Thursday, June 18, 2020

বাংলাদেশে করোনা সৃষ্টি অর্থনৈতিক মন্দায় কত লোক মারা যাবে ?

ভারতের সাবেক প্রধান পরিসংখ্যানবিদ প্রণব সেন বলেছে,
লক ডাউনের মধ্যে যদি পর্যাপ্ত খাবারের ব্যবস্থা না করা যায়, তবে খাদ্য দাঙ্গা অবশ্যাম্ভাবী। (https://bit.ly/2x0qoUT, https://bit.ly/2XcMY7o )

একটি গবেষণা বলছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে করোনা ভাইরাসের কারণে যদি ১ থেকে ২ লক্ষ লোক মারা যায়, তবে সব কিছু বন্ধ করার কারণে যে অর্থনৈতিক মন্দা তৈরী হয়েছে, তাতে মারা যাবে ২২ লক্ষ মার্কিনী। (https://bit.ly/3aG2nRF)

অনেকেই ভাবছে, করোনার কারণে সব বন্ধ হলেও বাংলাদেশ সরকার যে ত্রাণ বিতরণ হচ্ছে,
তাতেই বোধহয় সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
যারা এমন ভাবছেন, আসুন, বাংলাদেশে যে ত্রাণ কার্যক্রম হচ্ছে, তার জন্য কিছু হিসেব মিলাই।

একটি জেলাকে প্রথম পছন্দ করুন। ধরে নেই জেলাটির নাম সাতক্ষীরা।

লক ডাউনের কারণে গরীবদের জন্য সাতক্ষীরার জেলায় চাল বরাদ্দ হয়েছে ৩১৫ মেট্রিক টন (https://bit.ly/2UEr8Z3)
১ মেট্রিক টন সমান যদি ১০১৬ কেজি ধরি, তবে হয়, ৩ লক্ষ ২০ হাজার ১৬ কেজি চাল।

এবার আসুন, সাতক্ষীরার জনসংখ্যর হিসেব করি।
২০১৩ সালের হিসেবে সরকারী হিসেবে সাতক্ষীরার জনসংখ্যা ২০,৭৯,৮৮৪ জন।
(https://bit.ly/2R9fy5T)
এর মধ্যে দরিদ্র সংখ্যা কত ?

সরকারী হিসেব বলছে,
২০১৭ সালে সারা বাংলাদেশে দরিদ্রের হার ছিলো ২৩.১ শতাংশে।
এবং অতি দরিদ্রের হার ছিলো ১২.১ শতাংশে।
এখানে কিন্তু দিনমজুরের হিসেব নেই, অনেক দিনমজুর দরিদ্রের মধ্যে নাও পড়তে পারে।
(https://bit.ly/2xGqS2B)

তাহলে সাতক্ষীরায় দরিদ্র সংখ্যা ৪ লক্ষ ৮০ হাজার এবং অতি দরিদ্র সংখ্যা ২ লক্ষ ৫১ হাজার।

এখন ধরে নিচ্ছি, সরকারীভাবে যে চাল বরাদ্দ হয়েছে (৩ লক্ষ ২০ হাজার ১৬ কেজি চাল।), তাতে কোন দুর্নীতি হলো না, যতটুকু বরাদ্দ হয়েছে, ততটুকুই বরাদ্দ হলো।
অর্থাৎ সাতক্ষীরায় যদি সরকারী বরাদ্দকৃত সকল চাল ঠিকমত বণ্টন হয়,
তবে-
দরিদ্রদের মাঝে যদি চাল বিতরণ হয়, তবে প্রত্যেক দরিদ্র পাবে – ৬৬৬ গ্রাম করে চাল,
আর যদি দরিদ্র নয় বরং শুধু অতি দরিদ্রের মধ্যে চাল বিতরণ হয়, তবে প্রত্যেকে গড়ে পাবে- ১ কেজি ২৭০ গ্রাম।

এখন একজন মানুষ প্রতি বেলায় কতটুকু ভাত খায় ?
এক হিসেব বলছে বাংলাদেশের মানুষ দৈনিক মানুষ দৈনিক ৯৪৭ দশমিক ৮ গ্রাম খাবার খায়।
(https://bit.ly/3dRckxS)

যেহেতু অন্য খাবারের পাচ্ছে না, তাই যদি চালই খায়,
তবে সাতক্ষীরার সরকারী বরাদ্দকৃত চাল দিয়ে-
প্রত্যেক দরিদ্রের ১দিনও পেট ভরবে না,
আর অতি দরিদ্রদের মাঝে বণ্টন হলে তা দিয়ে ১ দিন চলবে, কিন্তু দেড় দিন চলবে না।
১৫ দিন লক ডাউন চলবে কিভাবে ?
আর লক ডাউন পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দার কথা তো বাদই দিলাম।

এখানে একটি কথা না বললেই না, ত্রান কিন্তু দেখতে অনেক বেশি মনে হয়,
কিন্তু জনসংখ্যা অনুপাতে এই ত্রাণ কিন্তু কিছুই না।
যেমন- সাতক্ষীরায় দেয়া হচ্ছে- ৩১৫ মেট্রিক টন চাল।
এই চাল ধরতে ৫ টনী ৬৪টি ট্রাক লাগবে।
৬৪টি ট্রাক চাল ক্যামেরায় দেখতে অনেক চাল লাগতে পারে, কিন্তু জনসংখ্যা অনুপাতে এই ত্রাণ কিছুই না।

তারপরও কথা হচ্ছে, সরকার বলেছে, তালিকা করে সেই চাল দিবে।
কিন্তু মানুষের পেটের ক্ষুধা কিন্তু তালিকার জন্য বসে থাকবে না।
১০ দিন ইতিমধ্যে অতিবাহিত হয়ে গেছে, এখনও যদি কিছু না পায়,
তবে কি ক্ষুধায় মরে গেলে তারপর পাবে ?

শেষ কথা হলো-
মানুষ শুধু করোনায় মৃতের সংখ্যা নিয়ে হিসেব নিকেষ করছে।
কিন্তু ভারতের প্রাক্তণ প্রধান পরিসংখ্যানবিদ যে খাদ্য দাঙ্গার কথা বললো,
কিংবা আমেরিকানরা করোনা সৃষ্টি অর্থনৈতিক মন্দায় ২২ লক্ষ লোকের মত্যুর কথা আলোচনা চলছে, বাংলাদেশেরও সেই খাদ্য দাঙ্গা বা মৃতের সংখ্যা হিসেব নিকেষ শুরু করা উচিত।

0 comments:

Post a Comment