কর্পোরেটোক্রেসি আসলে পূজিবাদী বা কর্পোরেটদের স্বার্থ। ২০১৭ সালে অক্সফাম বলছে, পৃথিবীর ৩৬০ কোটি লোকের সমান সম্পদ রয়েছে মাত্র শীর্ষ ৮ ধনী ব্যক্তির হাতে। সত্যিই বলতে গরীব লোকদের সম্পদ গুটি কয়েক ধনীদের হাতে তুলে দেয়ার নামই হচ্ছে কর্পোরেটোক্রেসি। কর্পোরেটোক্রেসির অনেক ধাপ আছে। ফ্লাইওভার-সেতু বা ভৌতকাঠামো বানিয়ে সম্পদ চুষে নেয়া একটা ধাপ, এর আরো ধাপ আছে। ১৬শ’ থেকে ১৯শ’ শতাব্দী পর্যন্ত ইউরোপে যে দাসপ্রথা চালু ছিলো বর্তমান কর্পোরেটোক্রেসি হচ্ছে সেই দাসপ্রথার আধুনিক রূপ। আরো সহজভাষায় বলতে, পৃথিবীর শত শত কোটি লোককে ঐ গুটি কয়েক কর্পোরেট মালিকের দাস বানানাই হচ্ছে কর্পোরেটোক্রেসি।
কর্পোটেক্রেসির একটি বড় শিকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ জনগণ। এর শিকার হলে একটি দেশের লিভিং কস্ট বা জীবন নির্বাহের খরচ বেড়ে যায়। এ কারণে দেখা যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি সাধারণ পরিবারকে জীবন নির্বাহ করতে হলে মা-বাবা-ভাই-বোন সবাইকে চাকুরী করতে হয়। সবাই ইনকাম না করলেই ঐ পরিবার টিকে থাকতে পারে না। বাংলাদেশে এতদিন এ সিস্টেম ছিলো না। বাংলাদেশে শুধু বাবা ইনকাম করলেই মা-সন্তান এমনকি অনেক আত্মীয়ের বাসার খরচ মেটানো সম্ভব ছিলো। কিন্তু বর্তমানে বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্য বা জীবন নির্বাহ খরচ বৃদ্ধি পাওয়া বাবা ছাড়াও মা-সন্তানদের চাকুরীতে নামতে বাধ্য করবে। হয়ত বলতে পারেন, বাংলাদেশে তো পুরুষ মানুষের চাকুরী নাই, নারী-শিশুরা চাকুরী পাবে কিভাবে? উত্তর- পাবে। চেয়ার টেবিলে বসা কাজ না হোক, শ্রমিক শ্রেণীর কাজ পাবে। বাংলাদেশে ঐ সব কর্পোরেটরা বিভিন্ন কলকারখানা স্থাপন করবে (এ কারণে বাংলাদেশে নতুন ১০০টি নতুন ইপিজেড হতে যাচ্ছে), ঐ কলকারখানায় শ্রমিক লাগবে, ঐ সব শ্রমিক পাবে কোথা থেকে ? দরিদ্র বেকার পুরুষ, নারী-শিশুরা দেবে। আবার সে সব কলকারখানা বা ইন্ডাস্ট্রিতে যেন তারা সহজে পৌছাতে পারে, সে জন্যই তৈরী হচ্ছে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, ফ্লাইওভার, সেতু। যেগুলোর টাকা নেয়া হচ্ছে ঐ দরিদ্র শ্রেণীর পকেট থেকেই।
বাংলাদেশে বিদেশীদের কর্পোটেক্রেসির একটি বড় ফল হচ্ছে গার্মেন্টস শিল্প। বাংলাদেশের নারীরা ইউরোপ-আমেরিকার মানুষদের জামা-কাপড় সস্তায় বানিয়ে দিচ্ছে। বাংলাদেশে কৃষি বা উৎপাদনশীল ব্যবস্থা যদি ভালো হতো, পুরুষের ইনকাম যদি বেশি হতো, তবে নিশ্চয় সামান্য কটা টাকার জন্য বাংলাদেশের নারীদের গার্মেন্টেসে এত হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করতে হতো না। তারাই নিজেদের কাপড় সস্তায় পাওয়ার জন্য বাংলাদেশে উৎপাদনশীলতায় সঙ্কট তৈরী করে কৃত্তিম দরিদ্রতা সৃষ্টি করেছে, যা পোষাতে গার্মেন্টেসে চাকুরী করতে বাধ্য হয়েছে নারীরা।
অনেকে হয়ত বলতে পারেন, “ভাই চাকুরী তো করছে। ইনকাম তো করছে।”
ঠিক আছে। তবে চাকুরী শব্দটা এসেছে চাকর থেকে। চাকর মানে দাস, গোলাম।
আধুনিক ভাষায় সেই দাসত্ব গ্রহণ করাকে বলা হয় ‘জব’। কারো দাস লাগলে মালিক যে ঘোষণা দেয়, তাকে বলে ‘জব সার্কুলার’। একটি কোম্পানির মালিক আপনার মত দাসকে মাস শেষে ১০ টাকা বেতন দেয়, কিন্তু আপনার দ্বারা ১০০ টাকা কামিয়ে নেয়। আন্তর্জাতিক কর্পোরেটদের হাতে যেহেতু প্রচুর কাজ, তাই তারা প্রচুর দাস চায়, যত বেশি দাস, তত বেশি ইনকাম। এজন্য শুধু পুরুষ দিয়ে হয় না, তারা নারীদেরকেও নামাতে চায়। কারণ নারীদের স্বল্প মজুরী দিয়ে দাস বানানো যায়।
বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যখন জাতিসংঘে ভাষণ দিতে যায়, তখন দেখবেন বলে- “আমরা নারীর ক্ষমতায়ন (women empowerment) করছি, লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছি।”
শুধু প্রধানমন্ত্রী নয়, অন্যান্য মন্ত্রী যেমন শিক্ষামন্ত্রীও বিদেশী মিডিয়াগুলোর সাথে সাক্ষাৎকার দিতে একই বিষয়গুলো পাঠ্যপুস্তকে ঢুকানো হয়েছে বলে জানায়। এবং বলে- লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছি।
কিন্তু কি সেই লক্ষ্যমাত্রা?
নারীর ক্ষমতায়ন (women empowerment) এর মধ্যে কি লক্ষ্যমাত্রা আছে ? বিদেশী সম্রাজ্যবাদীদের কাছে কেন এটা গুরুত্বপূর্ণ ?
ঐ যে বলেছি, সম্রাজ্যবাদীদের চাহিদা হচ্ছে স্বল্পমজুরীতে দাস। একজন নারী যদি ঘরে থাকে তবে তার থেকে কর্পোরেটরা দাসত্ব গ্রহণ করতে পারবে না, এজন্য নারীর ক্ষমতায়ন (women empowerment) নাম করে নারীকে ঘরের বাইরে বের করে নিয়ে আসে এবং নারীকে তাদের দাসত্বে নামায়। একজন নারী যদি ঘরে বসে থাকে তবে সে সংসারের দেখাশোনা করে। সংসারের দেখাশোনা করলে তো আর কর্পোরেটদের স্বার্থ হাসিল হবে না। কর্পোরেটদের স্বার্থ হাসিল করার জন্য নারীদের ঘর থেকে বের করে কাজে লাগাতে হবে। আর সে কারণে সরকার প্রধানদের বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা দেয়া থাকে, যে এতদিনের মধ্যে এত কোটি নারীকে দাস বানাতে হবে। এটাই সে লক্ষ্যমাত্রা।
আসলে কর্পোটেক্রেসি একটা বিশাল সাইকেল বা চক্র । এদের হাতের অভাব নাই। এর থেকে বের হওয়া খুব সহজে সম্ভব না। তবে প্রাথমিকভাবে যেটা করা যায়, সেটা হলো নতুন প্রজন্ম চাকুরীর দিকে না ঝুকে ব্যবসা-বাণিজ্যের দিকে ঝোকা এবং নিজস্ব উৎপাদনশীল খাতগুলো উন্নয়ন করা। কর্পোরেটদের সাইকেল থেকে বেড়িয়ে নিজস্ব সাইকেল তৈরী করতে না পারলে ওদের দাসত্ব থেকে বাড়িযে আসা কখনই সম্ভব নয়।
===============================
আমার মূল পেইজ- Noyon chatterjee 5
(https://www.facebook.com/
পেইজ কোড- 249163178818686
------------------------------------------------------------------
আমার ব্যাকআপ পেইজ- Noyon Chatterjee 6
(https://www.facebook.com/
--------------------------
0 comments:
Post a Comment