Thursday, June 18, 2020

করোনা নিয়ে অতি আতঙ্ক ও হাতুড়ে ডাক্তারি ছড়িয়ে লক্ষ লক্ষ রোগীকে বৈষম্যের দিকে ঠেলে দেয়া হচ্ছে

ফেনীর একটি খবর আজকে ভাইরাল হয়েছে। খবরটি হলো-
“ফেনীর সোনাগাজীতে করোনাভাইরাস আক্রান্তের উপসর্গ জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বদ্ধ ঘরে মৃত্যু হওয়া সাহাব উদ্দিনের (৫৫) মৃত্যুর পূর্বে বীভৎস চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। মৃত্যুর আগে পরিবারের লোকজন তাঁকে ঘরে একা রেখে বাইরে থেকে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে রাখে। দেওয়া হয়নি দুপুরে খাবার। মৃত্যুর সময় পানি চেয়েও পায়নি। মৃত্যুর পরও কাছে আসেননি স্ত্রী, ছেলে–মেয়ে ও জামাতাসহ কোন স্বজন। মৃত্যুর পর পায়নি স্থানীয় মসজিদের খাটিয়া, কেউ দেয়নি কবর খোঁড়ার কোদালও।”
(https://bit.ly/2XTiJBl)

করোনা ভাইরাসের নামে আমাদের যে সব হাতুড়ে ডাক্তারি চাপিয়ে দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে অণ্যতম যেটি বার বার প্রচার করা হয়েছে, “কারো লক্ষণ পাওয়ার সাথে সাথে তাকে পরিবার থেকে আলাদা করে দেন, কেউ যেন তার কাছে না আসে।” মনে হচ্ছে সে যে বিরাট অপরাধ করে ফেলেছে, তার বোধ হয় সেবা-সুশ্রুষার দরকার নেই।

অথচ মানুষ অসুস্থ হইলে- তার সেবা করা সব থেকে বেশি জরুরী। সেবা ও মানসিক প্রশান্তি দিয়ে একটা মানুষকে অনেকাংশে সুস্থ করে ফেলা সম্ভব। কিন্তু সেটা না করে, একটা মানুষ অসুস্থ হওয়া মাত্র যদি তার সাথে খারাপ ব্যবহার করা হয়, তাকে এক ঘরে বন্দি করে রাখা হয়, তার বাড়িতে পুলিশ এসে লকডাউন করে ফেলে, তাদের বাড়িশুদ্ধু মানুষকে খাদ্য-পানীয় ব্যতিত বন্দি করে রাখে, বাড়িওয়ালা বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্য হুমকি দেয়, গ্রামবাসী বাড়ির মধ্যে ইটপাটকেল ছুড়ে, তবে ঐ রোগীর মানসিক অবস্থা কি হবে একবার চিন্তা করেছেন ?
ফেনীর ঘটনা শুধু একটা নয়, আমার জানা মতে করোনা রোগী বা তার সাসপেক্টের সাথে এমন বহু নির্মম ঘটনা ঘটেছে, শুধু পরিবার থেকে নয়, হাসপাতাল থেকে, এলাকাবাসী থেকে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী থেকে, আত্মীয়-স্বজন-বন্ধুবান্ধব থেকে অহরহ ঘটেছে এমন ঘটনা। রাস্তা/বাসা/হাসপাতালে অনেক লোক অসুস্থ হয়ে ছটপট করতে করতে মারা গেছে, কিন্তু কেউ তার সাহায্যে বিন্দুমাত্র এগিয়ে আসেনি।

ছোটবেলায় প্রবাদ পড়েছিলাম- পাপকে ঘৃণা করো, পাপীকে নয়।
তেমনি রোগের বিরুদ্ধচারণ আমাদের কাজ হবে, রোগীর বিরুদ্ধে অবশ্যই নয়।
কিন্তু আমরা তো রোগের নামে রোগীর বিরুদ্ধচারণ করে চরম অমানবিক কাজ করে ফেলেছি।

কিছুদিন আগে গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতালে আগুন লেগে ৫ জন করোনা রোগী মারা গিয়েছিলো। কথা হচ্ছে, আগুন লাগার পর সবাই বের হতে পারলেও করোনা রোগীদের কেন বের করা হলো না ? এরজন্য কি শুধু আগুন দায়ী? নাকি করোনা রোগী বলে ভয়ে কেউ তাদের সাহায্যে যায়নি, যদি তার করোনা হয়ে যায়, এই ভয়ে। আর তাতেই মৃত্যু হয়েছে রোগীদের ?

অনেক আগে এক পোস্টে-
ইউরোপ-আমেরিকায় করোনায় উচ্চমৃত্যুর পেছনে আমি একটি অন্যতম কারণ উল্লেখ করেছিলাম, সেটা হলো বৈষম্য-অবহেলা। ইউরোপে দেখা গিয়েছে- মৃত্যুর একটি বড় অংশ হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমে। সন্তানরা বাবা-মাকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়ে আসে, কিন্তু করোনা আক্রান্ত হওয়ার পর সেখান থেকে সেবকরা ভয়ে পালিয়ে যায়। এতে বিনা দেখাশোনায় মারা অনেক বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। এর জন্য কিন্তু করোনা ভাইরাস দায়ী নয়, যদি ঐ বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের ঠিক মত আদরযত্ন করা হতো, তবে হয়ত অনেকেই বাচানো সম্ভব ছিলো। কিন্ত তাদের অযন্ত অবহেলায় মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া হয়েছে। আবার আমেরিকায় মৃতের একটা বড় অংশ হলো কৃষ্ণাঙ্গ। এক নার্সের দাবী হলো, হাসপাতালগুলোতে কালোদের প্রতি বৈষম্য করা হয়েছিলো, যার কারণে কালোদের মধ্যে মৃত্যুহার অনেক বেড়ে যায়।

এজন্য অনেক আগে এক পোস্টে আমি বলেছিলাম-
করোনার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভুল হলো করোনাকে পাত্তা দেয়। করোনাকে যদি পাত্তা না দেয়া হলো, এবং স্বাভাবিক সব রোগের মত সব হাসপাতালে এন্টিবডি টেস্ট করে স্বাভাবিক করোনার চিকিৎসা করা যেতো, চিকিৎসা সিস্টেম না ভাঙ্গা হতো, তবে মৃত্যু বা হয়রানির সংখ্যা অনেক হ্রাস পেতো। কারণ তখন করোনা রোগীরাও চিকিৎসা পেতো আবার অন্য রোগীরাও চিকিৎসাহীন থাকতো না। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত রোগীরা আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে হাসপাতালে যাচ্ছে না, বাসায় চিকিৎসা নিতে গিয়ে ক্রিটিকাল সিচুয়েশনে চলে যাচ্ছে, অনেকে মারা যাচ্ছে। লকডাউনকালে প্রসূতি নারীদের হাসপাতালে গমন অর্ধেক নেমে যাওয়া, এর সবচেয়ে বড় উদাহরণ। অনেক হাসপাতালে করোনা টেস্ট ছাড়া ভর্তি নিচ্ছে না, এতে শুধু টেস্ট করতে গিয়ে ২-৪ দিন ঘুরে অর্ধমৃত-মৃত হয়ে পড়ছে অনেকে।

অনেকে হয়ত বলবে, লকডাউন, সোশ্যাল ডিসটেন্সিং বা আইসোলেশন করা হয়েছিলো হাসপাতালে আগমনের কার্ভকে খাটো করা জন্য।
কিন্তু ভাই ! আপনার হাসপাতালেই তো চিকিৎসা নেই। করোনা রোগীদের বক্তব্য হাসপাতালে ঠিকমত ডাক্তাররা যায় না, দিনে এক বার যায়। গেলেও ভয়ে আড়াল থেকে কথা বলে। নার্সরাও ঠিক মত তদারকি করে না। আপনি কার্ভকে খাটো করলেন (যদিও এর কোন প্রুভ নেই), কিন্তু হাসপাতালে করোনার ট্রিটমেন্টই দিতে পারলেন না, তাহলে এই কার্ভ খাটো করার লাভ কি হলো ? আবার অন্য রোগীদের চিকিৎসা শিকেয় তুললেন, ভোগান্তি মৃত্যু বাড়িয়ে দিলেন, তবে এই কার্ভ খাটোর করার কি গুরুত্ব থাকতে পারে ? একবার বলুন।

কথা হচ্ছে-
স্বাভাবিক মানুষের প্রতি মানবিক ব্যবহার না করলে আমরা বলি অমানবিক। কিন্তু একজন রোগীর প্রতি যখন এমন জঘন্য আচরণ করা হয়, তখন তাকে কি বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়, তা আমার জানা নাই। আজকে আমেরিকায় একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে শেতাঙ্গরা বৈষম্য করে মেরে ফেলেছে বলে কত তোলপাড় হচ্ছে, তা নিয়ে কত মানবিকতার বুলি আওড়াচ্ছে মিডিয়া ও সুশীল সমাজ। কিন্তু সেই মিডিয়া ও সুশীল সমাজ যখন করোনা নিয়ে অতি আতঙ্ক ও হাতুড়ে ডাক্তারি ছড়িয়ে লক্ষ লক্ষ রোগীকে বৈষম্যের দিকে ঠেলে দেয়, মৃত্যুর মুখে পতিত করে, সেটা নিয়ে কেন কেউ কথা বলে না ? কেন সেটা নিয়ে কেউ আন্দোলন করে, কেন সেই জঘন্য অমানবিকতাকারীদের বিচার চায় না, সেটা আমি জানতে চাই।


0 comments:

Post a Comment