Thursday, March 22, 2018

বাংলাদেশে কথিত উন্নয়ন কার স্বার্থে হয় ? জনগণের স্বার্থে ?


বাংলাদেশ সরকার যেসব উন্নয়ন করে কিংবা প্রকাশ্যে যেগুলোকে উন্নয়ন হিসেবে দাবী করে, সেগুলো আসলে কার স্বার্থে হয় ? এই প্রশ্নটা কিন্তু একটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। কারণ উন্নয়ন করতে গেলে কিছু জনগণকে অনেক কষ্ট পোহাতে হয়, জনগণের জমি এ্যাকোয়্যার করতে হয়, দেশের মানুষের উপর ঋণের বোঝা চাপে, দেশের পরিবেশ দূষিত হয়। কিন্তু তারপরও মানুষ খুশি থাকে, কারণ তারা ভাবে- “এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডগুলো নিশ্চয়ই আমাদের স্বার্থে করা হচ্ছে। উন্নয়নের সুফল আমরা ভোগ করবো।” তাই তারা মুখ বুঝে সব কষ্ট সহ্য করে। কিন্তু জনগণের স্বার্থে উন্নয়ন করা হচ্ছে কি না, এটা কি জনগণ যাচাই-বাছাই করতে পেরেছে ?
আমি আমার পাঠক শ্রেণীকে বলবো, কোন উন্নয়নের কথা শুনলেই লাফ দেবেন না, দয়া করে এ প্রশ্নের খুজবেন। যখন খুজতে যাবেন, তখন সব উন্নয়নের পেছনের খবরটা বেড়িয়ে আসবে। আমার এ লেখা উন্নয়নের পেছনের কারণ খোঁজার জন্য।

(১) চলতি ২০১৮ সালের জানুয়ারী মাসের খবর। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নদী ড্রেজিং প্রকল্প উদ্বোধন করলেন। নদী ড্রেজিয়ের মাধ্যমে নৌ রুটগুলো হবে। এতে সস্তায় নৌ চলাচল করা যাবে এবং কৃষি কাজের অনেক সুবিধা বর্ণনা করলেন প্রধানমন্ত্রী। (http://bit.ly/2GeB9pl)
সত্যিই আমিও নদী ড্রেজিংয়ের পক্ষে। কারণ নদী ড্রেজিং করলে সস্তায় নৌ-চলাচল বাড়ে, সড়ক পথে উচ্চমূল্যে যাতায়াত কমে। একই সাথে বন্যা কম হয় এবং কৃষকের সেচের সুবিধা হয়।
কিন্তু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যখন এত জনদরদী হয়ে নদী ড্রেজিয়ের ঘোষণা দিচ্ছেন, তখন আমার সন্দেহ হলো এবং পেছনের কারণ খুজঁতে উদ্দত হলাম এবং পেয়েও গেলাম ভিন্ন কিছু তথ্য।
‘দ্য ইকোনোমিক টাইমস’র একটি রিপোর্ট পেলাম । রিপোর্টটি ২০১৭ সালের ৭ই অক্টোবরের (তারিখ খেয়াল করুন) সেখানে একজন সাংবাদিক বলছে, ভারত সরকার বাংলাদেশের নদীগুলোকে ড্রেজিং করতে ইনভেস্ট করছে, কারণ ভারতের ইচ্ছা তারা কলকাতা পোর্ট থেকে বিভিন্ন পন্যদ্রব্য নদী পথে বাংলাদেশের ভেতরে প্রবেশ করাবে এবং চট্টগ্রাম পোর্টে যাবে, সেখানে থেকে সারা বিশ্বের বাণিজ্য করবে ভারত। (https://youtu.be/fvM6AGHQwLY)
সম্ভবত ভারত সরকার পক্ষ থেকে বাংলাদেশের নদী ড্রেজিয়ের জন্য ঋণ দেয়ার কথা ছিলো, কিন্তু জনগণের বিরোধীতার মুখে তারা টাকা দেয়নি, তাই বাংলাদেশের বাজেট থেকেই টাকা দিয়ে নদী ড্রেজিং করা হচ্ছে। তারমানে বাংলাদেশের নদী খননকার্যের বিরাট প্রকল্পের পেছনের কারণ জনগণের স্বার্থ নয়, বরং বাংলাদেশের নৌ-রুটকে বানিজ্যিক স্বার্থে ব্যবহার করবে ভারত, সেটাই।

(২) “ঢাকায় যানজট নিরসনে ফ্লাইওভার-এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে করা হচ্ছে”, “জনগণের সুবিধার জন্য পদ্মা সেতু করা হচ্ছে।” এগুলো আসলে ভুল কথা। জনগণের জন্য করা হচ্ছে ভেবে হয়ত জনগণ এগুলো বানানোর সময় অনেক কষ্ট সহ্য করছে, অথবা ঋণের বোঝা মাথায় নিচ্ছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ঢাকা শহরে যে ফ্লাইওভার বা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে মোটেও জনগণের স্বার্থে হচ্ছে না, বরং করা হচ্ছে আন্তর্জাতিক প্ল্যান তথা এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্কের অংশ হিসেবে (https://en.wikipedia.org/wiki/Asian_Highway_Network)। উল্লেখ্য এশিয়ান হাইওয়ে নেটওয়ার্ক জাতিসংঘের মাধ্যমে প্রস্তাবিত হয় ১৯৫৯ সালে। ১৯৫৯ সালে নিশ্চয়ই ঢাকা শহরে যানজট ছিলো না। তাহলে এখন কেন যানজটের অজুহাত দিয়ে ফ্লাইওভার-এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কথা বলা হচ্ছে?
একইভাবে জনগণের পদ্মা সেতু বলা হলেও আসলে পদ্মা সেতু হচ্ছে Trans-Asian Railway (১৯৫০ সালের প্রজেক্ট-https://en.wikipedia.org/wiki/Trans-Asian_Railway) এবং Asian Highway Network এর মধ্যে কানেকশন। (http://bit.ly/2G09e9p) সোজাভাষায় আন্তর্জাতিক প্রকল্পের বাস্তবায়ন হিসেবেই এসব সেতু-ফ্লাইওভার করা হচ্ছে, আন্তর্জাতিক লুটেরারা যেন সহজে সড়ক পথে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল বা উপকূলীয় এলাকার সম্পদ লুটার জন্য যেতে পারে, সেজন্য বানানো হচ্ছে এসব সেতু-ফ্লাইওভার। মাঝখান থেকে জনগণ যদি কিছু উপকার পায় তবে সেটা পূজি করে ভোট চাওয়া যাবে।

(৩) বাংলাদেশের জনগণকে বিদ্যুৎ সরবারাহ দেয়ার জন্য রামপালে ১৩৫০ মেগাওয়াটের বিদ্যুৎকেন্দ্র, পাবনার রূপপুরে ২৪০০ মেগাওয়াট পারমানবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং কক্সবাজারের মহেশখালীর মাতারবাড়িতে ১২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরী হচ্ছে, এগুলো আসলে ভুল কথা। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় যে ১০০টি অর্থনিতক জোন করা হচ্ছে তার বেশিরভাগ তুলে দেয়া হচ্ছে বিদেশীদের হাতে। বিদেশীদের সেই সব কলকারখানা চালানোর জন্য যে বিপুল বিদ্যুতের প্রয়োজন তার সেগুলো সামাল দিয়েই তৈরী হচ্ছে এসব বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র। জনগণকে বিদ্যুৎ সরবরাহের কথা বললে একই সাথে এতগুলো বড় বড় বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের কথা সরকার মোটেও চিন্তা করতো না। তাদের মূল উদ্দেশ্য বিদেশী লুটেরাদের সুবিধা, মোটেও দেশের জনগণ নয়।

এসব পলিসিগুলো বুঝতে আপনারা জন পার্কিন্সের লেখা ‘একজন অর্থনৈতিক ঘাতকের স্বীকারক্তি’ বইটি পড়ুন। সেখানে স্পষ্ট লেখা আছে এসব পলিসি। তারা এই পলিসির নাম দিয়েছে ‘কর্পোরেটোক্রেসি’। ‘কর্পোরেটোক্রেসি’পলিসি অনুসারে দুর্বল রাষ্ট্রটির মধ্যে এমন বিদ্যুৎকেন্দ্র, সেতু বা ড্যাম করা হবে, যার মাধ্যমে ঐ রাষ্ট্রটি পরিবেশগতভাবে খুব ক্ষতিগ্রস্ত হবে, জনগণ ঋণের বোঝায় ন্যুজ হবে। কিন্তু দিনশেষে ঐ স্থাপনা গুলোর সুফল ভোগ করবে বিদেশী লুটেরারা। বলাবাহুল্য সমাজ্যবাদীরা তাদের এই ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের জন্য বেছে নেয় দুর্নীতিবাজ শাসকশ্রেনীকে। যারা এসব প্রজেক্ট লুফে নেয় অর্থনৈতিকভাবে লুটপাটের জন্য। পাশাপাশি এগুলো দেখিয়েই তারা অবুঝ জনগণের কাছে ভোট প্রার্থনা করে। কিন্তু সব কিছুর পেছনে থাকে বিদেশী সম্রাজ্যবাদীদের উদ্দেশ্য, যা সাধারণ জনগণ কখন বুঝতে পারে না।


===============================
আমার মূল পেইজ- Noyon chatterjee 5
(https://www.facebook.com/noyonchatterjee5)
পেইজ কোড- 249163178818686
------------------------------------------------------------------
আমার ব্যাকআপ পেইজ- Noyon Chatterjee 6
(https://www.facebook.com/Noyon-Chatterjee-6-202647270140320/)
------------------------------------------------------------------------------------------------

0 comments:

Post a Comment