Friday, October 19, 2018

মোরগ লড়াই ও সাকিবের আঙ্গুল


গ্রাম বাংলায় এখনও অনেক স্থানে ‘মোরগ লড়াই’ খেলা দেখা যায়। দুইটা মোরগকে পরষ্পরের দিকে লেলিয়ে দেয়া হয় মারামারি করার জন্য। অবুঝ প্রাণী দুটো পরষ্পরের উপর ঝাপিয়ে পড়ে, আঘাত করে, দুই জন দুইজনকে মেরে রক্তাক্ত করে, আহত-নিহত করে। আর তাদের খুনোখুনি দেখে আনন্দিত ও বিনোদন প্রাপ্ত হয় জনগণ। অর্থাৎ জনগণকে আনন্দ দিতে নিজেরা রক্তাক্ত হতে থাকে মোরগগুলো। এ কারণে বিশ্বজুড়ে প্রাণীপ্রেমীরা মোরগ লড়াই, ষাড়ের লড়াইয়ের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুলছে। তারা বলছে, জনগণকে সামান্য আনন্দ দেয়ার জন্য প্রাণীদের উপর এই নির্মমতা মেনে নেয়া যায় না। অবিলম্বে প্রাণীর উপর নৃশংসতা বন্ধ করতে হবে।

খুব সহজ অঙ্কে হিসেব –
কেউ রক্তাক্ত হবে, আর তার বিনিময়ে কেউ আনন্দিত হবে।
আপনি বর্তমানে কালের ক্রিকেট বা ফুটবল খেলার দিকে যদি তাকান তবে সেই মোরগ লড়াইয়ের ব্যতিক্রম কিন্তু দেখতে পাবেন না। শুধু ব্যতিক্রম, অবুঝ প্রাণী মুরগীর যায়গায় শ্রেষ্ঠ প্রাণী মানুষকে দেয়া হয়েছে। সামান্য একটা ঢিল ছুড়লে মানুষ যখন ভয় পায়, তখন একটা ভারি বল প্রতিপক্ষের দিকে ছুড়ে দেয়া হচ্ছে। বলের গতি ঘণ্টায় ১৪০ কিলো ছাড়িয়ে যাচ্ছে, ইচ্ছে করে দেয়া হচ্ছে বাউন্স। ব্যাটসম্যান সেটা ব্যাট দিয়ে মারছে, কিন্তু যদি মিস হয় তবে গায়ে আঘাত করছে। হাতে,পায়ে, মাথায়, বুকে, দুই পায়ের মাঝে প্যাড পড়ছে, তারপরও মিস হয়ে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে লুটিয়ে পড়ছে। কয়েকদিন আগে অস্ট্রেলিয়ার প্লেয়ার ফিলিপ হিউজ বাউন্স সামলাতে না পেরে মারা গেলো। এরপর ব্যাট দিয়ে আঘাত করার পর সেটাও কোন প্লেয়ারের গায়ে লাগতে পারে। ছোটবেলায় মনে আছে, ঢাকায় খেলতে এসে বাংলাদেশী ক্রিকেটার অপুর পুলে মিডঅনের দাড়িয়ে থাকা ভারতীয় প্লেয়ার রমনলাম্বার মাথায় বলের আঘাত লেগেছিলো। ব্রেন হেমরাজে মারা গিয়েছিলো রমনলাম্বা।

বাংলাদেশের মানুষ খুব আবেগী, তারা বিনোদন আর বাস্তবতাকে আলাদা করতে জানে না। একবার এক খেলার পর কিছু মানুষ প্রচার করলো, বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা হচ্ছে মুক্তিযোদ্ধাদের মত। তখন মাশরাফী মোর্তজা শুধরে দিয়েছিলো। সে বলেছিলো, আমরা হচ্ছে এন্টারটেইনার। আমাদের সাথে মুক্তিযোদ্ধাদের তুলনা করা ঠিক না।

এন্টারটেইনারদের কাজ মানুষকে বিনোদন দেয়া। এজন্য সে তার জীবনকে ক্ষয় করে মানুষকে আনন্দ দিতে চায়। হয়ত এর বিনিময়ে সে কিছু টাকা পায়। বিষয়টা অনেকটা পর্নো অভিনেতা অভিনেত্রীদের মত। একটা খবরে পড়েছিলাম, যারা পর্নোগ্রাফীতে অভিনয় করে তাদের আয়ু খুব কম হয়। অর্থাৎ মানুষকে বিনোদন দেয়ার জন্য তারা শরীরের উপর এমন সব মেডিসিন প্রয়োগ করে যা তাদের আয়ু হ্রাস করে।
এই আজকে সাকিব বলেন, মাশরাফি বলেন, তামীম বলেন আর মোস্তাফিজ বলেন, প্রত্যেকে কিন্তু একই কাজ করতেছে। কেউ ভাঙ্গা হাত নিয়ে, কেউ ভাঙ্গা পা নিয়ে খেলছে। কিন্তু বাস্তবতা হলো তারা তাদের জীবন ক্ষয় করে মানুষকে আনন্দ দিচ্ছে। হয়ত অনেকে ‘স্যালুট’ দিচ্ছেন, ভাবছেন খুব মনে হয় দেশের জন্য বিরাট কিছু নিয়ে আসছে। কিন্তু মানবিক দৃশ্যকোন থেকে একটা চরম অন্যায় করা হচ্ছে। ঠিক যেভাবে মোরগ আহত হওয়ার পরও আমরা চাই তারা মারামারি চালিয়ে যায়, ঠিক সেইভাবে ক্রিকেটারদের আমরা স্যালুট নামক ‘পাম্প’ তাদের প্রতি নৃশংসতা করছি। আহত মুরগী জানে, আহত হলেও যতক্ষণ সে লড়তে পারবে, ততক্ষণ তার মালিকের কাছে তার দাম আছে। তার জন্য ভালো খাদ্য আছে। ঠিক তেমনি সাকিব-তামিম-মাশরাফি-মোস্তাফিজরা জানে, যত আহতই হোক, যতক্ষণ সে খেলতে পারবে ততক্ষণ তার দাম আছে, তার ইনকাম আছে। একটু ইনজুরিতে পড়লে তার যায়গা আরেকজন দখল করে নেবে, তখন পাবলিকও তাদের ভুলে যাবে, তাকে দু্ইটাকা দিয়েও দাম দেবে না। ইনজুরীর জন্য কত ভালো প্লেয়ার হারিয়ে যায়, কত জন শারীরিকভাবে পঙ্গু হয়ে যায়, কে কার খবর রাখে ? এই জন্য খেলার টাকা দিয়ে নামে বেনামে অন্য আয়ের পথ খুলে রাখে তারা।

আজকে বিশ্বে ইতর প্রাণীর প্রতি মায়া দেখিয়ে মোরগ লড়াই, ষাড়ের লড়াইয়ের বিরুদ্ধে জনমত তৈরী হচ্ছে, কিন্তু মানুষের প্রতি মানুষের মায়া দেখিয়ে কবে ক্রিকেট-ফুটবল নামক খেলাধূলা বন্ধ হবে ? মানুষকে বিনোদিত করার জন্য কেন অপর মানুষ কেন রক্তাক্ত হবে, জীবন দিবে ? মানবতার দৃষ্টিকোণ থেকে এই সব ‘খেলা’ অবিলম্বে বন্ধ হোক।


===============================
আমার মূল পেইজ- Noyon chatterjee 5
(https://www.facebook.com/noyonchatterjee5)
পেইজ কোড- 249163178818686
------------------------------------------------------------------
আমার ব্যাকআপ পেইজ- Noyon Chatterjee 6
(https://www.facebook.com/Noyon-Chatterjee-6-202647270140320/)
------------------------------------------------------------------------------------------------

0 comments:

Post a Comment