Thursday, June 18, 2020

স্প্যানিশ ফ্লু মহামারীর সময় ব্যবহার করা প্ল্যাজমা থেরাপী

অনেকেই কোভিড-১৯ এর জন্য উদাহরণ হিসেবে ১৯১৮ সালে ‘স্প্যানিশ ফ্লু’ মহামারীর উদাহরণ নিয়ে আসে। কিন্তু একটা বিষয় এড়িয়ে যায়,
স্প্যানিশ ফ্লু মহামারীর সময় ব্যবহার করা প্ল্যাজমা থেরাপীর বিষয়টি। ঐ সময় প্ল্যাজমা থেরাপীর ব্যবহার করে মৃত্যুর হার অনেকটাই কমিয়ে আনা সম্ভব হয়েছিলো। শুধু ১৯১৮ এর স্প্যানিশ ফ্লু নয়, ১৯২১ এ ডিপথেরীয়া মহামারী, ১৯৩০ এর হাম মহামারী, ১৯৫০ এ কোরিয়ান যুদ্ধের সময় হান্টা ভাইরাসের বিরুদ্ধে প্ল্যাজমা থেরাপীর সফল ব্যবহার হয়। (https://bit.ly/3bj4hYX)

হঠাৎ কোন একটি অসুখ ছড়িয়ে পড়লে তার ওষুধ বা ভ্যাকসিন আবিষ্কার সময় সাপেক্ষ ব্যাপার। কিন্তু মানুষের শরীরের যে প্রাকৃতিক উপায়ে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা জন্মাচ্ছে, তার ব্যবহার হলো ঐ রোগ দমনের সবচেয়ে সহজ উপায়। এ কারণে বিভিন্ন মহামারীর সময় এই পদ্ধতি সবক্ষেত্রে সফল ভাবে ব্যবহার হয়।

কিন্তু সমস্যা হলো, কেউ বিষয়টি নিয়ে পরিস্কার কোন বিবৃতি দিতে রাজী নয়। কারণ কোন একটি রোগ বিস্তৃতি লাভ করলে বিভিন্ন ওষুধ, ভ্যাকসিন বা ভেনটিলটর কোম্পানির বড় ব্যবসা করার সুযোগ তৈরী হয়। এক্ষেত্রে এন্টিভাইরাল ড্রাগ, ভ্যাকসিন বা ভেনটিলরের বিষয়টি করপোরেট পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে ব্যাপক প্রচার প্রসার লাভ করে। কিন্তু প্লাজমা থেরাপির বিষয়টি ব্যক্তি পর্যায়ে হওয়ায় তাতে কোম্পানিগুলোর তেমন লাভ করার সুযোগ পাবে না, এই কারণে প্লাজমা থেরাপির বিষয়টিও পৃষ্ঠপোষকতা অভাবে প্রচার পায় না। অথচ প্ল্যাজমা থেরাপী ব্লাড ডোনেশনের মত সহজ বিষয়, জটিল কোন বিষয় না। এবং ক্রিটিকাল রোগীরাই এতে সুস্থতা লাভ করে।

লক্ষ্য করবেন, এই যে সোশ্যাল ডিসটেন্স, লকডাউন এগুলো কিন্তু কোন সমাধান নয়। এগুলো মানুষকে আটকে রাখা, বুঝিয়ে শুনিয়ে রাখা যে যতদিন ঐ ওষুধ কোম্পানিগুলো ভ্যাকসিন বা এন্টি ভাইরাল ড্রাগ বের না হয়, ততদিন অসুখ থেকে লুকিয়ে থাকুন। এটা করপোরেট ধান্ধাবাজি ছাড়া কিছু নয়। কারণ মানুষ সামাজিক জীব, সমাজ ছাড়া সে বাচতে পারে না। কিন্তু সোশ্যাল ডিসটেন্স মানে হলো সমাজকে বর্জন করা, সমাজকে ভেঙ্গে ফেলা। এমনকি বলা হচ্ছে তুমি তোমার ঘরে পরিবারের অন্য সদস্যদের থেকে দূরে থাকো। তাদের দেয়া আজগুবি থিউরীর কারনে মানুষ আজকে সমাজবিহীন হয়ে যাচ্ছে, পরিবারবিহীন হয়ে যাচ্ছে। সবাই স্বার্থপর হয়ে উঠছে, সমাজে তৈরী হচ্ছে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি।

তারা শুধু নিজেদের স্বার্থে এ ধরনের একটি অসম্ভব বিষয় শত শত কোটি মানুষের উপর জোর করে চাপিয়ে দিচ্ছে, কিন্তু তাদের কথা শুনে যে বহু মানুষের প্রাণ যাচ্ছে এবং বহুর প্রাণ ওষ্ঠাগত সে খেয়াল তাদের নেই। অথচ ফ্লু লাইক পেনডেমিক এর ক্ষেত্রে প্ল্যাজমা থেরাপীর ব্যবহার ১০০ বছর পুরাতন। কিন্তু সেই সিস্টেমটার কথা তারা তুলতে চায় না, কারণ সেখানে তাদের ব্যবসা নেই।

এখন যেটা করা যায়-
১) বাংলাদেশে টেস্টের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে সাথে করোনা রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে। এখান থেকে একটি বিষয় অনুমান করা যায়, যারা করোনা পজিটিভ হয়ে ধরা পড়ছে, তাদের ছাড়াও আরো করোনা রোগী আছে, যাদের হয়ত লক্ষণ প্রকাশ পাচ্ছে না, বা মৃদু লক্ষণ আছে। করোনার ক্ষেত্রে ৭০-৮০% রোগীর লক্ষণ প্রকাশ পায় না বা চিকিৎসারও দরকার হয় না। তারা হয়ত টেস্ট করাচ্ছে না। এদের খুজে বের করতে হবে।
২) চলমান পিসিআর টেস্টের পাশাপাশি কোভিড-১৯ এর স্ট্রেইন সেনসেটিভ এন্টিবডি টেস্ট করতে হবে। পিসিআর টেস্ট জটিল ও সময় সাপেক্ষ প্রক্রিয়া, কিন্তু ‘কোভিড-১৯ এর স্ট্রেইন সেনসেটিভ এন্টিবডি টেস্ট’ রক্ত পরীক্ষা করে সহজেই কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পাওয়া সম্ভব।
৩) যাদের শরীরে কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে এন্টিবডি পাওয়া যাবে, তাদের ব্লাড সংগ্রহ করে রাখা এবং প্রয়োজনীয়ভাবে ব্যবহার করা।
৪) তবে এক্ষেত্রে যেটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের করোনা নিয়ে যে আলগা ভীতি তৈরী হয়েছে, সেটা দূর করতে হবে। কারণ করোনা হওয়া একটা মানসম্মানের ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। কেউ করোনা হয়ে সেরে গেছে, সে হয়ত তা প্রকাশ করতে চাইবে না। কারণ সে এটা মানহানীর বিষয় হিসেবে দেখবে। প্রয়োজনে রক্তদানের জন্য অর্থ দিতে হবে। অর্থের কথা শুনলে অনেকেই অনেকেই হয়ত টেস্ট করাবে।
৫) করোনা হলে যাদের ক্রিটিকাল সিচুয়েশন হওয়ার সম্ভবনা আছে, যেমন-বৃদ্ধ, অসুস্থদের ঘরে সাবধানে রাখতে হবে। অপরদিকে তরুণ, যুবক বা সুস্থদের চলাচল স্বাভাবিক করে দিতে হবে। কারণ তাদের শরীর যদি ভাইরাসের সংস্পর্ষে নাই আসে, তবে শরীরে এন্টিবডি তৈরী হবে কিভাবে ? অর্থাৎ রোগীর তুলনায় এন্টিবডি সমৃদ্ধ রক্ত এভেইএবল হতে হবে। আপনি যদি তরুণ-যুবক-সুস্থদের ঘরে আটকে রাখেন, তবে প্রয়োজনীয় রক্ত সংকট হবে। বাংলাদেশের যেহেতু তরুণদের সংখ্যা অনেক বেশি এবং বৃদ্ধদের সংখ্যা কম, তাই পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে দিলেই পর্যাপ্ত রক্তও পাওয়া সম্ভব।

0 comments:

Post a Comment