এটা হচ্ছে লকডাউনের সুফল। আপনি যাতায়াত বন্ধ করে রাখবেন, মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরী করে রাখবেন, ফলে স্বাভাবিকভাবে এর প্রভাব পড়বে স্বাস্থ্যসেবার উপর। মায়েরা হাসপাতালে যেতে চাইবেন, কিন্তু পারবেন না। ফলে তৈরী হবে নানান সংকট।
খবরে লক্ষ্য করুণ- ঢাকা মেডিকেলে প্রসবের সংখ্যা কমেছে অর্ধেকের মত। এই হিসেব যদি সারা বাংলাদেশে করি তখন কি হবে ?
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রনালয়ের হিসেব মতে বাংলাদেশে এখন প্রতি মিনিটে জন্ম নেয় ৯ জন শিশু। তাহলে প্রতি দিন জন্ম নেয়া শিশুর পরিমাণ প্রায় ১৩ হাজারের মত। (https://bit.ly/3dnbF6o)
তাহলে ৬৫ দিনের লকডাউনের বাংলাদেশে জন্ম নেয়ার কথা প্রায় সাড়ে ৮ লক্ষ শিশু।
এর মধ্যে ৫০% যদি লকডাউনে বাধাগ্রস্থ হয়ে বাসায় প্রসবের চেষ্টা করেন, তবে তার পরিমাণ দাড়ায় প্রায় ৪ লক্ষ ২৫ হাজার। এর মধ্যে যদি মাত্র ৫% মা বা শিশু মারা যায়, তবে এর পরিমাণ হবে প্রায় ২১ হাজার। আর যদি ১০% মা বা শিশু যদি জটিল শারীরিক সমস্যায় আক্রান্ত হোন, তবে এর পরিমাণ ৪২ হাজারের মত। বাসায় চেষ্টা করলে ৫% মা-শিশুর মৃত্যু বা ১০% জটিল সমস্যায় আক্রান্ত হওয়া খুব স্বাভাবিক, বরং হিসেব এর থেকেও বেশি হতে পারে।
শিশু জন্মদানের সময় মা যদি সঠিক ট্রিটমেন্ট না পায়, লকডাউন দিয়ে যদি তাকে নানান বাধাগ্রস্ত করা হয়, তবে মা ও শিশুমৃত্যুর মত চিরন্তন সত্যকে আমরা এড়িয়ে যেতে পারবো না। কিন্তু অতি দুঃখের বিষয়, আমরা বাস্তবতা এড়িয়ে থেকে এখন মরিচিকার পেছনে ছুটছি। ৬৫ দিনে করোনায় কত লোকের মৃত্যু হয়েছে, সেটা নিয়ে অনেক মিডিয়া সরব হলেও লকডাউনের কারণে কত মা ও শিশুর কিংবা সাধারণ মানুষ চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করলো তার কোন হিসেব বা পরিসংখ্যা নেই। ব্রিটেনের একটা হিসেব পেয়েছিলাম, তারা একটি পরিসংখ্যানে দেখিয়েছিলো, লকডাউন বা করোনাভীতির কারণে মানুষ হাসপাতালে যাচ্ছে না, এতে সপ্তাহে মৃত্যুর সংখ্যা ৩ হাজারের মত। (https://archive.is/2eKCW)
আবার
আজকে মিডিয়ার খবরে দেখলাম, যার শিরোনাম -
অফিস খোলার প্রথম দিনে ৪০ জনের মৃত্যু।
(https://bit.ly/3cjrJEX)
লক্ষ্য করুণ- খবরে শিরোনাম দেখে মনে হচ্ছে, এই ৪০ জন মনে হয় অফিস করতে গিয়ে মারা গিয়েছিলো।
অথচ বাস্তবতার ভিত্তিকে শিরোনাম হওয়া উচিত ছিলো-
“৬৫ দিনের লকডাউনে ঘরে বসে থেকে ইমিউন সিস্টেম ড্রপ, মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৪০”
কিংবা
“আতঙ্ক বৃদ্ধি পাওয়ায় ইমিউন সিস্টেম ড্রপ, মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৪০”
(Stressful event অথবা Negative emotions মানবদেহের Immune System কে দুর্বল করে দেয়। ফলে সহজে শরীর ভাইরাস বা ব্যাক্টেরিয়া দিয়ে আক্রান্ত হয়)
কিংবা-
“বিভিন্ন ওষুধের ট্রায়ালে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা”।
এগুলো হলো বাস্তবতা ও বিজ্ঞান। কিন্তু কোনটির দিকে না যেয়ে, অফিস খোলাকে আজকের মৃতের সংখ্যা বৃদ্ধির জন্য দায়ী করা হলো। যদিও অফিস খোলার কারণে কিছু হয়েছে কি না, এটা বুঝতে বুঝতে আরো ১৫ থেকে ২১ দিন সময় দরকার। কিন্তু সেটা না করে, লকডাউনের দোষকে লকডাউন খোলার উপর চাপিয়ে দিয়ে চাইছে মিডিয়া।
আসলে আমরা সবাই নিজের স্বার্থের কথা ভেবে কথা বলি। কিন্তু নিজের স্বার্থে টান পড়লে ছাড় দিতে চাই না। গতমাসে দেখেছিলাম- কিছু প্রাইভেট কোম্পানির মানুষজনও লকডাউনের পক্ষে বলছে।
কিন্তু এ মাসে অনেকের বেতন-বোনাস বন্ধ হওয়াতে সবাই এখন লকডাউনের বিপক্ষে।
এখনও ফেসবুকে কেউ কেউ লকডাউনের পক্ষে বলছে।
এখন শুধু সরকারী চাকুরীজীবিদের বেতন অর্ধেক করে দেন, কিংবা ব্যাংকে যারা ডিপোজিট রেখে সুদ খায়, তাদের সুদের হার অর্ধেক করে দেন। অথবা মিডিয়া কর্মীদের বেতন অর্ধেক করে দেন। দেখবেন- লকডাউনের পক্ষের লোকগুলো নিমিষেই লকডাউনের বিপক্ষে বলা শুরু করবে।
তাই লকডাউনের পক্ষে যারা আছে, তারা অবাস্তবতাবাদী হোন কিংবা স্বার্থবাদী কিংবা দালালবাদী হোন, তারা সেগুলো ছেড়ে অবিলম্বে মূল ধারায় ফিরে আসবেন, এটাই কাম্য।
0 comments:
Post a Comment