Saturday, December 29, 2018

“আপনার নির্বাচনের ইশতেহার অনেক ভালো, কিন্তু সেটা কেউ বাস্তবায়ন করবে না” “নির্বাচনে ইশতেহার দিলেন, কিন্তু আপনার মার্কা কোথায় ? কোন দল ?”

নির্বাচন উপলক্ষে ইশতেহার ভাবনা (https://bit.ly/2T39p9P) নিয়ে একটা পোস্ট দেয়ার পর, অনেকেই এ ধরনের মন্তব্য করেছেন। ভালো নির্বাচনী ইশতেহার কেউ বাস্তবায়ন করবে না কিংবা মার্কা ছাড়া ইশতেহার বাস্তবায়ন করা যায় না, আমি এ ধরনের ধারনার পক্ষে নই। আমি বিশ্বাস করি, নিজে নির্বাচনে না দাড়িয়েও গুরুত্বপূর্ণ ইশতেহার বা দাবিসমূহ পূরণ করা সম্ভব।
আপনারা যদি খেয়াল করেন, তবে দেখবেন হিন্দুদের মধ্যে বিভিন্ন গোষ্ঠী বেশ কয়েক মাস যাবত বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের দরবারে দৌড়া-দৌড়ি করছে। তারা দাবী-দাওয়ার একটা লিস্ট তৈরী করেছে এবং সেটা নিয়ে একবার আওয়ামীলীগের কাছে যায়, একবার বিএনপির কাছে যায়। বলে, “আমাদের কাছে ১ কোটি হিন্দু ভোটার আছে, যদি আমাদের এ দাবিগুলো পূরণের প্রতিশ্রুতি দেন, তবে আপনাদের ভোট দেবো।” অর্থাৎ দুই দলের মধ্যে দরকষাকষি করে।
হিন্দুদের ১ কোটি ভোটার আদৌ আছে কি নেই, তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। কিন্ত বাংলাদেশে এবার ১০ কোটি ৪১ লক্ষ ভোটারের মধ্যে কমপক্ষে ৯ কোটির উপর ভোটার যে মুসলমান তাতে কোন সন্দেহ নাই। এটা কি সম্ভব ছিলো না, মুসলমানরা একটি ইশতেহার প্রণয়ন করবে এবং সেটা বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কাছে দিয়ে বলবে, “এগুলো পূরণ করলে আপনাদের সমর্থন দেবো, আর যদি না মানেন তবে সমর্থন দেবো না। যদি ক্ষমতায় গিয়ে না ঠিক মত না চলেন, তখন আমরা সমর্থন তুলে নেবো, ফলে আপনার পতন হবে। ” এভাবে দু’দলের মধ্যে দরকষাকষি করবে। এটা মনে রাখতে হবে, আওয়ামীলীগ-বিএনপি হচ্ছে ক্ষমতার পাগল। ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যে শর্ত দেয়া হবে, সেটা তারা মাথা পেতে নিবে। যদি বলায় হয়, “মাথা নিচে, পা উপরে দিয়ে সারা দিন দাড়িয়ে থাকতে” তবুও তারা রাজী। সুতরাং ক্ষমতা ঠিক থাকলে দাবী পূরণ কোন বিষয় নয়।
বিষয়টি ঘোড়ার লাগামের সাথে তুলনা করা যায়। ঘোড়া (আওয়ামীলীগ/বিএনপি) গাড়ি (দেশ) টেনে নিয়ে যাবে। তবে ঘোড়ার গলায় লাগাম সঠিক উপায়ে টেনে ধরতে হবে আপনাকে। আপনি যত শক্ত ও সুন্দর করে সেই লাগাম ধরতে পারবেন, ঘোড়া তত বেশি আপনার নিয়ন্ত্রণে থাকবে। বাংলাদেশে রাজনৈতিকদলগুলোর উপর বিদেশী শক্তিগুলো এভাবে লাগাম টেনে ধরে। রাজনৈতিক পলিসি দিয়ে, সমর্থন দিয়ে, গোপন তথ্য ব্ল্যাকমেইল করে, অবৈধ টাকা কামানো ও লুকানোর সুযোগ করে দিয়ে, মিডিয়া দিয়ে পক্ষ/বিপক্ষ হয়ে, অপকর্মের বৈধতা দিয়ে লাগাম টেনে ধরে। যে দলের উপর যে বিদেশী শক্তির লাগাম যত দৃঢ়, ঐ রাজনৈতিক দলের উপর ঐ বিদেশী শক্তির প্রভাব ততবেশি। ফলে ঐ রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় গেলে ঐ বিদেশী শক্তির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে বেশি। আপনি মুখে যতই বলেন, “সরকার কেন জনগণের জন্য কাজ করে না”, এতে লাভ হবে না। কারণ সরকারের গলায় তো আপনার লাগাম নেই, আছে ঐ বিদেশীদের লাগাম, সুতরাং তাদের কথাই সরকার বেশি শুনবে।
এখানে লক্ষ্যনীয়,
যেহেতু বাংলাদেশে দুটি বড় রাজনৈতিক দল অনেকদিন ধরেই ক্ষমতায় আছে,
এবং সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের ভোটগুলো তাদের কাছেই যায়, সেহেতু বাংলাদেশে মুসলমানদের পক্ষ হয়ে যারা দরকষাকষি করবে প্রাথমিকভাবে তাদের নিরপেক্ষ হওয়া জরুরী।
তবে সে যদি দুই দলের এক পক্ষকে সমর্থন দেয় বা নিজেই নির্বাচনে দাড়িয়ে যায়, তবে সে নিরপেক্ষতা হারাবে, তার কথা কেউ শুনবে না।
পাশাপাশি, যে বা যেসব নেতা নিরপেক্ষ হয়ে মুসলমানদের পক্ষে কাজ করবে, তাদের দৃষ্টিভঙ্গী বর্ধিত করতে হবে। তাদের চিন্তা করতে হবে পুরো মুসলিম সমাজকে নিয়ে, দাবীগুলো হতে হবে সেরকম। কিন্তু নিজের গোষ্ঠীগত সুবিধা নিয়ে যদি সে পক্ষ-বিপক্ষ অবলম্বন করে বসে, তবে সে মুসলমানদের নিরপেক্ষ গোষ্ঠীর নেতা হতে পারবে না। যতক্ষণ সে নিরপেক্ষ থাকবে, ততক্ষণ তার মধ্যে আওয়ামীলীগ-বিএনপির সমর্থকরাও আসতে থাকবে। একই সাথে, নির্বাচনে না দাড়ানোয়, রাজনৈতিকদলগুলো মুসলমানদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ভাববে না এবং দমনও করবে না। বরং সব সময় সমর্থন আদায়ের চেষ্টায় থাকবে।
আমি জানি, আমার দেয়া এ পলিসি অনুসারে যদি কেউ কাজ করতে চায়, তবে প্রথম যে কথাটা উঠবে সেটা হলো, “একজন নেতা লাগবে, নেতা ছাড়া সবাই এক হবে কিভাবে?”
বাংলাদেশের যদি সবাইকে কোন এক মুসলিম নেতার আন্ডারে আসতে বলি, তবে মুসলমানদের মধ্যে মারামারি-কাটাকাটি লেগে যাবে। একজন বলবে, আমরা ধর্মীয় দলের নেতা শ্রেষ্ঠ, আরেকজন বলবে আমার জন শ্রেষ্ঠ। একজন অন্যজনের হুজুরকে মানবে না। এজন্য নেতা/হুজুরের প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়াই ভালো। তার থেকে বরং নেতার বদলে একটি পলিসি তৈরী করা যেতে পারে, যার মধ্যে সকল মুসলমান সাধারণভাবে এক হবে। এরপর সেই পলিসি অনুসারে দরকষাকষি হবে।
আরেকটি কথা। অনেকে হয়ত বলবে, আরে দূর, “এসব করে লাভ হবে না। নির্বাচনে তো অমুক দল জিতে যাবে। ”
যারা এসব কথা বলবে, সম্ভবত তাদের নিজের কোন রাজনৈতিক পক্ষ আছে, আসছে নির্বাচনে তারা বিপক্ষকে দমন করার জন্য তাড়াহুড়ো করছে। তাদের পালে হাওয়া লাগিয়ে লাভ নেই। সাধারণ জনগণের পক্ষ তৈরী করতে সময় লাগবে। কারণ আওয়ামীলীগ-বিএনপি’র রাজনৈতিক সুচনা অনেক আগে থেকে। তাদের পেছনে যারা কাজ করছে, তাদের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা অর্ধ শতাব্দীর বেশি পুরোনো। আমি আপনাদেরকে জনগণের পক্ষ নামক শক্তি দাড় করানোর জন্য যে বুদ্ধি দিচ্ছি, সেটা জনগণের জন্য একেবারেই নতুন। এই নতুন তত্ত্ব নিয়ে সামান্য সময়ের মধ্যে তাদের সাথে পেরে যাবো, এটা ভুল। তাই তাড়াহুড়ো করার কারণ নেই। ধিরে সুস্থে আগাতে হবে। উদাহরণ স্বরূপ, আজকে তুরস্কে যে এরদোয়ানকে দেখা যাচ্ছে, সেটা ১০০ বছরের কষ্টের কারণে সৃষ্ট চেষ্টার ফসল। বাংলাদেশের মুসলমানদেরও সেরকম কিছু চিন্তা করতে হবে। ভুল পলিসিতে ৭১ বছরেও (১৯৪৭ থেকে) কিছু হয়নি। তাই তাড়াহুড়ো না করে সঠিক পলিসিতে এগোতে হবে।
শেষে আমি পুরো বিষয়টি আবারও সংক্ষেপে বুঝানোর চেষ্টা করছি,
ক) বাংলাদেশের মুসলমানদের নিজেদের একটি পলিসি থাকবে, যে পলিসির উপর তারা একমত হবে।
খ) যে সমস্ত রাজনৈতিক দল মুসলমানদের সেই পলিসির পক্ষে কাজ করবে, তাকেই সাপোর্ট দেয়া হবে।
গ) যতক্ষণ কাজ করবে, সাপোর্টও ততক্ষণ থাকবে। কাজও বন্ধ করবে, সাপোর্ট বন্ধ করে উল্টো বিরোধীতা করা হবে।
ঘ) মনে রাখতে হবে, সাপোর্ট দেয়া অর্থ মিশে যাওয়া নয়। উদাহরণস্বরূপ, আওয়ামীলীগ বা বিএনপি মুসলমানদের একটি পলিসির পক্ষে কাজ করলো। তাহলে ঐ ইস্যুতে আওয়ামীলীগ/বিএনপির পক্ষ নিতে হবে। কিন্তু এরমানে এই নয় যে আওয়ামীলীগ বা বিএনপির সাথে মিশে যেতে হবে। ঐ সময় আওয়ামীলীগ/বিএনপি মুসলমানদের পলিসির বিপরীত যতগুলো কাজ করবে, তার শক্তভাবে বিরোধীতা করতে হবে, সমর্থন তুলে নিতে হবে। অর্থাৎ সমর্থন হবে ইস্যু ভিত্তিক এবং বিরোধীতা হবে ইস্যু ভিত্তিক। অর্থাৎ যে যত পলিসি পালন করবে, তার দিকে সমর্থন ততবেশি যাবে। যে দল বেশি পলিসির বিপরীত করবে, তার দিকে বিরোধীতাও তত বেশি যাবে। এতে দুইটি রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রতিযোগীতা লাগবে কে কত বেশি সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের দাবী দাওয়া বেশি পূরণ করতে পারে।
আমি জানি, অনেক মুসলমান হয়ত বলবে, “এত পলিসির কি আছে, একবারে খিলাফত জারি করে ফেললেই তো হয়।”
আমি তাদের বলবো, আস্তে ভাই আস্তে। যে ময়লা শত-সহস্র বছর ধরে জমা হয়েছে, সেটা কি এক নিমিষেই সাফ করতে পারবেন ? কখনই না। ময়লা পরিষ্কার করতে সময় লাগবে, তবে পলিসি ও নিরপেক্ষতা যেন সঠিক থাকে, সেখানে যেন কোন ভুল না হয়, তাহলেই হবে।

===============================
আমার মূল পেইজ- Noyon chatterjee 5
(https://www.facebook.com/noyonchatterjee5)
পেইজ কোড- 249163178818686
------------------------------------------------------------------
আমার ব্যাকআপ পেইজ- Noyon Chatterjee 6
(https://www.facebook.com/Noyon-Chatterjee-6-202647270140320/)
------------------------------------------------------------------------------------------------

1 comment:

  1. Khilafah is the only solution. Kufr democratic system can't give solution.

    ReplyDelete