Wednesday, January 30, 2019

আড়াই কোটি শিশুকে গণহারে ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানো কতটা যুক্তিসঙ্গত ?


আমি সম্ভবত ফেসবুকে একমাত্র ব্যক্তি যে শুরু থেকে ফ্রি ভিটামিন ও ফ্রি কৃমি নাশক ওষুধ ক্যাম্পেইনের বিরুদ্ধে বহু আগে থেকে বলে আসছি। হয়ত সেটা কেউ শুনতো, আবার কেউ না শুনতো। আপনারা ইতিমধ্যে জেনেছেন, নতুন বছরে ভিটামিন এ ক্যাপসুলের মান নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় তা বাতিল হয়েছে। তবে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে ওষুধগুলোকে খারাপ বলা হয়নি। বরং ফিল্ডে ওষুধ পৌছে যাওয়ার পর স্থানীয় কর্মীরা ওষুধগুলোকে বাহ্যিক খারাপ অবস্থায় দেখতে পেয়ে তা অনুপযুক্ত বলে ফেরত দেয়। এরপর সেটা কেন্দ্রে আসে এবং স্বাস্থ্যমন্ত্রী সে ওষুধ নেড়ে চেড়ে বলে, সেখানে ভারতীয় চক্রান্ত আছে।https://bit.ly/2U8SD9Y)

পাঠক! বিষয়টি খুব ‘হাইস্যকর’। এটা কেবল বাংলাদেশ বলেই সম্ভব হয়েছে। উচিত ছিলো স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হাত ঘুড়ে ওষুধ ফিল্ডে যাবে। কিন্তু সেটা ফিল্ড থেকে খারাপ বিবেচিত হয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর হাতে এসেছে। তারমানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও তার মন্ত্রনালয় সেটার মান নির্ণয় তো দূরের কথা, চোখ দিয়ে না দেখেই তা ফিল্ডে পৌছে দিয়েছেন, ফিল্ডের লোকজন (যারা ফার্মাসিস্ট বা ডাক্তার নন, সাধারণ কর্মী) সাধারণ চোখ দিয়ে তা খারাপ অবস্থায় দেখে ফেরত দিয়েছেন। তারমানে ফিল্ডের কর্মীরা যদি বিষয়টি না ধরতে পারতেন, তবে এসব মানহীন ওষুধ আমাদের আড়াই কোটি সন্তানের পেটে পৌছে যেতো। বিষয়টি কতটা গুরুতর বা উদ্বেগজনক, এটা যদি বাংলাদেশে না ঘটে অন্য কোন দেশে ঘটতো তবে নিশ্চিত সে দেশের প্রধানমন্ত্রীকে পদত্যাগ করতে হতো, স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদত্যাগ তো খুব সামান্য বিষয়। তাছাড়া বাহ্যিক মান যেখানে নির্ণয় করা হচ্ছে না, সেখানে ওষুধের ভেতরে লুকিয়ে বিষাক্ত কিছু দেয়া হয়েছে কি না, সেটার মান নির্ণয় করবে কে ?

তাছাড়া, ভিটামিন এ ক্যাপসুল সাধারণত খাওয়ানো হয় বয়স্ক মানুষ দিয়ে, তাই তারা বাহ্যিক পরিবর্তন ধরতে পেরেছে, কিন্তু ফ্রি কৃমিনাশক ওষুধ খাওয়ানো হয় ‘ক্ষুদে ডাক্তার’র নামক পদ্ধতিতে, যেখানে ছোট ছোট শিশুকে ডাক্তার বানিয়ে অন্য শিশুদেরকে ঔষধ খাওয়ানো হয়। এক্ষেত্রে যদি ওষুধ নষ্ট হয়, তখন কি ঐ ছোট শিশুগুলো কি তা ধরতে পারতো ?

আরেকটি কথা, এর আগেও এইসব ফ্রি ওষুধ খেয়ে অনেক বাচ্চা অসুস্থ হয়, অনেকে বাচ্চা মারা যায়। তখন সরকারের পক্ষ তা ‘গুজব’ বলে প্রতিবার দায় এড়ানো হয়। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, ওষুধের মান নিয়ে সরকার নিজেই সন্দিহান। কারণ সরকার নিজেই বলছে, ভারতীয় কোম্পানি মামলা করে নিজের অবস্থান ঠিক রেখেছে। তাহলে সন্দেহের বিষয়টি কেন সরকার জনগণের কাছে প্রকাশ করলো না ? কেন লুকিয়ে রাখলো ? এটা তো কয়েক বছর আগের কথা, এবার যদি ফিল্ড পর্যায়ের কর্মীরা বিষয়টি প্রকাশ না করতো, তবে এবারও তো ভারতীয় নিম্নমানের কোম্পানির ঔষধ খাওয়ানো হতো বাচ্চাদের।

একটি কথা অবশ্যই জানা দরকার। কেন বাচ্চাদের ফ্রি ঔষধ খাওয়ানো হচ্ছে ?
আমি জানি, অনেকেই বলবো, রাতকানা রোগ সারাতে।
এখানে কথার কিন্তু গ্যাপ আছে। আসলে রাতকানা রোগ সারাতে নয়, বরং সরকার বিভিন্ন সময় বিশ্বব্যাংক থেকে ঋণ নেয়, সেই ঋণ নেয়ার সময় বিশ্বব্যাংক কিছু শর্ত জুড়ে দেয়। এর মধ্যে একটি শর্ত হলো, দেশের সমস্ত বাচ্চাদের ভিটামিন এ খাওয়াতে হবে (https://bit.ly/2S2BCRk)। বিভিন্ন সময় খবরে আসে, সম্রাজ্যবাদীদের হাতিয়ার বিশ্বব্যাংকের সেই ভয়ঙ্কর শর্ত (!) পালন করতে গিয়ে বাংলাদেশের কৃষি সেক্টর বিপর্যস্ত হয়, পটশিল্প ধ্বংস হয়। তাহলে সেই বিশ্বব্যাংকের সেই শর্ত পালন কি আমাদের শিশুদের জন্য ভয়ঙ্কর হতে পারে না ? (বিদেশী সম্রাজ্যবাদীদের শর্তজুড়ে দেয়া বিভিন্ন ওষুধ ক্যাম্পেইনের পেছনে ষড়যন্ত্র থাকে, যা আমার এ লেখায় বিস্তারিত পাবেন: https://goo.gl/4SxqoR)

পাঠক, আপনি যদি সাধারণ কোন ব্যক্তি হোন, তবে ইংরেজীতে গুগল করুন, ভিটামিন এ ক্যাপসুলের সেফ ডোজ কত ?
উত্তর পাবেন, বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৪ হাজার আইইউ, আর বড় ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ২৫ হাজার আইইউ (https://bit.ly/2FIe52x)। এর বেশি নেওয়া শরীরের জন্য ক্ষতিকর। উল্লেখ্য অনেক ভিটামিন ওয়াটার সলিবল, যা অতিরিক্ত হলে প্রস্রাবের মাধ্যমে বের হয়ে যায়। কিন্তু ভিটামিন এ ফ্যাট সলিবল, যা শরীরের মধ্যে থেকে যায়, এবং অতিরিক্ত হলে সমস্যা তৈরী করে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে ভিটামিন এ ক্যাম্পেইনের নামে বাচ্চাদেরকে যে ভিটামিন এ ক্যাপসুলগুলো খাওয়ানো হচ্ছে সেগুলো দুই ধরনের।
- ৬-১১ মাস বয়সী শিশুর জন্য ১টি করে নীল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল যার পরিমাণ ১ লক্ষ আইইউ
- ১২-৫৯ মাস বয়সী শিশুর জন্য ১টি করে লাল রঙের ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল যার পরিমাণ ২ লক্ষ আইইউ, তা সহ্য মাত্রার থেকে অনেকগুন বেশি। (https://bit.ly/2FQoZ5n)

অতিরিক্ত ভিটামিন হওয়া শরীরের মধ্যে বিষক্রিয়া তৈরী করে যাকে বলে হাইপারভিটামিনোসিস। এই বিষক্রিয়ায় –
১। শিশুদের করোটির হাঁড় অস্বাভাবিক দুর্বল হয়ে যায় ।
২।দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে যায় ।
৩।হাঁড়ে ব্যাথা হয় ও ফুলে যায় ।
৪।সচেতনায় পরিবর্তন আসে ।
৫।ক্ষুধা কমে যায় ।
৬।মাথা ঝিমঝিম করে ।
৭।ঘুম ঘুম ভাব লেগেই থাকে ।
৮।মাথা ব্যাথা করে ।
৯। হৃদপিণ্ডের কপাটিকা শক্ত হয়ে যায় ।
১০।আক্রান্ত ব্যাক্তি দ্রুত রেগে যায় ।
১১। লিভার নষ্ট হয়ে যায় ।
১২।বমি বমি ভাব ও বমি হওয়া ।
১৩।দৈহিক ওজন কমে যায় ।
১৪।ত্বক ও চুলের রং পরিবর্তন হয়ে যায় এবং চুল পড়ে যায় ।
১৫।ত্বক ও চুল তেলতেলে হয়ে যায় এবং ত্বক হলদেটে বর্ণ ধারণ করে ।
১৬।স্বতঃস্ফুর্তভাবে হাঁড় চটে যায় ।
১৭।ঠোঁটের কোণে ফাঁটল বা চিড় ধরে ।
১৮। কোমা, মৃত্যু
(https://bit.ly/2R3QgDq)

পাঠক ! যে শিশুটির শরীরে ভিটামিন এ’র অভাব আছে, তাকে না হয় এক-দুই বার ওভার ডোজ দেয়া গেলো, কিন্তু যার শরীরে পর্যাপ্ত ভিটামিন এ আছে, তাকে ওভার ডোজ দিলো তো সমস্যা হবে। ভিটামিন এ ক্যাপসুল খাওয়ানোর ক্ষেত্রে সম্রাজ্যবাদীদের বেধে দেয়া শ্লোগান “বাদ যাবে না একটি শিশু” (https://bit.ly/2R6g9CB), পূরণ করতে আড়াই কোটি শিশুকে গণহারে ওভারডোজ দেয়া হচ্ছে, যা তার দেহে বিষক্রিয়া বা হাইপারভিটামিনোসিস তৈরী করতে পারে। আমরা বাচ্চাটিকে এতকষ্ট করে ওষুধ খাওয়াাচ্ছি সুস্থ সবল প্রজন্ম পাওয়ার জন্য, কিন্তু ৫ বছরে ১০ বার ওভার ডোজের ওষধ খাওয়ানোর ফলে যদি শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তার দায় নেবে কে?
কোরবানির ঈদের সময় আমরা দেখি সরকার গরুর মধ্যে অমুক-তমুক অসুখ আছে দাবি করে গরুকে পর্যন্ত টেস্ট করার দাবি তুলে। তাহলে শিশুর শরীরে আদৌ ভিটামিন এ’র চাহিদা আছে কি নাই, সেটা না মেপে শুধুমাত্র ‘থার্ড ওয়ার্ল্ড কান্ট্রি’ ট্যাগ লাগিয়ে গণহারে সকল শিশু পূষ্টিহীন বানিয়ে ভিটামিন এ এর ওভারডোজ খাওয়ানো কখণই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। তাদের যদি এতই ঔষধ খাওয়াতে ইচ্ছা করে তবে সেভ ডোজের ক্যাপসুল বানাক, এবং ১০টা ক্যাপসুলের ১ পাতা বাবা-মায়ের হাতে তুলে দিক, তারাই তাদের সন্তানদের মাসে মাসে ১টা করে খাওয়াবে। কিন্তু গণহারে সবাইকে ওভারডোজের ওষুধ খাওয়ানো মেনে নেয় যায় না। আমি যদি সন্দেহ করি, এই ওভারডোজ ঔষধ খাওয়ানোর মাধ্যমে তারা বাংলাদেশের ভবিষ্যত প্রজন্মকে আফ্রিকানদের মত লুলা-ল্যাংড়া প্রজন্ম হিসেবে গড়ে তুলবে, যেন তাদের সম্রাজ্যবাদ দীর্ঘস্থায়ী হয়, তবে সেটা খুব বেশি অমূলক হবে না।

পাঠক ! আপনারা নিশ্চয়ই আমার সাথে একমত হবেন, একজন বাবা-মা তাদের জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে তার সন্তানকে। সেই আদরের সন্তানের মুখে সরকারের পক্ষ থেকে দেয়া ঔষধকে বিশ্বাস করে তুলে দিচ্ছে, সরকারের উচিত সে বিশ্বাস রাখা। যে ঔষধটি তুলে দিচ্ছে, সেটা সম্পর্কে বাবা-মাকে সম্পূর্ণ অবহিত করা সরকারের দায়িত্বের মধ্যে পরে। এবং সে ক্ষেত্রে কোন গ্যাপ রাখা উচিত নয়। এবং সে ক্ষেত্রে যদি কোন দায়িত্বহীনতা ঘটে তবে অবশ্যই সেটার জন্য সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে সকলের সর্বোচ্চ শাস্তি পাওয়া উচিত।


===============================
আমার মূল পেইজ- Noyon chatterjee 5
(https://www.facebook.com/noyonchatterjee5)
পেইজ কোড- 249163178818686
------------------------------------------------------------------
আমার ব্যাকআপ পেইজ- Noyon Chatterjee 6
(https://www.facebook.com/Noyon-Chatterjee-6-202647270140320/)
------------------------------------------------------------------------------------------------

0 comments:

Post a Comment