Wednesday, September 5, 2018

অ্যানালিস্ট ক্লাস -২ : জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি কিভাবে সম্পর্কিত হয় ?


জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতির মধ্যে সম্পর্ক ধরতে হলে প্রথমে আপনাকে বুঝতে হবে লোকাল (থানা বা ইউনিয়ন পর্যায়ে রাজনীতি) রাজনীতির সাথে জাতীয় রাজনীতির সম্পর্ক। লোকাল রাজনীতির সাথে জাতীয় রাজনীতির সম্পর্ক যেমন, জাতীয় রাজনীতির সাথে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ঠিক সেকরম। একটি সম্পর্ক বুঝলে, অন্যটি বোঝা সহজ।

বিষয়গুলো খেয়াল করুন:

(১) জাতীয় রাজনীতিতে যেমন দুটি বড় দল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে (উদাহরণ আওয়ামীলীগ-বিএনপি), ঠিক তেমনি আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে দুটি বড় ব্লক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। একটি মার্কিন ব্লক, অন্যটি রুশ ব্লক।

(২) লোকাল রাজনীতি করা একজন চেয়্যারম্যান, তার এলাকায় হয়ত খুব জনপ্রিয় হতে পারে। কিন্তু জাতীয়ভাবে তার কোন অবস্থান নেই। জাতীয়ভাবে আসতে হলে ঐ চেয়ারম্যানকে জাতীয় রাজনৈতিক দল যেমন- আওয়ামীলীগ বা বিএনপি’র পরিচয়ে আসতে হবে। তখন যদি তাকে পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়, “অমুক এলাকার আওয়ামীলীগের চেয়ারম্যান বা অমুক এলাকার বিএনপির চেয়ারম্যান। তাহলে জাতীয় পর্যায়ে রাজনীতিবিদরা তাকে সহজেই চিনতে পারে। ঠিক তেমনি, বাংলাদেশের একজন রাজনীতিবিদ যখন জাতীয় পর্যায়ে রেখে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যায়, তখন যদি তাকে বলা হয় আওয়ামীলীগ/বিএনপির নেতা। তবে কিন্তু চেনা যায় না। কারণ আন্তর্জাতিক রাজনীতির পরিমণ্ডলে আওয়ামীলীগ বা বিএনপির কোন অবস্থান নেই । তখন ঐ রাজনীতিবিদকে যোগ দিতে হয় আমেরিকা বা রাশিয়ান ব্লকে। তখন তার পরিচয় হয় অমুক দেশের রাশিয়ান বা মার্কিন ব্লকের সদস্য। যেমন: ড. কামাল হোসেন বাংলাদেশে মার্কিন ব্লকের সদস্য।

(৩) প্রশ্ন আসতে পারে, একজন জাতীয় রাজনীতিবিদের সাথে কেন বিদেশী ব্লকের সাথে সম্পর্ক তৈরী হয়?

উত্তর হবে: দুই দিকেরই স্বার্থ আছে। লোকাল রাজনীতির সাথে জাতীয় রাজনীতির সম্পর্ক বুঝলে, জাতীয় রাজনীতির সাথে আন্তর্জাতিক রাজনীতির সম্পর্ক বুঝা সম্ভব।

ক) একজন লোকাল চেয়ারম্যানের উপর লোকাল ও জাতীয় লেভেলে নানা রকম হুমকি বা থ্রেট থাকতে পারে। সেই থ্রেট এড়ানোর জন্য সে জাতীয়ভাবে যারা রাজনীতি করে তাদের সাথে গাট বাধে। তার সাথে জাতীয় রাজনীতিবিদদের সম্পর্ক থাকায় এলাকার প্রতিপক্ষরা তাকে কিছু করতে পারে না। পাশাপাশি লোকাল লেভেলে তার প্রভাব বিস্তার এবং প্রতিপক্ষ থেকে এগিয়ে থাকতে জাতীয় রাজনীতিবিদরা সর্বাত্মক হেল্প করে।
একইভাবে জাতীয় ক্ষেত্রে রাজনীতিবিদদের জন্য অনেক ন্যাশনাল ও ইন্টারন্যাশনাল থ্রেট থাকে। এজন্য তাকে বিদেশী রাজনীতিক ব্লকের সাথে সম্পর্ক মেইনটেইন করতে হয়, নয়ত তার প্রতিপক্ষরা তাকে শেষ করে দিতে পারে। পাশাপাশি জাতীয় লেভেলে প্রভাব বিস্তার ও প্রতিপক্ষ থেকে এগিয়ে থাকতে আন্তর্জাতিক লেভেল থেকে হেল্প করা হয়।
যেমন: শেখ হাসিনা রুশব্লক মেইনটেইন করে। এটা করে তারা ভারতীয় কংগ্রেসের মাধ্যম দিয়ে (ভারতের কংগ্রেস রুশব্লকের সদস্য)। এ কারণে ওয়ান ইলেভেনের সময় মাইনাস টু করে যখন আমেরিকা শেখ হাসিনাকে হটিয়ে দিতে চাইছিলো, তখন রুশব্লকের ভারতীয় কংগ্রেস শেখ হাসিনাকে রক্ষার জন্য সর্বাত্মক কাজ চালায়। পাশাপাশি প্রতিপক্ষ বিএনপি থেকে এগিয়ে থাকতে রুশব্লকের ভারতীয় কংগ্রেস সব সময় শেখ হাসিনাকে সাহায্য করে।

(খ) আবার, একজন লোকাল চেয়্যারমানের দ্বারা জাতীয় রাজনৈতিক দল বা রাজনীতিবিদ ফায়দা নেয়। যেমন জাতীয় দলগুলো লোকাল রাজনীতিবিদদের উপর নির্ভর করে লোকাল পর্যায়ে তাদের প্রচার-প্রসার বা স্বার্থ উদ্ধার করে। একই ঘটনা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতিবিদদের মধ্যেও হয়। জাতীয় রাজনীতিবিদদের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক শক্তিগুলো ঐ দেশে তাদের মতবাদ/প্রচার প্রসারসহ বিভিন্ন স্বার্থ উদ্ধার করে।

৪) তবে অনেক ক্ষেত্রে দুইজনের ইন্টারেস্ট বা স্বার্থ এক নাও হতে পারে বা পরিবর্তিত হতে পারে। তখন স্বাভাবিকভাবে দেখা যায়, পরপষ্পর সমঝোতা করার সর্বাত্মক চেষ্টা চালায়। তবে কিছু কিছু সেটা নাও হতে পারে। সেক্ষেত্রে দল পরিবর্তনের ঘটনা ঘটে। যেমন একসময় চীন সোভিয়েত ব্লকে ছিলো। এরপর দল পরিবর্তন করে মার্কিন ব্লকে যোগ দেয়। এরপর আবার মার্কিনব্লক ত্যাগ করে রুশব্লকে যোগ দেয়।

(৫) জাতীয় রাজনীতির ক্ষেত্রে কিছু আ্ঞ্চলিক দল থাকে, যাদের অবস্থান পুরো দেশব্যাপী বিস্তৃত নয়। যেমন: জাতীয় পার্টি, জাসদ ইত্যাদি। এ দলগুলোর পৃথক অবস্থান থাকলেও জাতীয়পর্যায়ে কোন ঘটনার সময় (উদহারণ:নির্বাচন) তারা বড়দলগুলোর (যেমন: আওয়ামীলীগ বা বিএনপি) সাথে জোট বাধে (আবার নিজেদের মধ্যেও জোট তৈরী করতে পারে)। অনুরূপ আন্তর্জাতিক রাজনীতির ক্ষেত্রেও এরকম আঞ্চলিক শক্তি থাকে। তারা আঞ্চলিক রাষ্ট্রগুলো নিয়ে জোট বাধে বা বড় শক্তিগুলোর সাথে জোট বেধে কাজ চালায়। যেমন: এশিয়ায় চীন রাশিয়ার সাথে, ভারত আমেরিকার সাথে। মিডলইস্টে সৌদি আরব আমেরিকার সাথে, ইরান রাশিয়ার সাথে জোট বাধে ইত্যাদি।

৬) উপরের দিকে যখন দুই দলের সাথে জোট হয়, তখন নিচের দিকেও জোট বা সু-সম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। আবার উপরের দিকে বিপরীতজোটে চলে গেলে নিচের দিকে শত্রুতা লক্ষ্য করা যায়। যেমন- আওয়ামীলীগ আর জাসদ যখন উপরের দিকে জোট বাধে তখন লোকাল পর্যায়ে আওয়ামীলীগ ও জাসদের চেয়্যারম্যানের মধ্যে জোট বা সুসম্পর্ক গড়ে। আবার আওয়ামীলীগ ও জাসদ প্রতিপক্ষ হয়ে গেলে লোকাল চেয়্যারম্যানদের মধ্যে সম্পর্ক ভেঙ্গে যায়। অনুরূপ আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কোন জোট হলে, জাতীয় পর্যায়ে ঐ ব্লকের সদস্যদের মধ্যে জোট বা বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। ভেঙ্গে গেলে শত্রুতা বা প্রতিপক্ষতা তৈরী হয়। যেমন: এক সময় আমেরিকা আর চীন একব্লকে ছিলো, তখন বাংলাদেশে মার্কিন ও চীনব্লকের রাজনীতিবিদদের মধ্যে জোট বা সুসম্পর্ক লক্ষ্য করা যায়। এখন চীন মার্কিন ব্লক ত্যাগ করে রুশ ব্লকে যোগ দিয়েছে। তাই এখন বাংলাদেশে চীন ও মার্কিনপন্থীদের মধ্যে শত্রুতা বা বিপরীতপক্ষতা লক্ষ্য করা যায়।

আজকের পাঠের পর আপনাদের যদি কোন প্রশ্ন থাকে, কিংবা কোন অংশ যদি বুঝতে না পারেন, তবে তা কমেন্ট করুন। আমি সুযোগ-সময় করে তার উত্তর দিবো।

(১ম পর্ব- রিয়েল ফেস ও আর্টিফিসিয়াল ফেস-https://bit.ly/2PKbc2S)


===============================
আমার মূল পেইজ- Noyon chatterjee 5
(https://www.facebook.com/noyonchatterjee5)
পেইজ কোড- 249163178818686
------------------------------------------------------------------
আমার ব্যাকআপ পেইজ- Noyon Chatterjee 6
(https://www.facebook.com/Noyon-Chatterjee-6-202647270140320/)
------------------------------------------------------------------------------------------------

1 comment: