Thursday, March 28, 2019

ব্রিটেনে স্কুলগুলোতে ৭+ বছরের বাচ্চাদের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে `পৃথিবীতে তুমি কোথা থেকে আসলে’


গতকালকে বিবিসি বাংলা’র একটা খবর ভাইরাল হইছে,
খবরের শিরোনাম: “স্কুলে যৌন শিক্ষা: বাংলাদেশে ‘জেনারেশন ব্রেকথ্রু’ প্রকল্পের ক্লাসরুমে যা পড়ানো হচ্ছে”

৩৫০টি স্কুল ও মাদ্রাসায় বিশেষ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।  যেখানে স্কুলের বাচ্চাদের এমন সব বিষয় শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, যা সাধারণভাবে আলোচনা করতে বাংলাদেশের মানুষ লজ্জা বোধ করতো।  দাবী করা হচ্ছে, “দুই বছর মেয়াদী এই কোর্সে, শিক্ষার্থীরা বয়ঃসন্ধিকালীন এসব অবশ্যম্ভাবী ইস্যুগুলো সম্পর্কে জানছে।  তারা শিখছে প্রজননস্বাস্থ্যের নানা দিক।  যৌনবাহিত এবং যৌনাঙ্গবাহিত রোগ সম্পর্কে অবহিত হচ্ছে। শিখছে এসব রোগ থেকে দূরে থাকার উপায়।....... বিদ্যালয়ের একটি বিশেষ শ্রেণীকক্ষে গত ৫ বছর ধরে এসব শিখছে বিদ্যালয়টি ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত ছাত্রছাত্রীরা। বাংলাদেশ সরকারের 'জেনারেশন ব্রেকথ্রু' নামের একটি প্রকল্পের আওতায় এই শ্রেণীকক্ষটি তৈরি হয়েছে। কক্ষটির নাম দেয়া হয়েছে 'কিশোর কিশোরী কর্নার'। আর এখানে তারা পড়ছে 'জেমস' নামে একটি কোর্স যেটির পূর্ণরূপ দাঁড়ায় 'জেন্ডার ইকুয়িটি মুভমেন্ট ইন স্কুলস'। কোর্সটি অনেকটা পশ্চিমা দেশগুলোর বিদ্যালয়ে পড়ানো সেক্স এডুকেশন বা যৌন শিক্ষার আদলে সাজানো।..........” (https://bbc.in/2HIONCa)

এতক্ষণ তো বিবিসির খবর পড়লেন, এবার আসুন আমরা অন্য সোর্সগুলো থেকে স্কুলে যৌন শিক্ষা’র বিষয়টি যাচাই করে দেখি।

প্রথমে আমরা দেখবো, 'জেনারেশন ব্রেকথ্রু' নামক পাইলট প্রকল্পটিতে অর্থায়ন করছে কে এবং কত টাকা ?
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইট (https://bit.ly/2UWQtel)  বলছে, এই পাইলট প্রকল্পে ফান্ড দিয়েছে জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল বা ইউএনএফপিএ।  টাকার পরিমাণ ২.২৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
এখানে আমার প্রশ্ন,
--যৌন শিক্ষার বিষয়টি তো শিক্ষার সাথে সম্পৃক্ত ।  তাহলে এই ফান্ড তো দেয়ার কথা ছিলো জাতিসংঘের শিক্ষা বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর।  আর যদি স্বাস্থ্য বিষয়ক দিক থেকে চিন্তা করি, তবে ফান্ড দেয়ার কথা ছিলো জাতিসংঘের অধীনস্থ ‘বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-হু’ এর ।  কিন্তু টাকা ‘জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল’ দিবে কেন?

--তারমানে এই শিক্ষাটা কি জনসংখ্যা’র সাথে সম্পৃক্ত ? মানে এমন কোন শিক্ষা যা জনসংখ্যা বৃদ্ধি হ্রাসে সহায়ক হবে ?
--কিন্তু জন্মনিয়ন্ত্রণ শিক্ষা তো বিবাহিত দম্পত্তিদের দেয়া হচ্ছে, কিন্তু স্কুলের বাচ্চাদের কেন জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি শিখতে হবে ?

বাংলাদেশে এই শিক্ষা দেয়ার সময় বলা হচ্ছে, বাচ্চাদের জড়তা কাটানো হচ্ছে, বাচ্চাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক জ্ঞান, প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে জ্ঞান, বয়ঃসন্ধি সম্পর্কে জ্ঞান দেওয়া হচ্ছে।  কিন্তু আসলে এই শিক্ষার আড়লে কি উদ্দেশ্য আছে ?
যেহেতু বাংলাদেশে এই শিক্ষাটি পাইলট প্রকল্প করে নতুন করে আনতে চাওয়া হচ্ছে, তাই পুরো বিষয়টি নিয়ে লুকাছাপা করা হবে।  তাই যেসব দেশে এই শিক্ষা চালু আছে, তারা কেন এই শিক্ষা প্রণয়ন করতে চাইছে, সেটা আগে বোঝা দরকার।
তাদের ওয়েবসাইট ঘেটে আমি যেটা বুঝলাম, যারা মুখে যত সুন্দর কথাই বলুক, স্কুলে বাচ্চাদের ‘যৌনশিক্ষা’ দেয়ার মূল উদ্দেশ্য-
 “তুমি ভয় জয় করে সেক্স করো, সমস্যার (গর্ভধারণ, যৌনরোগ) সমাধান (জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি/সেভগার্ড) শিখিয়ে দিচ্ছি।”
(https://bit.ly/2CzpmQa)

যেহেতু কিশোরী মেয়েদের অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণ আটকানো এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য, তাই ফান্ডও দিয়েছে জাতিসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক সংস্থা। 

স্কুলে যৌনশিক্ষা দেয়া বিষয়টি সারা বিশ্বজুড়ে একটি বিতর্কিত বিষয়।  অনেক দেশেই এর বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিবাদ হয়েছে।  গার্জিয়ানরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করেছে স্কুলে যৌন শিক্ষা বন্ধ করার জন্য।
ক) যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়াতে স্কুলে যৌন শিক্ষার বিরুদ্ধে গার্জিয়ানদের প্রতিবাদ - https://bit.ly/2TcfrsN
খ) কানাডার অনটারিওতে গার্জিয়ানদের প্রতিবাদ (https://bit.ly/2FCqe7J)

এই সব যৌন শিক্ষার বইয়ে কি থাকে ?
বাংলাদেশে যেহেতু বিষয়টি নতুন এসেছে, তাই এখনও হয়ত প্রকাশ্যে অনেক কিছু বলছে না। কিন্তু যেসব দেশের স্কুলে বেশ কিছুদিন ধরে এই শিক্ষাটি চালু আছে, আসুন দেখি তাদের বইয়ে কি দেয়া হচ্ছে-

---- ব্রিটেনের ৫-৭ বছরের বাচ্চাদের স্কুলে যৌন শিক্ষার নামে কি শিক্ষা দেয়া হচ্ছে, এই লিঙ্কে দেখুন- (https://bit.ly/2WshG97)
--- ব্রাজিলে বাচ্চাদের যৌন শিক্ষার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছে দেশটির প্রেসিডেন্ট নিজেই।  সে স্কুলে বাচ্চাদের বই নিয়ে দেখাচ্ছে বইগুলোর মধ্যে কি ধরনের জিনিস আছে - https://bit.ly/2FCqsM7

উল্লেখ্য পৃথিবীর ১০টি শীর্ষ ধর্ষণ সংগঠিত হয়, এমন রাষ্ট্রগুলো-
১) যুক্তরাষ্ট্র, ২) দক্ষিণ আফ্রিকা, ৩) সুইডেন, ৪) ভারত, ৫) যুক্তরাজ্য, ৬) জার্মানি, ৭) ফ্রান্স, ৮) কানাডা, ৯) শ্রীলঙ্কা, ১০) ইথিওপিয়া (https://bit.ly/2HIJr9Y)

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হলো, এই ১০টি দেশেই স্কুলে অনেক দিন ধরে যৌনশিক্ষা চালু আছে।  যদিও দাবী করা হয়, যৌন শিক্ষা চালু হলে ছেলে-মেয়েরা কাছাকাছি আসলে এই নির্যাতন কমবে, কিন্তু বাস্তবে এতদিন ধরে যৌন শিক্ষা চালু থাকলেও ঐসব দেশে যৌন নির্যাতন কমে নাই, বরং বেড়ে গেছে।
এখন কথা হলো, বাংলাদেশেও স্কুলে যৌনশিক্ষা চালু হলে, বাংলাদেশেও যে ঐ শীর্ষ ধর্ষণপ্রবণ রাষ্ট্রের তালিকায় অবস্থান নিবে না তার কি গ্যারান্টি ?

স্কুলে যৌন শিক্ষা চালু হলে কি সমস্যা হবে ?

ক) এতদিন যৌন বিষয়ক শিক্ষা পারিবারিকভাবে ও বিশ্বাসভাজন ঘনিষ্ঠজনদের মধ্যেই হয়ে আসছিলো।  কিন্তু স্কুলে যখন এই যৌন শিক্ষা দেয়া শুরু হবে, তখন এই বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে প্রশ্ন আসবে।  যেমন- ধরুন, ক্লাসে কোন পুরুষ শিক্ষক ছাত্রীদের যৌনশিক্ষা দিচ্ছে, স্বাভাবিকভাবে ছাত্রী-শিক্ষকের মধ্যে অনেক বিষয় বাধন উন্মুক্ত হবে।  এমত অবস্থায় ঐ পুরুষ শিক্ষকটি ঐ ছাত্রীদের উপর কোনভাবে সুযোগ নিবে কি না ? ঐ শিক্ষকটি আসলে কতটুকু বিশ্বস্ত ? ঐ শিক্ষকটি যে যৌনশিক্ষা দেয়ার নাম করে ছাত্রীটিকে নিপীড়ন করবে না, তার কি গ্যারান্টি ? দেখা যাবে, স্কুলগুলো এই শিক্ষা চালু হলে ছাত্রী নিপীড়ন সকল বাধন ভেঙ্গে উন্মুক্ত হয়ে যাবে।

খ) একজন পুরুষ মহিলার মধ্যে কিভাবে বায়োলোজিকাল সম্পর্ক ঘটে - এই শিক্ষাটা দিতে কত সময়ের দরকার ? ৫ মিনিট, ১০ মিনিট ?
কিন্তু বছরের পর বছর যৌন শিক্ষার নামে কি শিক্ষা দেয়া হবে ? কি কি নতুন টপিকস আলোচনা হবে ? ব্রিটেনের যৌন শিক্ষা ক্লাসে ৫+ বছরের বাচ্চাদের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে- “অ্যানাল ইন্টারকোর্স, বাই সেক্সুয়াল, ক্লিটোরিস, অ্যানাস,ইরিকশন, হোমোসেক্সুয়াল, ইনসেস্ট, মাস্টারবেশন, অর্গাজম, ওরাল সেক্স, প্রসটিটিউট” এই আলোচনার প্রভাবে সব কিছু সহজ হয়ে গেলে কতদিনের মধ্যে তা প্ল্যাকটিক্যালে গড়াবে তা নিয়েও আলোচনা করার দরকার।

গ) যৌন শিক্ষার মধ্যে অন্যতম পাঠ্য হবে সমকামীতা বা গে/লেসবিয়ান/বাইসেক্সুয়াল শিক্ষা।  যে ছেলে বা মেয়েটি এখনও সেক্স কি বুঝে উঠে নাই তাকে যখন গে/লেসবিয়ান সম্পর্কে ধারণা দেয়া হবে, তখন দেখা যাবে যৌন ক্ষমতা প্রাপ্ত হওয়ার পর সে সঠিক যৌনতা ছেড়ে গে/লেসবিয়ান হয়ে গেছে।  গে/লেসবিয়ান হওয়া মানে একটি জাতিকে আনপ্রডাক্টটিভ করে দেয়া।

ঘ) যারা এই শিক্ষা দিচ্ছে, তাদের মূলে উদ্দেশ্য কিশোরীরা যেন গর্ভধারণ না করে কিংবা কেউ যেন যৌনরোগে আক্রান্ত না হয়।  খুব ভালো কথা। সেক্স করে তারপর কেন গর্ভধারণ বা যৌনরোগের কথা ভাবতে হবে ?
আমরা এমন শিক্ষা চালু করি, তোমরা ছোট বয়সে অবৈধ সেক্স করো না, তাহলেই তো গর্ভধারণও হয় না এবং যৌনরোগও হয় না। বর্তমানে আমরা সমাজে নৈতিকতা শিক্ষার মাধ্যমে কিন্তু সেটাই দিচ্ছি।  কিন্তু তারা নৈতিকতা শিক্ষার বাধন তুলে বাচ্চাদের সেক্সও করতে দিতে চাইছে, আবার গভর্ধারণ ও যৌনরোগ আটকাতে চাইছে, বিষয়টি কেমন হলো ?

বিবিসির রিপোর্ট আপনারা দেখেছেন,
“স্কুলে বাচ্চারা বলছে, আমাদের কাছে এইসব কথা বলা খুব সহজ হয়ে গেছে। আমরা ফ্রি এসব কথা বলতে পারছি, আমাদের বাধা আসছে না। ”
তাদের কথা শুনে মনে হচ্ছে, “আহ! দেশ বোধ হয় খুব এগিয়ে গেলো”।

আচ্ছা, এসব কথা নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করা কি জরুরী কোন বিষয় ? এই আলোচনা করলেই কি দেশ এগিয়ে যাবে ?  বিভিন্ন পতিতালয়ে গিয়ে দেখুন, ছোট ছোট কিশোরী পতিতারা এইসব কথা প্রকাশ্যে লজ্জাহীন ভাবে বলছে। তাহলে পতিতালয় গুলো কি অন্য সব স্থান থেকে এগিয়ে নেই ?

দেশ, অর্থনীতি, জ্ঞান বিজ্ঞান নিয়ে অনেক আলোচনার দরকার আছে,
দেশকে এগিয়ে নিতে এসব বিষয়ে আরো শেখা ও আলোচনার দরকার। এগুলো নিয়ে আমাদের স্কুলের বাচ্চাদের আমরা এখনও শেখাতে পারিনি ঠিক মত। এ অবস্থায় যদি বাচ্চাদের জ্ঞান-বিজ্ঞানের আলোচনা ফেলে সেক্স নিয়ে আলোচনায় বসিয়ে দেই, তবে তার প্রভাব কতদূর যাবে ? আপনি শিখিয়ে দেবেন থিউরী, ওরা নেমে যাবে প্ল্যাকটিক্যালে, তারপর কি হবে তা নিজেই ভেবে দেখুন।

একটা কথা সব সময় মনে রাখবেন, পারিবারিক বাধন ও নৈতিকতার দিকে থেকে আমরা পশ্চিমাদের থেকে অনেক এগিয়ে আছি। আমাদের এই এগিয়ে থাকা তাদের জন্য হিংসের কারণ। পশ্চিমারা হচ্ছে লেজকাটা শেয়াল, তাদের না আছে পারিবারিক বাধন, না আছে নৈতিকতা। তারা নিজের লেজ কেটে ফেলেছে অনেক আগে এখন আমাদের লেজ কিভাবে কাটতে হবে, কাটলে কত উপকার হবে তার গুন বর্ণনা করছে। এবং কাটার জন্য প্রয়োজনীয় টাকা পয়সাও সরবরাহ করছে।  সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল নাহিদ কেন বিদেশীদের টাকা খেয়ে আমাদের আগামী প্রজন্মকে ধ্বংস করতে নেমেছে, সেজন্য তাকে বিচারের কাঠগড়ায় দাড় করানো উচিত।

ছবি: ব্রিটেনে স্কুলগুলোতে ৭+ বছরের বাচ্চাদের শিক্ষা দেয়া হচ্ছে `পৃথিবীতে তুমি কোথা থেকে আসলে’।

0 comments:

Post a Comment