্তু তার এ তথ্যে লুকোচুরিতে কিন্তু মূল সমস্যাটা লুকিয়ে আতঙ্কটা বেশি ছড়াচ্ছে। কারণ করোনা আসলে কাদের জন্য ভয়ঙ্কর, এটা যদি আমরা চিহ্নিত না করে ঢালাওভাবে প্রচার করি, তবে কিন্তু সঠিক সেইফটি নেয়া সম্ভব না। এবং এটা ডাক্তারি বিদ্যা না হয়ে বরং রাজনৈতিক বিদ্যা হয়ে যাবে।

এবার আসি জার্মানির চার্টের দিকে। জার্মানির মৃত্যুহার তুলনামূলক কম থাকার একটা কারণ হলো, কোন রোগী কোন কারণ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে এবং সেই রোগী যদি মারা যায়, তবে তার মৃত্যুটা ঐ রোগ হিসেবে কাউন্ট করেছে তারা। এতে তাদের হিসেবটা তুলনামূলক একুরেট আসছে এবং মৃত্যুহার কমে গেছে। যেমন- যেমন বাংলাদেশে কোন জেলায় সম্ভবত এক মহিলা স্ট্রোক করে মারা গেছে। কিন্তু তার শরীরে করোনা ভাইরাস পাওয়া গেছে। এক্ষেত্রে তার মৃত্যুর কারণ দেখানো হয়েচে করোনা ভাইরাস। কিন্তু জার্মানি সেক্ষেত্রে স্ট্রোকই করেছে, করোনা ভাইরাস করেনি।
আরো সহজ করে বুঝতে হলে- ধরে নিলাম, একজন করোনা ভাইরাস বাহী রোগী রোড এক্সিডেন্ট করে মারা গেলো, এখন তার মৃত্যু কি হিসেবে কাউন্ট করবেন ? করোনা হিসেবে নাকি রোড এক্সিডেন্ট হিসেবে। জার্মানি সেই কাজটাই করেছে, তাই মৃত্যুহার কম এসেছে।

কথা হচ্ছে, এই যে বাংলাদেশে ২৭ জন মৃত্যু হলো, এরা কি সম্পূর্ণ সুস্থ মানুষ ছিলো ?
এদের কারো শরীরের কি অন্য ভয়ঙ্কর এক বা একাধিক রোগ ছিলো না ?
এটা জানা অব্যশই জরুরী।
এ তথ্য গোপন করা কখনই ঠিক নয়। এটা জন সম্মুক্ষে প্রকাশ করা উচিত।
কারণ করোনা ইনফ্লুয়েঞ্জা লাইক ভাইরাস, এটা ধিরে ধিরে পুরো দেশেই ছড়াবে। অনেকের শরীরেই করোনা ভাইরাস থাকবে। আবার বাংলাদেশে দৈনিক দুই-আড়াই হাজার লোক মারা যায়, শতাধিক মারা যায় শ্বাসকষ্ট বা সিওপিডিতে, অ্যাজমায় মারা যায় অনেকে। হার্ট অ্যাটাক-স্ট্রোক, ক্যান্সারে মারা অনেকে। কথা হইলো কেউ করোনা ভাইরাসবাহী হইলেই কি তার মৃত্যুকে করোনার কারণে মৃত্যু হিসেবে কাউন্ট করা হবে??

যারা করোনায় মারা যাচ্ছে, তাদের প্রকৃত বিষয়টি যদি প্রকাশ না করা হয়, তবে আসলে করোনা জিনিসটা কি, কতটুকু ভয়ঙ্কর এবং সে হিসেবে আমাদের চিকিৎসা বা সতর্কতা কেমন হওয়া উচিত সেটা সম্পূর্ণ অধরাই থেকে যাবে। তথ্য গোপন করে মূল ঘটনা আলো আধারে রেখে যদি শুধু সংখ্যা প্রকাশ করা হয়, তখন সন্দেহ তৈরী হবে, আসলেই কি আমরা করোনা দমন চাচ্ছি, নাকি এর মাধ্যমে অন্য কোন এজেন্ডা বাস্তবায়ন চাচ্ছি।

0 comments:

Post a Comment