Friday, February 23, 2018

একুশের চেতনা : বাস্তবিক প্রয়োগ ও গ্রহণযোগ্যতা

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টি হয়েছিলো মুসলিম জাতীয়তাবাদের উপর ভিত্তি করে। সেখানে বলা ছিলো, মুসলমানরা এক সাথে থাকবে, মুসলমানদের জন্য তৈরী হবে পৃথক ভূমি। কিন্তু মাত্র ৫ বছরের মধ্যে ৫২’র সেই ভাষা আন্দোলন ছিলো সেই মুসলিম জাতীয়তাবাদের জন্য বিষফোড়া। এতদিন মুসলমান-মুসলমান এক হয়েছে, কিন্তু ৫২’র ভাষা আন্দোলনের মাধ্যম দিয়ে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ তৈরী করা হলো ভাষাকে কেন্দ্র করে।
যারা ভাষা আন্দোলনের তত্ত্ব তৈরী করেছিলো, তারা জানতো ধর্মভিত্তিক রাষ্ট্র পাকিস্তানের মানুষ দুই ভাষায় বিভক্ত- বাংলা ও উর্দু। সুতরাং ভাষা ভিত্তিক বিভেদ সৃষ্টির আলটিমেট ফলাফল দেশ ভাগ, যা ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে সম্পন্ন হয় (যদিও বুদ্ধিদাতাদের থেকে বেশি ক্রেডিট যাবে মাথামোটা রগচটা পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর কাছে) ।
ফিল্ডে থেকে যে লোকগুলো ভাষা আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিলো তারা কিন্তু কেউ সেক্যুলার ছিলো না, ছিলো পাক্কা মুসলমান। ২১শে ফেব্রুয়ারী আন্দোলনের দিন যে মাইকটা ব্যবহার করা হয়েছিলো সেটাও নাকি ছিলো মসজিদ থেকে নিয়ে আসা মাইক। তারপরও ভাষা আন্দোলনের ফলাফলটা ছিলো সেক্যুলার, অর্থাৎ ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদ, সেটা যে ধর্মেরই হোক।
ভাষা আন্দোলনের আজকে ৬৬ বছর হয়ে গেছে, এখনও সবাই ‘একুশের চেতনা’ ‘একুশের চেতনা’ করে। কিন্তু আপনি নিজেই একটু চিন্তা করে দেখুন, বর্তমান যুগে সেক্যুলার একুশের চেতনার গ্রহণযোগ্যতা কতটুকু ? আর সেটার বাস্তব প্রয়োগটাই কোথায় ?
৫২’র ভাষা আন্দোলনের মূল থিম যদি ধরি, “তুমি যে ধর্মেরই হও, বাংলাভাষী হিসেবে এক”।
কিন্তু এই সেক্যুলার তত্ত্ব তো সঠিক নয়।
উদারহণ- আপনি মায়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলমানদের দিতে তাকান। তাদের ভাষা বাংলা ভাষার সাথে মিলে যাওয়ায় ১০ লক্ষ রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। একই ভাষার হিন্দু রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়া হয়েছে, কিন্তু মুসলিম রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশী ট্যাগ দিয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়। তারমানে তাদের কাছে ধর্মটাই আগে, ভাষা নয়।
একই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গ আর আসামেও। সেখানেও শুধু বাংলাভাষী (অথবা অসমভাষী) শুধু মুসলমান হলেও তাদের বাংলাদেশী ট্যাগ দিয়ে বাংলাদেশে পাঠানোর ঘোষনা দেয়া হচ্ছে। এক্ষেত্রে তাদের ধর্মটাই মূল।
তারমানে আপনি ভাষার ভিত্তিকে মুসলিম-অমুসলিমকে এক করতে চাইলেও অমুসলিমরা সেটা চায় না, তাদের কাছে ধর্মীয় পরিচায়টাই মুল। সুতরাং আপনি মুসলমানের কাছে ভাষা ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের মূল্য থাকলেও অন্যদের কাছে তার মূল্য শূণ্য।
একটি বিষয় লক্ষ্য করবেন, যারা একুশের চেতনা, একুশের চেতনা করে মুখে ফেনা তুলছে, বাংলাদেশের তিন পার্বত্য জেলায় তাদের অবস্থান কি ? তিন পার্বত্য জেলায় তাদের একুশের চেতনা থাকে কোথায় ?
ঐ গোষ্ঠীটি কিন্তু ৩ পার্বত্য জেলায় একুশের চেতনা ভুলে যায় এবং বাঙালী জাতীয়তাবাদ দূর করে বার্মীজ জাতীয়তাবাদ চাপিয়ে দেয়। বঙ্গবন্ধু উপজাতিদের বলেছিলো- “তোমরা সবাই বাঙালী হয়ে যাও”, তারা বঙ্গবন্ধুর সেই আদর্শ অস্বীকার করে পাহাড়ে বার্মীজ জাতীয়তাবাদের পক্ষে রায় দেয়, এমনকি গত কয়েক বছর যাবত বাংলা ভাষা তুলে বার্মীজ ভাষায় পাঠ্যবই রচনা করা হচ্ছে। অর্থাৎ একুশের চেতনাধারীরা তিন পাবর্ত্য জেলায় একুশের চেতনার বিরুদ্ধে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
শুধু তা্ই নয়, বাংলাদেশের কোন ক্রিকেট প্লেয়ার উর্দুতে কথা বললে ‘একুশের চেতনা গেলো, একুশের চেতনা গেলো’, বলে যারা রব তুলে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যখন মোদিকে খুশি করতে হিন্দিতে কথা বলে অথবা বাংলাদেশের ঘরে ঘরে হিন্দি সিরিয়ালের দরুণ যখন ছেলে-মেয়েরা আত্মহত্যা করে , তখন ঐ একই গোষ্ঠী মুখে কুলুপ এটে বোবা হয়ে থাকে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে তারা নিজেরাই নিরপেক্ষতা হারায় এবং সাম্প্রদায়িক পক্ষ অবলম্বনকারী বলে প্রমাণিত হয়।
লেখার শেষে শুধু একটা কথা বলবো, ভাষা ভিত্তিক জাতীয়তাবাদের আসলে কোন গুরুত্ব নাই, এটা প্রমাণিত। অন্তত মুসলিম বাঙালী হয়ে আপনি সেটা মেনে নিলেও হিন্দু বাঙালী বা বৌদ্ধ বাঙালীরা সেটা মেনে নিবে না। তাদের কাছে ধর্মীয় পরিচয়টাই বড়। তাই, মুসলিম হলে আপনার মুসলমান পরিচয়টাই বড় করে দেখুন।

===============================
আমার মূল পেইজ- Noyon chatterjee 5
(https://www.facebook.com/noyonchatterjee5)
পেইজ কোড- 249163178818686

------------------------------------------------------------------
আমার ব্যাকআপ পেইজ- Noyon Chatterjee 6
(https://www.facebook.com/Noyon-Chatterjee-6-202647270140320/)
------------------------------------------------------------------------------------------------

0 comments:

Post a Comment